প্রকাশিত:রবিবার, ১৩ ডিসে ২০২০ ১২:১২
জালাল উদ্দিন, রংপুর ॥
রংপুরের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেডে ২০বছর ধরে ট্রাকচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন রাজু আহমেদ (৫২)। লোকসানের মুখে চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করে মিল কর্তৃপক্ষ। কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে এ আশঙ্কায় এখন দিন কাটছে রাজু আহমেদ’র। একমাত্র পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। চাকরি না থাকলে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা আর সংসারের খরচ কীভাবে চলবে সে চিন্তাই যেন এখন তাকে ঘিরে ধরেছে। রাজু আহমেদের মতো ওয়ার্কশপ (জুনিয়র টানার) কর্মচারী আলামিন ও ওয়ার্কশপ সহকারী মোকছেদ আলীও এখন চোখে-মুখে কেবলই ঘোর অন্ধকার দেখছেন।
এদিকে, গত দুই সপ্তাহ ধরে শ্যামপুর চিনিকল অ্যামপ্লয়িজ ইউনিয়ন ও আখচাষি কল্যাণ সমিতির আয়োজনে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তারা। অন্য শ্রমিক-চাষিদের মতো তাদেরও দাবি, যেন বন্ধ করা না হয় এ কারখানাটি। প্রায় ৩শ স্থায়ী শ্রমিকসহ চুক্তিভিত্তিক ও মৌসুমি মিলে সাত শতাধিক শ্রমিক রয়েছেন এ কারখানায়। যাদের আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ হয় তাদের পরিবারের। কারখানা বন্ধ হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাগত দিনগুলোতে কী হবে তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না এসব শ্রমিকরা।
বন্ধ ঘোষনায় আখচাষিরাও পড়েছেন বিপাকে। প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার আখচাষি ও তাদের পরিবারসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দিনমজুর, ব্যবসায়ী মিলে দেড় লাখ মানুষের আয়-রোজগারের নির্ভরতা এই সুগার মিলে। কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের মতো তারাও এখন দিশেহারা। কারখানা বন্ধ হলে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন।
ট্রাকচালক রাজু আহমেদ জানান, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার পরিবার। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে রংপুর ক্যান্টপাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। চাকরির আয় দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ বহন করতেন। এখন চাকরি না থাকলে বিপদে পড়তে হবে তাদের।
শ্যামপুর বসন্তপুর এলাকার কৃষক হামিদুল ইসলাম জানান, তার তিন বিঘা জমি রয়েছে। প্রতিবছর এক বিঘা জমিতে আখচাষ করেন। অন্য ফসলের চেয়ে শ্রম ও ব্যয় কম হওয়ায় আখচাষ লাভজনক। সাধারণত বালু ও উঁচু মাটিতে আখচাষ করা হয়। মিল বন্ধ হলে আখের বদলে অন্য ফসল চাষ করা গেলেও ততটা লাভজনক হবে না। তাই তিনিও চিন্তিত।
শ্যামপুর এলাকার কৃষক শহিদার রহমানের ১০০ শতক জমির মধ্যে প্রতিবছর ৭৫ শতক জমিতে আখ চাষ করেন। তার মতে, আখচাষে শ্রম ও ব্যয় কম। তাই লাভজনক।
মিল কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক ও আখচাষি সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্যামপুর সুগার মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ব্যাংক ঋণ, ঋণের সুদ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ বিভিন্ন খাত মিলে ৫০৫ কোটি টাকা লোকসানের ঘানি টানতে হচ্ছে। এরমধ্যে গত ২০১৯-২০২০ মৌসুমে লোকসান গুণতে হয়েছে ৬১ কোটি টাকা। অব্যাহত লোকসানের মুখে চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই বন্ধ করা হয়। এছাড়াও আখচাষিদের পাওনা বকেয়া না থাকলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের চার মাসের বেতন (মে, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর) প্রায় ৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
এদিকে, আখ উৎপাদন কমে যাওয়া ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে লোকসানের বোঝা বাড়ছে বলে মিল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও তা মানতে নারাজ শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিরা। তাদের দাবি, কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অদক্ষ জনবল ও অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে প্রতি বছর লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে।
আখচাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান সাগর জানান, ধান, গমসহ বিভিন্ন ফসলের মতো আখেরও হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন এবং মেয়াদকাল কমিয়ে আনলে আখচাষে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠতেন কৃষকরা। এজন্য মিল বন্ধ না করে বৈজ্ঞানিক উপায়ে উন্নতজাতের আখ উৎপাদনের জোর দাবি জানান তিনি।
শ্যামপুর সুগার মিল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, অদক্ষ কর্মকর্তা, যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে দুর্নীতি, বিভিন্ন প্রকল্পের নামে টাকা আত্মসাৎ এবং অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে এই কারখানাটি লোকসানের মুখে পড়ছে। তিনি বলেন, দেশের ১৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের মধ্যে শ্যামপুর চিনিকল দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেডে অবস্থান করলেও লোকসানের অজুহাতে তা পুরোপুরি বন্ধের পায়ঁতারা করা হচ্ছে। কারখানাটি বন্ধ না করে কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করে এটি চালু রাখার জোর দাবি জানান তিনি।
সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীলিপ কুমার সরকার বলেন, যেখানে ৫ মাস মিল চালু রাখার কথা, সেখানে পর্যাপ্ত আখ না পাওয়ায় তার আগেই চিনি উৎপাদন বন্ধ করতে হয়। আখ উৎপাদন কমে যাওয়া এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না। এ কারণে প্রতিবছর লোকসান বাড়ছে।
কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে লোকসান হচ্ছে-শ্রমিকদের এমন দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সঠিক না। আমি কিছুদিন আগে গত ৮ জুলাই যোগদান করেছি। এ ধরনের কিছু জানা নেই।
Head Office :
2152 – B, Westchester Ave,
Bronx, New York 10462
United States Of America.
Tel : 347 656 4623 (News), 718 823 7535 (Office), 929 261 8340 (CEO), 718 823 7538 (Fax).
Email :
report.banglanewsus@gmail.com (News),
riyahdahad@banglanewsus.com (Editorial)
info@banglanewsus.com (Advertisement)
ceo@banglanewsus.com (Event And Others).
First Fully Online Daily For The Worldwide
South Asian Community Jointly Published From
United States Of America, Great Britain
And Canada On Be-Half Of
POSITIVE INTERNATIONAL INC
@ 2014-2020
Developed BY : positiveitusa.com
Design and developed by positiveitusa.com