প্রকাশিত:রবিবার, ২৪ মে ২০২০ ০৬:০৫
মাসুম খলিলীঃ করোনাভাইরাসের সর্বাত্মক সংক্রমণ ও মৃত্যুর প্রভাব বিশ্ব রাজনীতি অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থার সর্বত্র দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। তবে এর প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ আগে থেকে গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত ছিল। রাজনৈতিক অস্থির অবস্থা ছিল আরো কয়েকটি দেশে। আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কৌশলগত প্রতিযোগিতা এই অস্থিরতাকে বিশেষভাবে বাড়িয়ে তুলছিল। এর মধ্যে করোনার কারণে তেলের চাহিদা ও মূল্যের নজিরবিহীন অবনমন ঘটে। আর এটি যুদ্ধের অর্থ জোগাতে সঙ্কটে ফেলে সৌদি আরব ইরানের মতো প্রভাব বিস্তারকামী দেশগুলোকে। আর সে সাথে রাষ্ট্রের রাজস্ব আয় হ্রাসে কৃচ্ছ্রতা নীতির সামাজিক প্রভাব করোনার মৃত্যু ঝুঁকির পাশাপাশি নতুন এক অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করে। এর মধ্যে অন্তরালে চলছে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন রূপ দেয়ার খেলা। এর প্রভাব অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের পরিবর্তনের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে সিরিয়া লিবিয়া ইয়েমেন এমনকি সৌদি আরবেও। এর প্রভাব পড়তে পারে ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতেও।
আঞ্চলিক বিন্যাসের গোপন আয়োজন!
মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তন ঘটানোর গোপন আয়োজন নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অতি সম্প্রতি নতুন নতুন তথ্য ও বিশ্লেষণ আসছে। এর কিছু দৃশ্যপটের অন্তরালে ঘটছে, আর কিছু বিভিন্ন দেশের রণক্ষেত্রগুলোতে দৃশ্যমান হচ্ছে। এ ধরনের একটি তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য ও বিশ্লেষণ নিয়ে এসেছেন তুর্কি কলামিস্ট নেদারেট এরসানেল।
তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব থেকে তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং রণতরী প্রত্যাহার করতে চলেছে; ইরানের সাথে বন্দিবিনিময় হচ্ছে; সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত ও কাতার ইরানের সাথে স্বচ্ছ সম্পর্ক নির্মাণ করতে চাইছে; নতুন সরকারের জন্য ইরাক-বাগদাদ প্রশাসন নিয়ে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে; আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত অনুসারে ইরাকে ইরানের বিদ্যুৎ বিক্রয় চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে; সিরিয়ায় বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে নতুন ও তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হতে চলেছে; ভেতরের খবর অনুসারে, বাশার আসাদ রাশিয়ার গুডবুকে আর নেই; জেমস জেফরি রাশিয়ার সাথে এটি নিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন; তার আগে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, যারা ২০১১-এর পরে সিরিয়ায় এসেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরানÑ তাদের সিরিয়া থেকে বেরিয়ে আসা উচিত; ইসরাইলের ঘোষণাপত্রে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এত দিন অবধি ইরানকে সিরিয়ায় আসা থেকে বিরত করার চেষ্টা করছিল ইসরাইল, এখন তারা সিরিয়া থেকে ইরানকে বের করে দেয়ার জন্য লড়াই করছে; অন্য দিকে ফ্রান্স ও আমেরিকা উভয়কেই এক দল করতে এবং একটি আন্তর্জাতিক সংলাপ গঠনের লক্ষ্যে উত্তর সিরিয়ার কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে), পিপলস প্রটেকশন ইউনিট (ওয়াইপিজি) এবং সিরিয়ান কুর্দিশ জাতীয় কাউন্সিলকে একত্র করা হচ্ছে।’
নেদারেট এরসানেলের উল্লিখিত তথ্য বা গুজব যেটি বলি না কেন মধ্যপ্রাচ্যের নতুন কোনো পরিবর্তনের যে আয়োজন চলছে তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। যুক্তরাষ্ট্রে যখন করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের গলদঘর্ম অবস্থা, করোনার কারণে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে, তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও ইসরাইল সফর করেছেন। এটি এমন এক সময় ঘটেছে যখন পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের সাথে ইসরাইলের তীব্র উত্তেজনা চলছে। লিবিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আমিরাত, সৌদি আরব, মিসর, ফ্রান্স ও গ্রিস একযোগে তুরস্কের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছে। সঙ্গতকারণেই সময়টা যেমন তাৎপর্যপূর্ণ তেমনিভাবে সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়ার জন্য এসব বিষয় মাঠ পরিস্থিতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলার মতো।
এরসানেলের বক্তব্যটিকে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের নতুন অবয়ব দানের একটি অংশ বিবেচনা করা যেতে পারে। একই সাথে এর মধ্যে লিবিয়া এবং তার পর মিসর, মাল্টা, ইতালি ও তিউনিসিয়াসহ ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকা নিয়ে নতুন এক মূল্যায়নের বিষয়ও রয়েছে। এখন পর্যন্ত এটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে, এ অঞ্চলের ঘটনাগুলো কি প্রাকৃতিক কোনো ফলাফল, নাকি রাজনৈতিক ও মহামারী সঙ্কট খেলোয়াড়দের নতুন স্থানে ঠেলে দিয়েছে। তবে এখানে তুরস্ক-ইসরাইল সম্পর্কের প্রত্যাশাও যুক্ত হতে পারে। প্রশ্ন হলো, এই যুগপৎ ঘটনাধারার মধ্যে কী ধরনের আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে? এসব ক্ষেত্রে তুরস্কের ভূমিকাই বা কী?
লিবিয়া সম্পর্কিত তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রকের সর্বশেষ বক্তব্য হলো তুরস্কের স্বার্থকে লক্ষ্য করে আক্রমণ খলিফা হাফতারকে বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে। এর মাধ্যমে তাকে সমর্থনকারী বাহিনীর কাছেও একটি বার্তা দেয়া হয়েছে আর হাফতারকে চূড়ান্তভাবে সতর্কও করা হয়েছে।
এখন এটাও ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে যে, সিরিয়া ও লিবিয়ার ঘটনার মধ্যে একধরনের আন্তঃসংযোগ রয়েছে। এর সমাধান এবং উভয় সঙ্কট নিয়ে আলোচনার টেবিলে কার বক্তব্য থাকবে তা ক্ষমতার মহাখেলার একটি অংশ; দুই দেশই তুরস্কের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অঞ্চল এবং কূটনীতির টেবিলে তার শক্তি সংরক্ষণ চূড়ান্ত অবস্থার দিকে। তবে সিরিয়া ও লিবিয়ার ইস্যুটি ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের সাথেও সম্পর্কিত। মানচিত্রটি একই রিংয়ের মধ্যে প্রসারিত হয় এবং এ বিষয় নিয়ে অসম্পৃক্ত থাকতে চাইলেও এটি সামনে হাজির হবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা বিষয়ক বিশেষ দূত মিখাইল বোগদানভ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মার্কাস এদারার সিরিয়া ও লিবিয়ার বিষয়ে এক টেলিফোন কথোপকথন করেছেন। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার সর্বশেষ রাজনৈতিক অগ্রগতি এবং লিবিয়া ও সিরিয়া সঙ্কট ছাড়াও তারা ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নিয়েও আলোচনা করেছেন। দ্বি-রাষ্ট্রীয় নীতির ভিত্তিতে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে আলোচনার সুবিধার্থে রাশিয়া ও ইইউ এবং মধ্যপ্রাচ্যের চতুষ্পদীয় প্রচেষ্টা সমন্বয়ের জন্য তারা গুরুত্ব দিয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ান বার্তা সংস্থা তাস।
বড় ছবিটির দিকে তাকালে বোঝা যায় যে, সিরিয়ায় ইরানকে প্রতিষ্ঠিত করে ইরাকে তার ভূমিকা কমানোর একটি কৌশল নিয়ে সম্ভবত কাজ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের দ্বন্দ্ব হ্রাস করে ইরাকে যৌথ বন্দোবস্তের একটি প্রস্তুতি চলছে বলে মনে হয়। এটি কিভাবে কাজ করবে, মাঠের জটিলতাগুলো এর জন্য কাজ করার সুযোগ দেবে কি না সেটি আলাদা বিষয়।
সার্বিকভাবে সিরিয়া ও ইরাক যুদ্ধে এক ধরনের স্থবিরতা রয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিটগুলোতে ইরান-প্ররোচিত হামলায় এ স্থবিরতার বিষয়টি বোঝা যায়। পেন্টাগন ও ইরাকি সরকার জুনে বাগদাদে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি নিয়ে এক বৈঠক করতে যাচ্ছে। এতে এটি মনে হয় যে, আমেরিকা আসলেই ইরাক ছাড়ছে না। এটি তার জন্য প্রকৃতির বিরুদ্ধ একটি বিষয় হবে। ইসরাইলও এর সাথে নানাভাবে যুক্ত হয়ে পড়ছে।
এটা স্পষ্ট যে, নতুন যে ঘটনাপ্রবাহের কথা বলা হচ্ছে তাতে তুরস্কের দক্ষিণ সীমান্তে তিনটি দেশের জন্য নির্দিষ্ট ফলাফল সৃষ্টি হবে। এর সবই তুরস্কের জন্য উদ্বেগের এবং এতে তুর্কি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে।
তুরস্ক, রাশিয়া, ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে কোনো জোট হিসেবে নয়, তবে সিদ্ধান্ত প্রণেতা হিসেবে রয়েছে এবং সময়ে সময়ে তারা অংশীদারিত্বের জন্য বসে এবং কখনো কখনো পরস্পরের বিরোধী শক্তি হিসেবে মুখোমুখি হয়। তবে এ ক্ষেত্রে মূল প্রত্যাশিত ঘটনাটি হলো মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। কেবল এ নির্বাচনের পরে জোট এবং নীতিগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
ক্রেমলিনের কাছে একটু ইরান মানেই একটু ইসরাইল। এর অর্থ বিরোধমূূলক অঞ্চলগুলোতে সঙ্কটের বিবর্ণতা। এর অর্থ সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়ায় পাস। এখন একটি নতুন চাকা ঘুরছে কৌশলগত দিক থেকে আর জোটের অংশীদারিত্বে তুরস্ক হলো প্রাকৃতিক অভিনেতা। সাধারণ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন তালিকায় এর পরে রয়েছে। এটি সত্যি একটি কঠিন বিষয়। আঙ্কারা এখানে একটি পছন্দ করতে চলেছে! তবে অন্য সবার চেয়ে বিস্ময়কর পছন্দ। প্রশ্ন সামনে এসেছে, এভাবেই কি ‘মধ্যপ্রাচ্যের গোপন ভাণ্ডার’ প্রকাশিত হতে চলেছে! তবে অস্বাভাবিক অবস্থা হতে পারে ট্রাম্পের পরাজয়। সেক্ষেত্রে বিশ্ব নীতিপ্রণেতাদের একসাথে বসে সব কিছু আবার ঠিক করতে হবে।
সিরিয়া : আসাদবিহীন নতুন ব্যবস্থার ভাবনা
সিরিয়ায় একটি পরিবর্তন সম্ভাবনার ইঙ্গিত লেখার শুরুতেই রয়েছে। এক দশক ধরে অব্যাহত গৃহযুদ্ধে একধরনের মৃতপুরীর রূপ নিয়েছে দেশটি। দেশটির একেকটি অঞ্চলে একেক শক্তির প্রভাব বিস্তৃত ছিল। আইএস একসময় দেশটির বড় একটি অঞ্চলে কর্তৃত্ব বিস্তার করে। সেই কর্তৃত্বের অবসানে বাশার আসাদ সরকারের প্রভাবই বেশি বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে মধ্যপন্থী ইসলামিস্টদের প্রভাব রুশ সমর্থনপুষ্ট সিরিয়ান অভিযানের পর বেশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছিল। সিরিয়ার অভ্যন্তরে শরণার্থীদের জন্য নিরাপত্তা জোন করার উদ্যোগ এবং সর্বশেষ ইদলিবে তুর্কি সেনাদের ওপর বাশার সরকারের হামলায় ৩৪ সেনা নিহত হওয়ার পাল্টা অভিযানে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ব্যাপক সামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আর এর মধ্য দিয়ে সিরীয় পরিস্থিতিতে একধরনের ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস এবং করোনা সংক্রমণের ফলে বাশার সরকারের দুই প্রধান সমর্থক রাশিয়া ও ইরান বেশ চাপের মধ্যে পড়ে যায়। এর ফলে দীর্ঘ দিন ধরে সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে অচলায়তন জিইয়ে রাখা তারা লাভজনক কোনো দৃশ্যপট বলে মনে করছে না। সামরিক শক্তির জোরে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করার যে ভাবনা বাশার আসাদ এত দিন করে আসছিলেন, তুরস্কের সামরিকভাবে সম্পৃক্ত হওয়া এবং পাল্টা আঘাত হানার ফলে সেটি বাস্তবসম্মত মনে করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে রাশিয়া ইরান-তুরস্কের মধ্যে যে আস্তানা উদ্যোগ, সেটি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠছে।
আর সিরিয়ার রাজনৈতিক সমাধান মানে হলো এমন একটি ব্যবস্থা সৃষ্টি করা যার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি একটি সমাধানের প্রক্রিয়া বের করা যাবে। বাশার আসাদ যে নোসাইরি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেন তাদের সমর্থন দেশটিতে সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ, কিন্তু তারাই প্রভাবশালী এলিট। বিপুল সংখ্যাগুরু সুন্নি জনগোষ্ঠী বাশার আসাদ ও তার রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে না। ফলে নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সমাধানের কোনো ফর্মুলা রাশিয়া বা ইরান কেউই মানবে না। এ অবস্থায় এমন একটি অন্তর্বর্তীকালীন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বের করতে হবে যেটিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গ্রহণ করবে এবং শরণার্থী হওয়া সিরিয়ানরা আবার যার যার মাতৃভূমিতে ফিরে আসতে পারবে।
তুরস্ক বরাবরই মনে করে আসছিল এ ধরনের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা বাশার আসাদকে মূল কেন্দ্রে রেখে সফল হবে না। নতুন পরিস্থিতিতে রাশিয়াও সম্ভবত উপলব্ধি করছে যে বাশার আসাদকে শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখতে হবে। তবে ক্ষমতার কাঠামোতে এখনকার রুলিং এলিটদের রেখেই এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়ার কথাই রাশিয়া ভেবে থাকতে পারে।
সিরিয়ায় রাশিয়ার স্বার্থ এবং ইরানের স্বার্থ বেশ খানিকটা ভিন্ন মাত্রার। ইরানের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো একদিকে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন এবং অন্য দিকে ইয়েমেন হয়ে তার প্রভাব ইসরাইল ও সৌদি আরব পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। এ কারণে সিরিয়ার জন্য ইরান তার সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়েছে। নিজের মিলিশিয়া ছাড়াও ছায়া শক্তি হিজবুল্লাহকে সর্বোচ্চপর্যায়ে কাজে লাগিয়েছে। একসময় বাশার আসাদের সামরিক শক্তি বলে পুরো সিরিয়ার ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ফর্মুলায় তেহরানের সমর্থন ছিল। এখন তেহরানও মনে করছে পূর্ণ সামরিক জয় সিরিয়ায় সম্ভব নয়। দেশটির বিপুল জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী হিসেবে দেশের বাইরে রেখে সিরিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী স্থিতি আনা যাবে না। এ জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধানের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে সার্বিকভাবে।
রাশিয়া সিরিয়ায় তার সামরিক ঘাঁটি অক্ষুণœ রাখা এবং এ অঞ্চলে তার প্রভাব বজায় রাখার জন্য একধরনের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। এ ক্ষেত্রে বাশার আসাদ ক্ষমতায় না থাকলেও সেটি নিশ্চিত করা সম্ভব। ইরানের বিষয়টিকে সেভাবে ভাবা কঠিন। এ কারণে আস্তানা শান্তি প্রক্রিয়ার ব্যাপার অগ্রসর হতে তেহরান এক পা আগায় তো দু’পা পেছায়।
অন্য দিকে তুরস্কের জন্য সিরিয়ার ইস্যুটি সরাসরি সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার সাথে যুক্ত। তুরস্কের পাশে কুর্দিদের একটি স্বাধীন বা আধাস্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে সেটি তুরস্কের কুর্দিদের বিচ্ছিন্নতাবাদী চলমান আন্দোলনকে চাঙ্গা করবে। আর তুরস্কের প্রায় ৪০ লাখের মতো সিরীয় শরণার্থী রয়েছে যাদের স্থায়ীভাবে সেখানে রাখা সম্ভব নয়। এক দিকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে, অন্য দিকে সিরিয়ানরা নিজ দেশে ফিরতে না পারলে সেটি সেখানকার জনসংখ্যার বিন্যাস পাল্টে দেবে। এ কারণে তুরস্ক শান্তি প্রক্রিয়ার সাফল্যের ব্যাপারে অনেক বেশি সক্রিয়। সার্বিক বিবেচনায় রাশিয়ার পাশাপাশি তেহরানের নীতি প্রণেতাদের মধ্যেও বাশার আসাদ ছাড়া বিকল্প রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিষয়টি যে মাত্রাতেই হোক না কেন বিবেচিত হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আস্তানা শান্তিপ্রক্রিয়া বাস্তব রূপ নিলে সিরিয়ায় শান্তি ফিরে আসার একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। এতে প্রাথমিকভাবে সিরিয়ার অখণ্ডতা থাকবে এবং সিরীয় নাগরিক যারা দেশের বাইরে বা ভেতরে উদ্বাস্তুর জীবন কাটাচ্ছে তারা তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে আসতে পারবে।
বাশার আসাদের ভবিষ্যৎ মূলত একটি প্রক্রিয়া, যা মূলত ইদলিবের ওপর নির্ভর করে। আঙ্কারার দৃষ্টিভঙ্গি এখানে বিশ্বশক্তিগুলোর আলোচনার মুখ্য বিষয়। তুরস্কের এমন একটা ভূমিকা মস্কোও একসময় প্রত্যাশা করেনি। আজ যদি আসাদের প্রস্থান নিয়ে আলোচনা করা হয়, তবে সেখানে সম্ভাব্য তুর্কি পদক্ষেপ এবং তার স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের রাজ অভিষেক না বিদায়
সৌদি আরবের বহুল আলোচিত ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের রাজ অভিষেক আসন্ন বলে অনেকে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন। বিশেষত তার ৮৪ বছর বয়সী পিতা বাদশাহ সালমানের স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়লে তার জীবিত অবস্থাতেই বিন সালমান বাদশাহ হতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং রাষ্ট্রের সর্বশেষ অর্থনৈতিক অবস্থা ও আঞ্চলিক রাজনীতির হিসাব নিকাশ অনেক কিছুই পাল্টে দিচ্ছে।
করোনার কারণে একের পর এক খারাপ খবরের মধ্যে সর্বশেষ সংবাদটি হলো: সৌদিদের ওপর কর বাড়ছে এবং সরকারি কর্মচারীদের যে আবাসন ভাতা দেয়া হতো, তা কেটে নেয়া হবে। এক বছর আগের চেয়ে তেলের দাম অর্ধেকের নিচে নেমে যাওয়া আর করোনাভাইরাসের কারণে সব কিছু অচল হয়ে পড়ায় অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়েছে।
ডি ফ্যাক্টো সৌদি শাসক, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্যও এটি খারাপ সংবাদ। তার বাবা, ৮৪ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান সিংহাসনে থাকলেও ক্রাউন প্রিন্সই রাজ্যের বিদেশ ও অভ্যন্তরীণ নীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ৩৪ বছর বয়সী এই ক্রাউনপ্রিন্স নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত। এর মধ্যে রয়েছে ব্যয়বহুল বৈদেশিক নীতির ব্যর্থতা, দুঃসাহসী সামাজিক সংস্কার এবং রাজপরিবারের প্রভাবশালী বিরুদ্ধবাদীদের ওপর অভিযান।
তার বিদেশ নীতির সমালোচনার মধ্যে রয়েছে, ইতিবাচক ফল ছাড়াই ইয়েমেনের ব্যয়বহুল যুদ্ধ চালিয়ে রাখা, ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়া, সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড এবং রাশিয়ার সাথে তেলের দাম নিয়ে সৃষ্ট যুদ্ধে পিছু হটা আর ওপেকে একাধিপত্য হারানো। তার ঘরোয়া নীতির ক্ষেত্রে সৌদি রক্ষণশীল সমাজকে তিনি উদার করতে চাইছেন। শিক্ষাব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, সামাজিক কাঠামোর মধ্যে তিনি পরিবর্তন আনছেন।
রাজপরিবারের তরুণদের নিয়ে তিনি সৌদি প্রশাসন ও বিকল্প ক্ষমতার ভরকেন্দ্র তৈরি করেছেন। এ জন্য রক্ষণশীল ইসলামী ভাবধারার লোকজনকে বিদায় করে সেকুলার ঘরানার কর্মকর্তাদের প্রশাসনে বসানোর কাজ করছেন। ২০১৭ সালে তার বাবা তাকে ক্রাউন প্রিন্স করেন। এরপর তিনি রাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী এবং শক্তিশালী ব্যক্তিদের আটক করেন। গত মার্চে তিনি চাচাতো ভাই এবং সাবেক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ এবং বাদশাহর ভাই প্রিন্স আহমদ বিন আবদুল আজিজকে অন্তরীণ করেছেন। রাজপরিবারের উপরে তার কর্তৃত্ব আরও দৃঢ় করার জন্য ক্রাউন প্রিন্স এখন সম্ভবত আরো পদক্ষেপ নিতে পারেন।
তবে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা তাকে সমর্থন করছে না। সৌদি অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল জাদান সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন যে, তার সরকার এই বছর ৫৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেবে। এ ঘোষণাটি দেশের ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা বৃদ্ধির ইঙ্গিত।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের শেষ দিকে সৌদি আরবের মোট বিদেশী ঋণ ছিল ১৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৮ সালের শেষের দিকে ছিল ১৫১ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণ গত পাঁচ বছরে আকাশচুম্বী হয়েছে। ইয়েমেন যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস আগে ২০১৪ সালের শেষে, বিদেশী ঋণ ১২ বিলিয়ন ডলারের নিচে ছিল। পাঁচ বছরে এটি ১৫০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। একই সময়ে রাষ্ট্রের নগদ সম্পদ মজুদও কমে গেছে। ২০১৪ সালের শেষে দেশটির মোট রিজার্ভ সম্পদ ছিল ৭৩২ বিলিয়ন ডলার ছিল, কিন্তু ২০১৮ সালের শেষের দিকে তা ৪৯৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এখন এটি ৩০০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
এই পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, সৌদি আরব অর্থনৈতিকভাবে ক্রমাগতভাবে দুর্বল অবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। এই দুর্বলতা দেশটির আঞ্চলিক প্রভাব যেমন কমিয়ে দেবে, তেমনিভাবে অভ্যন্তরীণ এক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে। আর নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনে বিন সালমানের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প হেরে গেলে উচ্চাভিলাষী ক্রাউন প্রিন্সের সামনে এগোনোর সুযোগ সম্ভবত আর থাকবে না। এমন কথাও বলা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত বিন সালমানের সৌদি বাদশাহ হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। আর এর আগেই যদি তিনি এই পদে বসে যান তা হলে তিনিই হতে পারেন সৌদি রাজতন্ত্রের শেষ বাদশাহ।
অন্য দিকে ইরানের সাথে আমেরিকান গভীর বলয়ের যে গোপন সমঝোতার ইঙ্গিত লেখার শুরুতে রয়েছে সেটি বাস্তবে রূপ নিতে পারে। আর এতে মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থাও পাল্টে যেতে পারে আমূল।
mrkmmb@gmail.
Head Office :
2152 – B, Westchester Ave,
Bronx, New York 10462
United States Of America.
Tel : 347 656 4623 (News), 718 823 7535 (Office), 929 261 8340 (CEO), 718 823 7538 (Fax).
Email :
report.banglanewsus@gmail.com (News),
riyahdahad@banglanewsus.com (Editorial)
info@banglanewsus.com (Advertisement)
ceo@banglanewsus.com (Event And Others).
First Fully Online Daily For The Worldwide
South Asian Community Jointly Published From
United States Of America, Great Britain
And Canada On Be-Half Of
POSITIVE INTERNATIONAL INC
@ 2014-2020
Developed BY : positiveitusa.com
Design and developed by positiveitusa.com