প্রকাশিত:বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১ ০৮:০৩
স্পোর্টস ডেস্কঃ বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল ক্রীড়াঙ্গনও। প্রতিবাদের ভাষা ছিল নানা রকম। তাঁদের হাতে হয়তো অস্ত্র ছিল না, কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধে পায়ের ফুটবলটাই হয়ে উঠেছিল অস্ত্রের মতো ধারালো। তাঁদের খেলার মধ্যেই মিশে ছিল প্রতিবাদের ভাষা। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের পতাকাতলে এই ফুটবলাররা পশ্চিম বাংলা, বিহার, বেনারস, মুম্বাইসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে ১৭টি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলেন। ম্যাচগুলো থেকে প্রাপ্ত কয়েক লাখ ভারতীয় রুপি জমা পড়ে মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে। দেশের স্বাধীনতার জন্য ভিনদেশে প্রীতি ম্যাচ খেলে অর্থ সংগ্রহ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেই বিরল।
দলে খেলোয়াড় ছিলেন ৩৫ জন। তবে ২০০৩ সালের ২৫ অক্টোবর প্রকাশিত সরকারি গেজেটে সংখ্যাটা ৩১। এই ৩১ জনকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। ক্রীড়া সাংবাদিক দুলাল মাহমুদের “খেলার মাঠে মুক্তিযুদ্ধ” বইয়ের তথ্য—১৯৮০ সালে পাক্ষিক “ক্রীড়াজগত”–এ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলা ১৪টি ম্যাচের ফল জানিয়েছিলেন দলটির অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। যার মধ্যে স্বাধীন বাংলা দল জিতেছে ৯টি ম্যাচে, হেরেছে ৩টিতে ও ড্র করেছে ২টি ম্যাচে। সহ–অধিনায়ক প্রতাপ শংকর হাজরা “ক্রীড়াজগত”-কে আরও ৩টি ম্যাচের তথ্য দেন, যেগুলোতে জিতেছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।
ফলটা আসলে বড় ছিল না তখন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরি করাই ছিল এই ফুটবল দলের মূল উদ্দেশ্য। কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে কোকাকোলা ভবন নামে পরিচিত কারনানি এস্টেট বিল্ডিংয়ে ছিল দলের আবাসিক ক্যাম্প। অনুশীলন হতো পার্ক সার্কাস ময়দানে। ১৯৭১ সালের ১৩ জুন ভারতের মাটিতে গঠিত বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতির অধীনই সে দেশে ঘুরে ঘুরে প্রীতি ম্যাচ খেলেন তরুণ ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন-নওশেরুজ্জামানরা। ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ নামটা তখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হয়নি।
বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতিকে স্বাগত জানিয়ে কলকাতার “আনন্দবাজার পত্রিকা” লিখেছিল, ‘আরেক মুজিব বাহিনী।’ সেই ‘বাহিনী’র ফুটবলাররা ২৫ জুলাই নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের মাঠে নদীয়া জেলা ক্রীড়া সমিতির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ভারতে প্রীতি ম্যাচ খেলা শুরু করেন। ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন ফুটবলাররা। ভিনদেশের পতাকা ওড়ানোয় পরে কৃষ্ণনগরের জেলা প্রশাসককে শাস্তিও পেতে হয়।
বাধাবিপত্তি পেরিয়েই এগিয়ে যেতে হয় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে বিহার যাত্রার পথে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে ফুটবলারদের ট্রেনে হামলা চালান স্থানীয় লোকজন। বিহারের হোটেলে মশার কামড়ের কথা এখনো রসিকতার ছলে বলেন জাকারিয়া পিন্টু। স্বাধীন বাংলা দলের অন্যতম সদস্য শেখ আশরাফ আলী ভুলতে পারেন না কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনারের কার্যালয়ে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওঠানোর স্মৃতি।
তবে একটা আক্ষেপও আছে তাঁর, ‘স্বাধীন বাংলা দলের সদস্য হিসেবে অনেক কিছুই আমরা পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীন বাংলা দল স্বাধীনতা পদক পায়নি।’ তাঁর দাবি, ‘পাঠ্যবইয়ে স্বাধীন বাংলা দলের কথা থাকুক। তাহলে পরের প্রজন্ম জানতে পারবে এই গর্বিত ইতিহাস।’ আগস্টে কলকাতায় চুনি গোস্বামীর নেতৃত্বে গোষ্ঠপাল একাদশের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের প্রীতি ম্যাচটি তাঁর স্মৃতিতে একটু বেশিই উজ্জ্বল। গোষ্ঠপাল একাদশ জিতেছিল ৪-২ গোলে। ভারতের কিংবদন্তি ফুটবলার গোষ্ঠপাল সেদিন বলেছিলেন, ‘আমরাও বাংলার বন্ধু। কেবল মানুষ হয়েছি এই বাংলায়।’
ভারতে যাওয়ার আগেই বাংলাদেশের অনেক ফুটবলার পাকিস্তানিদের নির্মমতার শিকার হন। তাঁদেরই একজন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সহ–অধিনায়ক প্রতাপ শংকর হাজরা পেছন ফিরে বলেন, ‘পাকিস্তানিরা ঢাকায় আমার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। আমার স্ত্রীর বেনারসি শাড়িটা পুড়ে যায়। দেয়াল টপকে কোনোমতে বাড়ি ছাড়ি।’
স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে মাঝেমধ্যে একটু আক্ষেপও হয় প্রতাপ শংকর হাজরার, ‘আমাদের খেলাধুলায় ক্রিকেট অনেক এগিয়েছে। শুটিং, আর্চারি এগিয়েছে। হকির উন্নতি হলেও ধরে রাখা যায়নি। তবে ফুটবল পিছিয়েছে। ভুটানের কাছেও তো হেরেছে বাংলাদেশ।’
স্বাধীনতার জন্য ফুটবল পায়ে লড়েছেন ফুটবলাররা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তাঁদের চাওয়া বেশি কিছু নয়। কামনা শুধু দেশের ফুটবলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎটাই।
Head Office :
2152 – B, Westchester Ave,
Bronx, New York 10462
United States Of America.
Tel : 347 656 4623 (News), 718 823 7535 (Office), 929 261 8340 (CEO), 718 823 7538 (Fax).
Email :
report.banglanewsus@gmail.com (News),
riyahdahad@banglanewsus.com (Editorial)
info@banglanewsus.com (Advertisement)
ceo@banglanewsus.com (Event And Others).
First Fully Online Daily For The Worldwide
South Asian Community Jointly Published From
United States Of America, Great Britain
And Canada On Be-Half Of
POSITIVE INTERNATIONAL INC
@ 2014-2020
Developed BY : positiveitusa.com
Design and developed by positiveitusa.com