প্রকাশিত:শুক্রবার, ১৫ জানু ২০২১ ০৭:০১
আম্বিয়া অন্তরা : জীবন যতটা না আনন্দের তার থেকে বেশি বোঝা ও অনুধাবনের। পারিবারিক শিক্ষা না পেয়ে বেড়ে ওঠা কিশোর কিশোরীরা দিনে দিনে হারিয়ে ফেলছে তাদের নৈতিক মূল্যবোধ । পারিবারিক সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সচেতনতা না পেয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে মিশ্র সংস্কৃতি চর্চা করে ধ্বংসের শেষ মার্গের দিকে। অথচ শিশুরা কাদামাটির মতো পরিবার যেভাবে চায় সেভাবে বেড়ে ওঠে পারিবারিক শিক্ষা বয়ে বেড়ায় জীবনের সকল চলার পথগুলোতে । আমাদের সন্তান বেড়ে ওঠার সাথে লজ্জার প্রলেপে যতগুলো বিষয় জড়িত তার ভিতরে বিশাল একটা অংশ জুড়ে রয়েছে সেক্সুয়াল এডুকেশন । যা আধুনিক সভ্যতাইএসেও অভিবাবকরা ভুল ভাবে উপস্থাপন করে এই শব্দটাকে ট্যাবু হিসাবে বিবেচনা করায় আজকালের কিশোর কিশোরীদের। অজ্ঞতা থেকে যায় প্রকৃত সেক্স এডুকেশনে। যার প্রভাবে নিষিদ্ধ শব্দ হিসাবে আয়ত্ত করে তাদের মস্তিষ্কে বয়ে বেড়ায় । একটা সময় তাদের ফ্যান্টাসি আর কৌতূহল ভিন্নভাবে প্রভাবিত হয় যার ফলে আজকাল ধর্ষণ ইভটিজিং তরুণদের মগজে অন্য ভাবে জায়গা করে নেয়। বহুদিনের চর্চায় অভিববাকরা কিশোর কিশোরীদের কাছে মাসিক, স্বপ্নদোষ, এবং নারীদের শারীরগত ভাবে বেড়া ওঠা এই সব শব্দকে নিষিদ্ধ লুকায়িত করে রেখেছে । পারিবারিক ভাবে তাদেরকে শেখানো হচ্ছেনা। এমনকি একাডেমিক ভাবে তাদেরকে জানাচ্ছিনা ফলে আমাদের কিশোর কিশোরীরা পাশ্চাত্য কালচার থেকে ইচ্ছে মত কাটাকাটি করে খারাপটুকু আমাদের সংস্কৃতিতে জোড়া লাগিয়ে একটা ভয়ঙ্কর মিশ্র অন্ধকার জগত নিজেদের ভিতর পুষে রেখে অভিবাবকদের চোখের সামনে বড় হচ্ছে। বহুদিন ধরে এমন ভাবে অভিবাবকরা এটা চর্চা করে এমন পথ দিয়ে যাচ্ছে তাতে মনে হয় এটা এমন একটা নিষিদ্ধ বিষয় যা নিজেকেই গোপন করতে হবে। বিষয় গুলো বলা যাবে না অভিভাবক, শিক্ষক, বড় বোন কাউকে প্রশ্ন করাই যেন এক মারাত্মক অপরাধ । যার দরুণ আজকাল কিশোর কিশোরীরা যথেষ্ট ম্যাচুরড না হয়ে ভালোবাসা প্রেম আড়ষ্টতা এই প্রলেপে ঢেকে ভুলপথে হাটছে । অপরদিকে তরুণরা হাজার হাজার বছরের মজ্জাগত এই পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা লালন করে তাদের ভিতর । পারিবারিক ভাবে যখন এই বিষয়ে সচেতন করতে পারিনা এই বিষয় গুলো তখন তারা জানার চেষ্টা করে অন্যভাবে । গত বিশ বছরের সমীকরণ যদি আমরা মিলাতে যাই তাহলে স্পষ্ট দেখা যায় ৯০ এর শেষের দিকে বা ২০০০ সালের শুরুর দিকে আমাদের সমাজে কিশোর-কিশোরী যৌনতা বিষয়ক জ্ঞান পাওয়ার মূল উৎস ‘পর্ণোগ্রাফি যা অবাস্তব বা স্ক্রিপ্টের উপর দৃশ্যপট বিষয় । আমাদের কিশোর কিশোরীরা অস্বাভাবিক সেই ফিল্ম দেখে যৌনতা বিষয়ক যে জ্ঞান তাদের হয় তাতে তাদেরকে রীতিমতো প্রতিবন্ধী করে দেয় এবং ধর্ষণের দিকে ধাবিত করে । প্রকৃত যৌন শিক্ষা সম্পর্কে তাদের ধারণা থেকে যায় যোজন যোজন দুরে । যার ফলে তারা এই স্বীকৃতি নিয়ে বড় হয় যৌন সঙ্গম হচ্ছে কর্তৃত্ব খাটানো । জোর পূর্বক জোর খাটানো এই ফ্যান্টাসি থেকে জোর খাটানো মনোভাব তৈরী হয় আর এক সময় হয় ধর্ষণের বহিঃপ্রকাশ৷ ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নামের বইয়ে একটি করে অধ্যায় করা হয়েছে সেখানে খুব বেশি খোলামেলা নয় শুধু শিরোণামের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বয়ঃসন্ধি কাল, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, ভ্রান্ত ভাবনা, নিরাপদ থাকার উপায়, ঝুঁকি ও নিরাপত্তা, এইডস ও এইচআইভি। আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা এই টপিকস গুলো এড়িয়ে যান খুব কৌশলে । পরীক্ষায়ও এবিষয়ে তেমন প্রশ্ন করা হয়না তাই কিশোর কিশোরীরা এই বিষয় গুলো জানেনা। যার ফলে বাংলাদেশে ধর্ষণ বাড়ছে, বাড়ছে ধর্ষণের পর হত্যার মানসিকতা৷ একই সঙ্গে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা৷ ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার পিছনে ক্ষুদ্রভাবে তাকালে এই বিষয় গুলো উঠে আসে পর্ণোগ্রাফির বিস্তার, স্বল্প পরিচয়ের পর ওই ছেলের মেলামেশা এবং বর্তমান সময়ে তথাকথিত নাটক ওয়েব সিরিজে অশালীন ও অশোভন দৃশ্যে অশ্লীল সংলাপ থেকে রীতিমতো সেক্স প্রমোট করে। বিশেষ করে আমাদের আগে প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন চ্যানেলে যা দেখানো হয়, তাও ধর্ষণের মতো অপরাধকে উসকে দিচ্ছে। বিজ্ঞাপণ দেখে একটি ছোট ছেলেও জানতে পারছে শরীরকে উত্তেজিত করতে হলে কী খেতে হবে। ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেটে সাইট গুলো খুব সহজে হাতের কাছে পাচ্ছে । বৃহত্তর ভাবে চিন্তা করলে যার প্রভাবে দিনে দিনে ধর্ষণের মাত্রা বাড়ছে তার অনেকটা জুড়ে রয়েছে আইনের সুস্থ ও সুষ্ঠু বিচার না হওয়া । ধর্ষকদের ভিতর কোন ভয়ভীতি কাজ করছেনা । যদি একটু উদাহরণ হিসাবে বলি পরিবারে যদি কেউ কোন অপরাধ করে সাথে সাথে যদি তার শাস্তি দেয়া হয় তাহলে সে পুণরায় সেই অপরাধ করার সময় ভাববে এইটা করলে আমার শাস্তি হবে এবং সাথে সাথে আশে পাশের সদস্যরা সতর্ক হবে। রাষ্ট্রে যখন এর সুষ্ঠ বিচার হয়না ক্ষমতার কাছে নতজানু হয়ে পার পেয়ে যায় তখন এই বিষয় গুলো বাড়তে থাকে অবলীলায়। যখন আইনের যথার্থ প্রয়োগ না হয় বিচার যখন দৃশ্যমান সমাধান না দিতে পারে তখন অন্য সবাই তা করার চিন্তা করে। আমাদের ফরেনসিক বিভাগে অনেক সময় কোনো নারী চিকিৎসক, নার্স এমনকি কোনো আয়াও থাকে না ধর্ষণের শিকার নারীকে বার বার ঘটনার বিবরণ দেয়া এবং নানান প্রশ্নের মুখে বিব্রত হতে হয় । ধর্ষণের বিচারের নামে নতুন করে ধর্ষিত হতে হয় শত শত গল্প। গ্রামে আমরা দেখে এসেছি ছেলে মেয়ে একসাথে আপত্তিকর সময় ধরা পড়লে সমাজের চাপে ধর্ষকের সাথেই মেয়েটির বিয়ের ব্যবস্থা করার ঘটনাও ঘটে। এটা কেমন যেনো একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। আমরা কখনো চিন্তা করিনা এই ব্যাপারটা আসলে কতখানি অমানবিক, মানসিক বিকারগ্রস্ত একটা পুরুষ নিষ্ঠুরভাবে ধর্ষণ করলো অথচ আমাদের সমাজের আইনে তাকেই ডেকে এনে আবার তার হাতে ধর্ষিত জীবনটা সঁপে দেয়। চিন্তা করিনা বাকি জীবনটা তার কিভাবে কাটবে। এর ফলে নারীদের বহু আত্মহত্যার গল্প রাষ্ট্রীয় রাজকোষে জমা আছে। তাই ধর্ষণ প্রতিরোধে কিশোর কিশোরীদেরকে পারিবারিক ভাবে সেক্সুয়াল এডুকেশনের বিকল্প নেই যা মেডিসিনের মতো কাজ করবে । সামাজিক ভাবে সচেতনতা তৈরী করতে হবে। অভিবাবকদের উচিত তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে কাদের সাথে সময় কাটাচ্ছে কোন বিষয় নিয়ে তাদের আলাপ আলোচনা হচ্ছে। কোন সাইট গুলোতে তারা ভিজিট করছে। কোন ধরণের নাটক সিনেমা ওয়েভ সিরিজ দেখছে। অপরদিকে আইনের দৃশ্যমান প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত ভাবে বাল্যবিবাহ, মানব পাচার এবং এসিড সন্ত্রাসের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে আলাদা আইন রয়েছে। ধর্ষণের বিচার সম্পর্কে আরেকটি আইন দরকার। অথবা বর্তমান বিদ্যমান আইনেই কিছু সংস্কার এনে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা পারিবারিক শিক্ষা আর আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় যৌন শিক্ষা ৷ এই ভ্রান্ত মস্তিস্ক সুস্থ হবে কমবে নারী-পুরুষের মধ্যকার মানসিক দূরত্ব৷ সব শেষে একথা বলা যেতে পারে পারিবারিক শিক্ষার সাথে ধর্মীয় অনুশাসন যদি যোগ করা যায় তাহলে কেউ ধর্ষণের মত জঘন্য কাজের সাথে জড়িত হবেনা বলে আমার বিশ্বাস। তাহলে হয়তো আমরা আগামীতে পেতে পারি ধর্ষণ মুক্ত নিরুপোদ্রুপ একটা সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী।
Head Office :
2152 – B, Westchester Ave,
Bronx, New York 10462
United States Of America.
Tel : 347 656 4623 (News), 718 823 7535 (Office), 929 261 8340 (CEO), 718 823 7538 (Fax).
Email :
report.banglanewsus@gmail.com (News),
riyahdahad@banglanewsus.com (Editorial)
info@banglanewsus.com (Advertisement)
ceo@banglanewsus.com (Event And Others).
First Fully Online Daily For The Worldwide
South Asian Community Jointly Published From
United States Of America, Great Britain
And Canada On Be-Half Of
POSITIVE INTERNATIONAL INC
@ 2014-2020
Developed BY : positiveitusa.com
Design and developed by positiveitusa.com