প্রকাশিত:রবিবার, ১৩ সেপ্টে ২০২০ ০৮:০৯
এভারেস্টজয়ী এডমন্ড হিলারির উক্তিটা পড়ি আগে। তিনি বলেছেন, আমরা পর্বত জয় করি না, জয় করি নিজেকে।
এই হিমালয় জয়ী হিলারি তো জগতে আইডল। এইজন্য ১৯৯৫ সালে হিলারি ক্লিনটন দাবী করেছিলেন, তার মা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতে প্রথম আহরোণকারী এডমন্ড হিলাররি নামে তার নাম রেখেছিলেন। এ জন্যই তার নামে ডাবল “খ” ব্যবহার করা হয়। কারণ এডমন্ড হিলারির নামেও ডাবল “খ” ছিল।
কিন্তু ক্লিনটনের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। আর এডমন্ড হিলারি মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছিলেন তারও ৫ বছর পরে। এ বিষয়টি ধরা পড়ার পর ২০০৬ সালে হিলারি নিশ্চিত করেন যে তার নাম এডমন্ড হিলারির নাম অনুসারে রাখা হয়নি। পরবর্তিতে হিলারি ক্লিনটনের মুখপাত্র এ কাহিনীর পেছনের ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি জানান, এটা একটা মিষ্টি পারিবারিক গল্প ছিল যা হিলারির মা হিলারি ক্লিনটনকে তার নামের বিষয়ে শুনিয়ে থাকত যাতে হিলারি আরো মহৎ হয়ে উঠতে পারে। সেই হিলারি একসময় ফার্স্টলেডি হন। এরপর তো প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে জয়টাও প্রায় কুড়িয়ে নিয়েছিলেন গতবার।
এই হিলারি ক্লিনটনের একটি জোকস আছে। একদিন নাকি স্বামী বিল ক্লিনটনের সাথে হিলারি তার শৈশবে বেড়ে ওঠা এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। যেখানে দেখা হয় হিলারির বাল্যবন্ধু জো-এর সাথে।
হিলারি তখন ক্লিনটনকে দেখিয়ে বলে, এই হলো আমার প্রিয় জো। আমার প্রথম প্রেম। আমার কৈশোরের ভালোবাসা’।
স্ত্রী হিলারির মুখে জো-এর এতো প্রশংসা শুনে কিছুটা বাঁকা হলেন বেচারা ক্লিনটন। বললেন, জো-এর সাথে তোমার বিয়ে হলে তুমি আর ফার্স্টলেডি হতে পারতে না, তোমার স্বামী হতো পেট্রোল পাম্প কর্মী”।
স্বামীর মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে এবার মোক্ষম জবাব দিলেন হিলারি, “না মিস্টার প্রেসিডেন্ট। আমার সাথে বিয়ে হলে জো আর পেট্রোল পাম্প কর্মী হয়ে পড়ে থাকতো না, একসময় হতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট’।
এই হলো আসলে আত্মবিশ্বাস। এভারেস্ট জয়ীর কথামতো নিজেকে জয় করা কিংবা হিলারি ক্লিনটনের মতো নিজের যোগ্যতাকে ভরসা করা বলতে যা বুঝায়-তাই আত্মবিশ্বাস।
এই আত্মবিশ্বাস জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি নিয়ামক। জীবন যখন নিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন সামনে চলে আসে, ঠিক তখনই শুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস না থাকলে জীবনে কোনো কিছুই সফলভাবে সম্ভব নয়।
সফল জীবন মানেই তো-‘আমি পারবো, আমাকে পারতেই হবে। আর এর মূলে এই আত্মবিশ্বাস। যার ফলেই এগিয়ে চলা।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন একটি টেকসই ও ভাল বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের জন্য বিভিন্ন উপাদান নিয়ে প্রায় ১০০০ রকম পরীক্ষা করেছিলেন।
কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছিল। তখন হতাশ হয়ে তাঁর সহকারী তাঁকে বললেন, “মি.এডিসন, আমরা হয়তো কোনভাবেই এটা তৈরি করতে সফল হতে পারব না, সব উপায়ই তো ব্যর্থ হল”।
টমাস আলভা এডিসন তখন বললেন, “কে বলেছে এগুলো ব্যর্থ! বরং এর মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে এই উপায়গুলোর মাধ্যমে এটি তৈরি করা সম্ভব হবে না”।
অবশেষে অনেক চেষ্টার পর তিনি কার্বন ফিলামেন্টের সাহায্যে একটি টেকসই ও উজ্জ্বল আলোর বৈদ্যুতিক বাতি তৈরি করতে সফল হয়েছিলেন।
এভাবেই আত্মবিশ্বাস শব্দের মানেটা হল নিজ আত্মার উপর বিশ্বাস। একসময় ঠিক সফলতার সঠিক পথটি পেয়ে যার, যার নাম আত্মবিশ্বাস!!
এই আত্মবিশ্বাস কাজে লাগাতে হলে ইচ্ছাশক্তিও প্রয়োজন হয়। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যালি ম্যাকগোনিগাল বলেন, ইচ্ছাশক্তির তিনটি ভিন্ন প্রায়োগিত দিক থেকে সফলতা বাগিয়ে আনা যায়।
এরমধ্যে রয়েছে, ‘আমি শক্তির প্রয়োগ ঘটাবো না’ এমন অবস্থানের মধ্যে দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখা যায়। ‘আমি শক্তির প্রয়োগ ঘটাবো’ অবস্থার মধ্যে মূল কাজের সাথে বিকল্প উপায় অবলম্বন করা হয়। আর ’আমি শক্তির প্রয়োগ ঘটাতে চাই’ এরমধ্যে গন্তব্য, লক্ষ্য ক্যারিয়ার ইত্যাদি এগিয়ে নেয়ার বিষয় বারবার মনে আসে।
আর এই তিন অবস্থানের প্রয়োগ কিংবা বাতিলের পেছনে ভূমিকা রাখে আত্মবিশ্বাস নামের মহাশক্তি। এই শক্তি আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। শুধু ধৈর্য আর শ্রমের মাধ্যমে জীবনে অভিষ্ট্য লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। আর তখনই প্রয়োজন হয় আত্মবিশ্বাসের।
কিন্তু আত্মবিশ্বাস তো আর আপনাতেই আসে না। আনতে হয়। বীজ বপনে জন্মানো লাগে। জানা লাগে। জিজ্ঞাসা লাগে। সূত্র, সংজ্ঞা মেনে নিজেকে গড়ার প্রয়োজন পড়ে।
বিভিন্ন গবেষণার দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষেরই আত্মবিশ্বাসের ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। এটি প্রতিদিন কমবেশি হয়ে থাকে। এমনকি কারো কারো ঘণ্টায় ঘণ্টায়ও বদলে যায় আত্মবিশ্বাসের মাত্রা। তাই আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কিছু সহজ উপায় আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। নিচে এগুলো তুলে ধরা হলোঃ-
১. ইতিবাচক শপথঃ মনের মাঝে বয়ে চলা সব নেতিবাচক চিন্তা দূর করে তার বদলে ইতিবাচক চিন্তা জাগিয়ে তুলুন। সর্বদা মনে রাখতে হবে, আপনি যা চিন্তা করছেন আপনি তাই। কিন্তু অনেকেই আবার বিষয়টিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন, যা মানুষকে আসলে করে দিতে পারে। এ কারণে মনের মাঝে সঠিকভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ’আমি সফল হব’ এমন চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। তার বদলে ‘আমি সাফল্য না পাওয়া পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব’ শপথই সবচেয়ে ভালো।
২. ভালো বিষয়গুলো জেনে রাখুনঃ আপনি হয়ত বিশ্বের সব বিষয় ভালোভাবে জানেন না। কিন্তু এমন কিছু বিষয় নিশ্চয়ই আছে, যা আপনার একেবারে নখদর্পণে। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য সে বিষয়গুলোতেই জোর দিন। নিজের ওই গুন কিভাবে আরও মানুষের মাঝে পৌঁছানো যায়, দায়িত্বশীল ও বড় ভূমিকার অবতীর্ণ হওয়া যায় সেজন্য চেষ্টা করুন।
৩. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুনঃ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমেই আপনার দিন শুরু করুন। খুব ছোটখাটো বিষয়েও আপনি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন (যেমন এটা হতে পারে ছোট কোনো উপহার, কিংবা কারো প্রশংসা)। আপনি যদি দিনের শুরুতেই এসব বিষয় আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রবেশ করাতে পারেন, তাহলে তা নিঃসন্দেহে আপনার সারা দিনের কার্যক্রমে ভালো প্রভাব ফেলবে। সেই সাথে আপনার মনে হবে, দিনটি আপনার ভালই যাবে। বাস্তবেও তাই ঘটে থাকে।
৪. উত্থান-পতনের জন্য প্রস্তত থাকুনঃ কাজে ব্যর্থতাই আমাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করার জন্য দায়ী। সেক্ষেত্রে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আবারও নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করুন। কারণ একটি কাজে যখন আমরা ব্যর্থ হই তখন একটু চিন্তা করলেই আমরা আমাদের ব্যর্থতার কারণগুলো খুব ভালভাবে ধরতে পারি। আর ব্যর্থতাগুলো থেকেই আমরা আমাদের জীবনকে ভালভাবে বুঝতে পারার শিক্ষা নিতে পারি। জীবনে যত বেশি উত্থান-পতন ঘটবে, মনে রাখবেন, আপনার লক্ষ্য ততই নিকটে। আর এতে করে আপনার আত্মবিশ্বাস আবারও নতুন করে গড়ে উঠবে।
৫. অন্যের সামনে নিজের সমালোচনা নয়ঃ নিজের দোষ অন্যের কাছে প্রকাশ করার কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এতে এক পর্যায়ে অন্যরা আপনার প্রতি বিশ্বাস হারাতে পারে। নিজের প্রতি হতাশায় অনেকেই আত্মবিশ্বাস নষ্ট করেন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, নিজের সমস্যা নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সেটি নিজেকে সংশোধনের জন্য। এটি যেন কোনোক্রমেই হতাশায় পর্যবসিত না হয়।
৬. সামান্য গরমিল থাকলেও এগিয়ে চলুনঃ কোনো কাজ করতে গেলে সব যোগ্যতাই যে আপনার মাঝে থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বরং নিজের দক্ষতা আর আত্মবিশ্বাসের জোরেই যে কোনো কাজে যোগ্যতা কম থাকলেও আত্মবিশ্বাসের জোরেই এগিয়ে যান। দেখবেন, সফলতা আপনার হাতে এসে ধরা দিবেই।
৭. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও অনুশীলন করুনঃ পর্যাপ্ত ঘুম, অনুলীলন ও পর্যাপ্ত পুষ্টিসম্পন্ন খাবার আপনার মন ভালো করবে। একসাথে আপনার কর্মক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসকেও বাড়িয়ে তুলবে। আবার প্রতি সপ্তাহে তিনবার মাত্র ২০ মিনিটের শারীরিক অনুশীলন আপনাকে শুধু বিষণœতা থেকেই মুক্তি দিবে না, বরং অ্যালঝেইমার্সের মতো রোগ থেকে দূরে রাখবে।
৮. নিজের মূল্য জানুনঃ আপনার নিজের যে গুণগুলো রয়েছে, সেগুলো ভুলে গেলে চলবে না। নিজেকে কোনোভাবেই মূল্যহীন মনে করবেন না। প্রয়োজনে আপনার নিজের মূল্য বিষয়ে একটি প্যারাগ্রাফ লিখুন এবং তা মাঝে মাঝে পড়–ন।
ফজলুর রহমান, কলামিস্ট, লেখক এবং সহকারী রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।
Head Office :
2152 – B, Westchester Ave,
Bronx, New York 10462
United States Of America.
Tel : 347 656 4623 (News), 718 823 7535 (Office), 929 261 8340 (CEO), 718 823 7538 (Fax).
Email :
report.banglanewsus@gmail.com (News),
riyahdahad@banglanewsus.com (Editorial)
info@banglanewsus.com (Advertisement)
ceo@banglanewsus.com (Event And Others).
First Fully Online Daily For The Worldwide
South Asian Community Jointly Published From
United States Of America, Great Britain
And Canada On Be-Half Of
POSITIVE INTERNATIONAL INC
@ 2014-2020
Developed BY : positiveitusa.com
Design and developed by positiveitusa.com