আজ তুলে ধরার চেষ্টা করব শিক্ষায় কুদরতে খুদা কমিশনের রিপোর্ট প্রয়োগ করে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।আর সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় এক্সাম পুনরায় বহাল রেখে সে পথে খানিকটা অগ্রসর হওয়া বলে বলে মনে করি।
স্থিতিশীল ও অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি,পূর্ণকালীন উৎপাদনমূলক কর্মসংস্থান ও কাজের পরিবেশ টেকসই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য তার কাজে নিবিড় হয়ে গুণসম্মত শিক্ষাদান কি সম্ভব??? না আছে যোগ্যতাসম্পন্ন বেতন কাঠামো?? না আছে প্রয়োজন অনুযায়ী তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনের কাছে যেখানে কুদরতে ই কমিশনে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলা হয়েছে??আছে কি শিক্ষক হিসেবে সম্মান প্রাথমিক শিক্ষকদের?? আছে কি উন্নত বেতন কাঠামো যেন সে মোড়ালের ভূমিকা রাখতে পারে?? আছে কি গবেষণা করার সুযোগ যা কাজে লাগিয়ে এ শিক্ষাকে আরও উন্নত করা যায়??? আছে কি পদোন্নতির সুযোগ??? যা ছিল কেড়ে নেওয়া হয়েছে।বিভাগীয় এক্সাম সব বিভাগে আছে এখানে নেয় কেন???? আছে কি উচ্চতর গ্রেড??? কি আছে??? যা টেকসই উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা করবে??আর হাতে আছে দশ বছর।তবে কি টেকসই উন্নয়ন অর্জনে আমরা সমর্থ হব না?? তবে কি সেটা কাগজে কলমে??? বাস্তবত আমাদের শিক্ষায় আদৌ কি কোন পরিবর্তন আসবে??? তবে শিক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ মেধাবীরা কেন আসে না?? সুযোগ পেলে পেশা বদল করতে চায় কেন???কেন এ প্রাথমিক শিক্ষা খাতে সেরা ছাত্ররা আসে না?? থাকলেও এক বুক হতাশা নিয়ে থাকে?? কেন প্রাথমিক শিক্ষকের কাছে জ্ঞান অর্জন করে তাঁকে ব্যঙ্গ করতে ছাড়ে না এ সমাজ???? কেন প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি সমাজে অতি নগন্য চাকরি??? তবে এভাবে কি অন্য শিক্ষা সেক্টর থেকে এ প্রাথমিক শিক্ষাকে পিছিয়ে রেখে আদৌ টেকসই উন্নয়ন সম্ভব???কেন এত খরচ করে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না????তবে শিক্ষক এত অসন্তুষ্ট নিয়ে তাঁর ছাত্রের ভেতরের প্রতিভাকে বের করে নিয়ে আসতে পারবে???? প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে পারবে??ছাত্রের মাঝে আদর্শের বীজ বপন করতে পারবে?? যে ছাত্র শিক্ষা গ্রহণ শেষে সমাজের প্রতিষ্ঠিত পদে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক বলে গালি দেয়।!!! আসলে পারবে তো????? নাকি পেশাদাবিত্বের কথা বলবেন?? হয়তো পালন করবে।তবে সেখানে কি হাহাকার কাজ করে না?? সে হাহাকারে আজ চারপাশ বিষাদ হয়ে যাচ্ছে!!
আমরা ক্লাস করাতে চায় মনোযোগ দিয়ে ভালবাসা দিয়ে।তবে নিবিড় ভালবাসার জন্য দরকার কাজ করার পরিবেশ,অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আর সম্মান।
এ ব্যর্থতা সবার।তাই এ সেক্টরকে সমৃদ্ধ করে একে সম্মানজনক পেশায় পরিণত করে এ প্রাথমিক শিক্ষকতা পেশাকে স্বতন্ত্ররূপ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।যারয় যোগ্যতা নিয়ে এসেছে তাদের বিভাগীয় এক্সামের মাধ্যমে পদোন্নতির সুযোগ করে দিলে লাখ লাখ শিক্ষক থেকে কিছু যোগ্য কর্মকর্তা পাব যারা তাদের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা দিয়ে এ সেক্টরকে সামনে নিতে পারে।সাথে শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা করা।সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার যাতে স্থানীয় প্রভাবের বাধার সম্মুখীন না হন।আশা করি কুদরতেই খুদা শিক্ষা কমিশনের বাস্তবায়ন করে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ করবে বাংলাদেশ।
শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ এডুকেশন এসেছে ল্যাটিন শব্দ এডুকেয়ার বা এডুকাতুম থেকে।যার অর্থ বের করে আনা অর্থাৎ ভিতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা এবং বিকশিত করা।সূত্রঃউইকিপিডিয়া
শিক্ষা দানের মহান ব্রত যার কাজ তাকেই শিক্ষক বলে।প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা দানের কাজে নিয়োজিত তাদের শিক্ষক বলা হয়।শিক্ষকদের জাতি গঠনের কারিগর বলা হয়।তবে আমাদের দেশে শিক্ষক নামে আদৌ কোন পদ সৃষ্টি হয় নি।নিয়োগ করা হয় সহকারী শিক্ষক হিসেবে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবসরও নেন সহকারী শিক্ষক পদে।শিক্ষক ভাল আদর্শ ছাত্রের মাঝে বিতরণ করে মানবতাবোধ জাগ্রত করে যোগ্য নাগরিক রূপে গড়ে তোলে।তাহলে এমন মাপের শিক্ষক নিয়োগ,যোগ্যতা,তাঁর সম্মান,বেতন সব ক্ষেত্রে অতুলনীয় এক অবস্থান দাঁড় করানো সময়ের দাবি।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ড. কুদরত ই খুদার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭৪ সালে কুদরত ই শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট পেশ করে।এ রিপোর্টের ভিত্তির উপর সমসাময়িক বাস্তবতা ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে সব শিক্ষা কমিশনের নতুন রিপোর্টে। সর্বশেষ কবির চোধুরীর নেতৃত্বে ২০০৯ সালের রিপোর্ট যা বর্তমানে কার্যকর রয়েছে।
কুদরতে খুদা কমিশনে ১ম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা হবে,শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার হবে।শিক্ষকদের মর্যাদা,বেতন স্কেল,পদোন্নতি এবং চাকরির ব্যবস্থা এমনভাবে নির্ধারণ করা,যাতে করে সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।শিক্ষার প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করা।বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থাকবে না।স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যাবে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দাপ্তরিক কাজের জন্য রাজধানী ঢাকা আসার প্রয়োজন হবে না।
স্থায়ী কমিশন গঠন করে গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষা খাতের সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং সমাধানের উপায় বের করার জন্য শিক্ষা কমিশন গঠনের সুপারিশ করে কুদরতে কমিশন।আদৌ শিক্ষা ক্ষেত্রে এ কমিশনের বাস্তব রূপের দেখা মিলে না।
টেকসই উন্নয়ন বলতে ঐ ধরনের কর্মকান্ডকে বোঝায় যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ও নিশ্চিত হয় আবার প্রকৃতি এবং আমাদের ইকোসিস্টেমেও কোন কাজে প্রভাব না পড়ে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মেয়াদ ২০১৬-
২০৩০।এতে মোট ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে যার চার নম্বর লক্ষ্যমাত্রা মানসম্মত শিক্ষা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং সবার জন্য আজীবন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি।
ততাই প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভাগীয় এক্সাম ৪৫ বছর বয়স শিথিলযোগ্য করে বিভাগীয় প্রার্থীতার সুযোগ বহাল রাখা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে খানিকটা সহযোগীতা করতে পারবে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত ও প্রাথমিক শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় ও যুগপোযোগী পেশাতে পরিণত করে শিক্ষা পেশার মধ্য সমন্বয় সাধন এখন সময়ের দাবি।