প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টো ২০২০ ১১:১০
পৃথিবীর বুকে পদার্পণের পর থেকে মানুষ তার কায়িক শ্রম ও সৃজনশীলতা দিয়ে তিলে তিলে যে সভ্যতা গড়ে তুলেছে এবং গড়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট অর্জন হিসেবে নিঃসন্দেহে স্বাধীনতা বা মানবাধিকারের কথা উল্লেখ করা যায়। দার্শনিক ভলতেয়ারের ভাষায় ‘আমি তোমার মতের সঙ্গে একমত না হতে পারি; কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে পারি।’ কথাটি যখন ভাবি, তখন সত্যিই প্রতিটি মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা ও তার নানা রূপের কথা মাথায় আসে। আর মানবজাতির একজন সদস্য হিসেবে নিজের ভেতরে গৌরব অনুভব করি। কিন্তু যখন দেখি স্বাধীনতা থেকে উদ্ভূত ঢেউগুলো কোনো সীমানা দেয়ালে আছড়ে পড়ে অসহায়ভাবে, তখন ভেতরটা কুঁকড়ে যায়। মনে হয় চিন্তার সব দরজা-জানালা খোলা রাখা বা প্রয়োজনমতো নতুন নতুন দরজা-জানালা খোলার স্বাধীনতা আমার মতো মানুষের নেই।
মনে হয় যদি পৃথিবীর বুকে মানুষের পদার্পণের পর থেকে স্বাধীন ভাবনাগুলো কোনো দেয়াল দ্বারা সীমাবদ্ধ না হতো, তবে হয়তো মানবসভ্যতার ইতিহাস বা বর্তমান সভ্যতার রূপটা ভিন্ন হতে পারত। একবার ভাবুন তো মানুষের পৃথিবীতে পরিবারতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র, রাষ্ট্রতন্ত্র, কুসংস্কারতন্ত্র ইত্যাদি আরও অগণিত তন্ত্র-মন্ত্রের কারণে মানুষ যদি বাধার সম্মুখীন না হতো, তাহলে মানবসভ্যতার রূপটা কেমন হতো। সে রূপ আরও আলোময় ও উপভোগ্য হতো কিনা জানি না, তবে এটা নিশ্চিত যে অন্যরকম হতো।
বর্তমান সভ্যতায় আমরা সমাজ বা রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া স্বাধীনতার মধ্যে স্বাধীন, যার পরতে পরতে রয়েছে দৃশ্য ও অদৃশ্য অজস্র দেয়ালের হুংকার। তখন মেনে নিতে হয় মানুষ স্বাধীন; কিন্তু মুক্ত নয়। মুক্ত নয় সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো, মুক্ত নয় মুক্তবিহঙ্গের মতো, মুক্ত নয় চন্দ্র-সূর্যের মতো, মুক্ত নয় বায়ুপ্রবাহের মতো, মুক্ত নয় কলমীলতার মতো, মুক্ত নয় মানুষের স্পর্শহীন বন-জঙ্গলের মতো। সে জন্যই দার্শনিকেরা বলে গেছেন—মানুষ জন্ম নেয় মুক্তভাবে। কিন্তু জন্মের পর মৃত্যু পর্যন্ত তাকে প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এমনকি এও বলা হয়, একজন মৃত মানুষের মতো কেউই পরিপূর্ণভাবে মুক্ত বা স্বাধীন নয়। কারণ, মৃত মানুষটির শারীরিক অবয়ব তার জীবদ্দশার মতো থাকলেও, তার আত্মা, সত্তা, মন, বিবেক, ব্যক্তিত্ব বা নিজ বৈশিষ্ট্য যে ‘আমিত্ব’, তা জীবিত না থাকায় মৃতের কোনো ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষমতা নেই। আর এ জন্যই সে পরিপূর্ণভাবে স্বাধীন।
আমরা স্লোগান দিই, ‘শত ফুল ফুটতে দাও’। কিন্তু বাস্তবে প্রতিটি ফুলকেই সমাজ বা রাষ্ট্রের বাতলে দেওয়া ছক মেনে ফুটতে হয়। প্রতিটি মানুষের সহজাত চিন্তা-চেতনার প্রস্ফুটনের অধিকারের ক্ষেত্রে তার মাথার ওপর খড়্গ হয়ে থাকা স্বাধীনতার সীমানার ব্যাপারে তাকে হাজারবার চিন্তা করতে হয়। মানুষকে তার চিন্তা বা স্বকীয়তা প্রকাশের ক্ষেত্রে স্থান-কাল-পাত্র, উচিত-অনুচিত, গ্রহণীয়-বর্জনীয়, দূষণীয়-সীমালঙ্ঘন-সংক্রান্ত অজস্র বেড়াজালের কথা মাথায় রাখতে হয়। ফলে মানুষকে তার মনুষ্যত্বের মুক্ত বিকাশের জন্য এর চাকাটি নিয়ে মানবসৃষ্ট আইন-কানুন বা প্রথার বলয়ে ঘুরপাক খেতে হচ্ছে। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন সবই স্বাধীনতার শিকলে বন্দী। শুধু সমাজ ও রাষ্ট্র ভেদে এর রূপ ও মাত্রা ভিন্ন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমি মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট অর্জনের আদর্শিক অবস্থান থেকে বিষয়টি বিবেচনা করছি।
স্বাধীনতার বিদ্যমান ব্যাখ্যায় একজন মানুষের পছন্দ-অপছন্দ নির্ধারণ, কোন কোন আদর্শ লালন বা বর্জন, চিন্তার প্রক্রিয়া, কোন কোন স্বপ্ন দেখা যাবে বা যাবে না, কোন বিষয়ে কথা বলা যাবে বা যাবে না, এমনকি সঙ্গী হিসেবে কাকে বাছাই করা যাবে—তারও সীমানা টেনে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সভ্যতায় মানুষের অবস্থা অনেকটা আধুনিক রোবটের মতো। রাষ্ট্র ও সমাজ এমন কাঠামো তৈরি করে রেখেছে, যাতে মানুষের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। হাজার বছর ধরে মুক্ত চিন্তার অভাবের কারণে মানুষ ক্রমে ধর্মীয়, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় হুকুমের রোবটে পরিণত হয়েছে।
তবু কথা থেকে যায়। এমন শৃঙ্খলের বেড়াজাল না থাকলে মানুষ মুক্তচিন্তা করা ও তা প্রকাশের মাধ্যমে কি আরও উন্নত মানবসভ্যতা গড়তে পারত? উত্তর একই সঙ্গে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’। যেদিন মানুষ মুক্তচিন্তার ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে তার পৃথিবীকে গড়ে তুলতে পারবে, সেদিনই বোধ হয় প্রকৃতপক্ষে বলা যাবে মুক্ত মানুষের পৃথিবীর কথা।
মিয়া মোঃ আছকির
কবি ও কলামিস্ট
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
Head Office :
2152 – B, Westchester Ave,
Bronx, New York 10462
United States Of America.
Tel : 347 656 4623 (News), 718 823 7535 (Office), 929 261 8340 (CEO), 718 823 7538 (Fax).
Email :
report.banglanewsus@gmail.com (News),
riyahdahad@banglanewsus.com (Editorial)
info@banglanewsus.com (Advertisement)
ceo@banglanewsus.com (Event And Others).
First Fully Online Daily For The Worldwide
South Asian Community Jointly Published From
United States Of America, Great Britain
And Canada On Be-Half Of
POSITIVE INTERNATIONAL INC
@ 2014-2020
Developed BY : positiveitusa.com
Design and developed by positiveitusa.com