প্রকাশিত:সোমবার, ০২ নভে ২০২০ ০৭:১১
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে কোনো বড় উন্নয়ন প্রকল্পে সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেয়া সম্ভব নয়। যে কোনো প্রকল্পের উপকরণ আমদানির জন্য আগে ব্যাংকে এলসি খুলতে হবে। এলসি খোলার সময় বা এলসির দেনা শোধের সময় ব্যাংক প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেবে। ওই অর্থে ব্যাংক এলসির দেনা শোধ করবে। এই প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পের উপকরণ আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে সহায়তা করবে।
সরকারি খাতের উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থায়নের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারকে এমন ধারণাই দেয়া হয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতিতেই এসব প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে।
৬ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারি খাতের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ নেয়া যায় কি না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি এর প্রভাব ও সম্ভাবনার খুঁটিনাটি যাচাই-বাছাই করে দেখতে বলেন।
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, ‘আমরা বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নিই। আমাদের যেহেতু ডলার আছে, সেহেতু আমরা নিজেদের ডলার থেকে নিজেরাই ঋণ নিতে পারি। বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের পক্ষে এই রিজার্ভ সংরক্ষণ করে।’
ওইদিন বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘এটা প্রধানমন্ত্রীর কোনো অর্ডার নয়। তিনি একটা আইডিয়া তুলে ধরেছেন। এটি আলোচনা-পর্যালোচনা এবং বিচারবিশ্লেষণ শেষে সিদ্ধান্তে আসা যাবে।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পর এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত জানতে চায় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে একটি চিঠি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ নেয়ার খুঁটিনাটি বিষয় এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করে দেখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আলোচনা বা অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে কোনো সমীক্ষা করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়। ওই চিঠি পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘ সময় নিজেদের মধ্যে আলোচনা-পর্যালোচনা করেছে। একই সঙ্গে রিজার্ভ ব্যবহারের ধরন, বিভিন্ন দেশ কীভাবে ব্যবহার করে, রিজার্ভের বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করে। এর ভিত্তিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে রিজার্ভ ব্যবহারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত তুলে ধরা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে জোগান দেয়া হয়। বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার যৌক্তিক পর্যায়ে ধরে রাখতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় তারল্য বাড়ানো হচ্ছে। ফলে বিনিময় হার দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, সরকারি খাতের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরাসরি অর্থায়ন করতে পারে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রচলিত পদ্ধতিতে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দেয়া হচ্ছে। এর বাইরেও যদি বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে জোগান দিতে পারে। এক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা রিজার্ভের বিনিয়োগে নানামুখী ঝুঁকি রয়েছে। তা মোকাবেলা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুব সতর্ক।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরাসরি কোনো প্রকল্পে রিজার্ভ থেকে ঋণ দেয়ার সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বৈদেশিক মুদ্রা ধার দিয়ে, বিক্রি করে বা আমানত রেখে উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা করতে পারে। এক্ষেত্রে বেশ কিছু কঠিন শর্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও গ্রাহককে পালন করতে হবে। প্রকল্পটি সরকারি খাতের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হতে হবে, এর বিপরীতে সরকারের গ্যারান্টি থাকতে হবে। সরকারি খাতের প্রকল্প বা গ্যারান্টি না থাকলে অর্থায়ন পাবে না। প্রকল্পকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে হবে। তা না হলে অর্থায়ন পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে না। প্রকল্পের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ব্যাপারে ঝুঁকি বিশ্লেষণ করতে হবে। সম্ভাব্য কোনো বিপর্যয়ের কারণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাধাগ্রস্ত হবে কিনা তাও দেখতে হবে।
এসব ঝুঁকির বিবেচনায় উত্তীর্ণ হলে প্রকল্পে অর্থায়নকারী ব্যাংক দেখবে এর যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করতে কি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও কোন মাসে কি পরিমাণে প্রয়োজন হবে। ব্যাংক কতটুকু জোগান দিতে পারবে। এতে যে ঘাটতি থাকবে সে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আমানত হিসাবে দেয়া হবে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত হারে সুদ দিতে হবে। যেটি ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেটের (লন্ডনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ছয় মাস মেয়াদি যেসব ট্রেজারি বিল বেচাকেনা করে তার গড় সুদের হার বা লাইবর রেট) সঙ্গে ২ বা ৩ শতাংশ যোগ করে সুদের হার নির্ধারিত হবে। এতে সুদের হার গড়ে ৪ শতাংশের মধ্যে পড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত নেয়ার আগে ব্যাংক কিভাবে এটি পরিশোধ করবে এবং প্রকল্প থেকে কিভাবে বৈদেশিক মুদ্রা পাবে তার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ জমা দিতে হবে। কোনো কারণে প্রকল্পের বৈদেশিক আয়ের চেয়ে আমানত পরিশোধের কিস্তি বেশি হলে যে ঘাটতি তৈরি হবে তা অন্য কোনো খাত থেকে সমন্বয় করার সক্ষমতা ব্যাংকের আছে কিনা তাও যাচাই করা হবে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও আয়ের মধ্যকার কোনো ধরনের ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকলে অর্থায়ন করা হবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অর্থ জমা হওয়া ও এ থেকে অর্থ খরচ করার একটি পদ্ধতি রয়েছে। সে অনুযায়ী এখন যেমন অর্থ জমা হচ্ছে, তেমনি প্রয়োজন অনুযায়ী খরচও হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী যে রফতানি আয় ও রেমিটেন্স ব্যাংকগুলোতে আসছে, তা থেকে তারা আমদানি ব্যয় ও অন্যান্য বৈদেশিক ব্যয় মেটাচ্ছে। প্রতিটি ব্যাংকের একটি ওপেন পজিশন লিমিট (প্রতিদিন লেনদেনের পর বা অফিস খোলার সময় তার কাছে কি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রাখতে পারবে তার একটি সীমা) দেয়া আছে। সাধারণত ব্যাংকভেদে এ হার ৮ থেকে ১৫ শতাংশ। প্রতিদিনের লেনদেনের পর এর বেশি মুদ্রা থাকলে তা যে ব্যাংকে ওপেন পজিশন লিমিট কম আছে সে ব্যাংকে বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিক্রি করে দিতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিক্রি করলেই তা রিজার্ভে জমা হয়। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশি ঋণের বা অনুদানের অর্থ একই প্রক্রিয়ায় সরকারি হিসাব থেকে রিজার্ভে জমা হয়। এভাবে রিজার্ভ বাড়ে। আবার রফতানি আয় বা রেমিটেন্সের অর্থে আমদানি ব্যয় বা অন্যান্য দেনা শোধ করা সম্ভব না হলে তখন আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজার থেকে ব্যাংক ধার করার চেষ্টা করে। এতে সম্ভব না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ধার চায়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ধার দেয় বা টাকার বিনিময়ে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করে।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা জানান, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বিশেষ করে বেশি রিজার্ভ থাকলে টাকার মান স্থিতিশীল থাকে। মুদ্রার অবমূল্যায়নজনিত মূল্যস্ফীতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে। তারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়। বিদেশি ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে নিরাপদে রফতানি বাণিজ্য কার্যক্রম চালাতে ভরসা পায়। বিদেশ থেকে বাণিজ্যিক ঋণ পেতেও সুবিধা হয়।
Head Office :
2152 – B, Westchester Ave,
Bronx, New York 10462
United States Of America.
Tel : 347 656 4623 (News), 718 823 7535 (Office), 929 261 8340 (CEO), 718 823 7538 (Fax).
Email :
report.banglanewsus@gmail.com (News),
riyahdahad@banglanewsus.com (Editorial)
info@banglanewsus.com (Advertisement)
ceo@banglanewsus.com (Event And Others).
First Fully Online Daily For The Worldwide
South Asian Community Jointly Published From
United States Of America, Great Britain
And Canada On Be-Half Of
POSITIVE INTERNATIONAL INC
@ 2014-2020
Developed BY : positiveitusa.com
Design and developed by positiveitusa.com