প্রকাশিত:রবিবার, ০৩ জানু ২০২১ ০৮:০১
নিউজ ডেস্ক, নিউইয়র্ক : কৃত্রিমতা পৃথিবীকে প্রাণহীন করে দেয়। কৃত্রিম রংবেরঙের ফুলের দাপটে বাগানের তাজা ফুল এখন মূল্যহীন হয়ে উঠছে। কৃত্রিম হয়ে উঠছে মানুষের নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ। স্বার্থের জন্য ঈমান বিকিয়ে দিতেও কুণ্ঠা বোধ করে না মানুষ। অথচ ইসলামে কৃত্রিমতার স্থান নেই। ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে কেউ প্রকৃত মুসলমানের তালিকায় থাকতে পারে না। ঈমানের দাবি হলো একনিষ্ঠতা। ঈমানে কৃত্রিমতার কোনো স্থান নেই। তাই প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য কৃত্রিমতা ত্যাগ করতে হবে।
ঈমানে কৃত্রিমতা
ঈমানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঈমান এই যে তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাব, তাঁর প্রেরিত নবী ও শেষ দিনের ওপর বিশ্বাস রাখবে এবং তুমি তাকদির এবং এর ভালো ও মন্দের প্রতিও বিশ্বাস রাখবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১)
একজন মানুষকে প্রকৃত মুমিন হতে হলে এই বিষয়গুলোকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-কে সব কিছুর ওপর প্রাধান্য দিতে হবে। দুনিয়ার কোনো স্বার্থে যদি কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কোনো মত ও পথকে অবজ্ঞা করে, অস্বীকার করে, কিংবা কোরআন-হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ভিন্নমত প্রতিষ্ঠা করার জন্য ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়, তাহলে সে মুমিনের কাতারে থাকতে পারবে না, ঈমানের স্বাদ পাবে না। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে—১. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি প্রিয় হওয়া; ২. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা; ৩. (ইসলাম গ্রহণের পর) কুফরিতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা। (বুখারি, হাদিস : ১৬)
অতএব, আমরা যদি প্রকৃত মুমিন হতে চাই, তাহলে পার্থিব স্বার্থে কৃত্রিমতা অবলম্বন থেকে বিরত থাকতে হবে।
ইবাদতে কৃত্রিমতা
ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য ইখলাস পূর্বশর্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের শুধু এই নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বিনকে একনিষ্ঠ করে এবং নামাজ কায়েম করে ও জাকাত প্রদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বিন।’ (সুরা : বায়্যিনাহ, আয়াত : ৫)
অথচ আমরা কখনো কখনো দুনিয়া কামানোর জন্য অথবা খ্যাতি অর্জনের জন্য ইবাদতের মধ্যেও কৃত্রিমতার আশ্রয় নিই। এটা পরিত্যাজ্য। ইবাদতকে কৃত্রিমতামুক্ত রাখতে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—
১. রিয়া : লোক-দেখানো ইবাদতকে রিয়া বলা হয়। এটি ইবাদতকে ধ্বংস করে দেয়। রাসুল (সা.) একে গোপন শিরক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি আমার উম্মতের জন্য যেসব বিষয়ে ভয় করি, তার মধ্যে অধিক আশঙ্কাজনক হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা। অবশ্য আমি এ কথা বলছি না যে তারা সূর্য, চন্দ্র বা প্রতিমার পূজা করবে; বরং তারা আল্লাহ ছাড়া অপরের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করবে এবং গোপন পাপ করবে (লোক-দেখানো ইবাদত করবে)।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২০৫)
কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়, সেই গোপন শিরক কী? তিনি বলেন, রিয়া।
২. সুমআ : ইবাদত করে তা মানুষের কাছে বলে বেড়ানো হচ্ছে সুমআ। মানুষকে সর্বদা নিজের ইবাদতের ফিরিস্তি শোনানো। এটিও ইবাদতকে ইখলাসশূন্য করে দেয়। ফলে ইবাদত ধ্বংস হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লোক-শোনানো ইবাদত করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক-শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৯৯)
৩. পার্থিব উদ্দেশ্যে ইবাদত : জাগতিক জীবনে উপকৃত হওয়ার উদ্দেশ্যে ইবাদত আল্লাহর দরবারে মূল্যহীন। এটা মুনাফিকদের কাজ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে। বস্তুত তিনি তাদের ধোঁকায় ফেলেন। আর যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন অলসতার সঙ্গে দাঁড়ায়, শুধু লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪২)
আমরা যদি ইবাদতকে কৃত্রিমতামুক্ত রাখতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই এ বিষয়গুলো ত্যাগ করতে হবে। ইবাদত করতে হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য।
ভালোবাসায় কৃত্রিমতা
পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষ মানুষকে ভালোবাসে স্বার্থের জন্য। স্বার্থ শেষ, ভালোবাসাও শেষ। কিন্তু যাদের ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহর জন্য হয়, তাদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে না। কারণ তাদের ভালোবাসায় কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকে না। তারা ভালোবাসে শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আর ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়ার শর্তই হচ্ছে তা নিঃস্বার্থ হওয়া। মানুষের কল্যাণে কিছু করলেও তা একমাত্র আল্লাহর জন্য করা। যারা নিঃস্বার্থভাবে মানুষকে শুধু আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের কল্যাণে কাজ করে, মানুষের উপকার করে, রাসুল (সা.) তাদের পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসল, আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করল, আল্লাহর জন্য কাউকে দান করল এবং আল্লাহর জন্য কাউকে দান করা থেকে বিরত থাকল, সে ব্যক্তি নিজ ঈমানকে পূর্ণতা দান করল।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৮১)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আরশের চারপাশে কতগুলো নুরের মিম্বার রয়েছে, যেগুলোর ওপর একদল লোক অবস্থান করবে, যাদের পোশাকে নুর এবং চেহারায়ও নুর, তারা নবী নন এবং শহীদও নন, তাদের প্রতি ঈর্ষা করবেন নবী ও শহীদরা। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কাছে তাঁদের বিবরণ তুলে ধরুন। তখন তিনি বলেন, তাঁরা হলেন আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে একে অন্যকে মহব্বতকারী, পরস্পর আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে বন্ধুত্ব স্থাপনকারী এবং আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারী।’ (সুনানে কুবরা লিন নাসায়ি)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে কৃত্রিমতা ত্যাগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Head Office :
2152 – B, Westchester Ave,
Bronx, New York 10462
United States Of America.
Tel : 347 656 4623 (News), 718 823 7535 (Office), 929 261 8340 (CEO), 718 823 7538 (Fax).
Email :
report.banglanewsus@gmail.com (News),
riyahdahad@banglanewsus.com (Editorial)
info@banglanewsus.com (Advertisement)
ceo@banglanewsus.com (Event And Others).
First Fully Online Daily For The Worldwide
South Asian Community Jointly Published From
United States Of America, Great Britain
And Canada On Be-Half Of
POSITIVE INTERNATIONAL INC
@ 2014-2020
Developed BY : positiveitusa.com
Design and developed by positiveitusa.com