প্রকাশিত:শুক্রবার, ২৫ সেপ্টে ২০২০ ০১:০৯
মীর লিয়াকত: পকেট মারের ছেলেটা ক্লাস নাইনে পড়ছে। পড়াশুনায় ভালো না হলেও সে খারাপ একথা বলা যাবেনা। স্কুলের ভর্তি ফরমে বাবার নাম লেখা হলেও এক মামা ওর লোকালগর্ডিয়ান।
স্বাভাবিক ভাবেই সবাই রুহেলকে দেখলেই নাট সিটকায়। সহপাঠীদের মধ্যে অনেকেই তাকে পিক পকেটার হিসাবে ডাকে। প্রথম প্রথম সহ্য হতোনা। এখন বড় হচ্ছে রুহেল। বোঝে সবাই তো ঠিকই বলছে। প্রতিবাদ না করে নীরবই থাকে মাথা হেট করে। এতে বরং অনেকের সহানুভূতিই পায় সে। কতদিন বাড়ী ফিরে কাঁদতে কাঁদতে মাকে বলেছে ‘বাবাকে বলো, এসব খারাপ কাজ ছেড়ে দিতে। আমার স্কুলে যেতে লজ্জা করে।’
একদিন এভাবে শুনতে শুনতে রুহেলের বাবা ‘পকেট ভান’ু হিসাবে যার সবখানে পরিচিতি- পকেট কাটা ছেড়েই দিল। সাবইকে বললোও ছেলেটা পড়াশুনা করে এখন ওসব ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু তাতে কি গায়ের কাঁদা যায়? কেউ বিশ্বস করে না। ট্রেনে বসে যাত্রীদের পকেট
কাটা গেলে এবং মামলা হলেই পুলিশ এসে চোখ বুজে ওকে ধরে নিয়ে গিয়ে পেটায়, নয়তো
জেলে পাঠিয়ে দেয়। কিছুদিন পড় ছাড়া পেয়ে আবার চলে আসে। শেষপর্যন্ত আর পকেট কাটা ছাড়া হলো না ভানুর। ছেড়েও যদি রক্ষা না পায়, গন্ধ না যায় তাহলে থাকতে ক্ষতি কি! লাইনে থাকলে বরং পুলিশও ভালমন্দ কিছু বলেনা। সাধারন মানুষও ভয়ভীতি নিয়ে সমীহ করে। মানুষ মনে করে খারাপ লোকে ক্ষেপিয়ে দিলে যদি কোন ক্ষতি করে বসে?
অনেক ভেবেচিন্তে ভানু একটা বুদ্ধি বের করে বউকে ডেকে বলল ‘বউ তুই না এক কাজ কর। তুই রুহেলকে নিয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ীতে থাক। আমি ঢাকায় চলে যাচ্ছি। এখানে আসলেও লুকিয়ে আসব মাঝে মধ্যে। তোরা বলবি আমি রাগ করে বাড়ী ছেড়ে চলে গেছি। আর রুহেলের পড়াশুনার দিকে নজর রাখবি। টাকা পয়সা যেভাবে হোক আমি সময়মতো পাঠাবো।’
এভাবেই একদিন বাড়ী ছেড়ে চলে যায় ভানু। মাস যায় বছর যায়। রুহেল ভর্তি হয় কলেজে। কেউ ভানুর খোজ খবর জানেনা। ভানুর বউ সবাইকে রাষ্ট্র করে দেয় রাগ করে বাড়ী ছেড়ে ইন্ডিয়ায় চলে গেছে সে । একসময় রুহেল এম.এ পাশ করে ভালো চাকরী পেয়ে যায়।
ধীরে ধীরে এলাকায়ও মুছে যায় পকেট ভানুর নাম। রুহেল বাড়ী ছেড়ে মাকে নিয়ে যায় নিজ কর্মস্থলে। মা ছেলেকে বিয়ে করিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। সেখানে কালেভদ্রে যায় ভানু। ছেলের উন্নতিতে সে খুশি। ঢাকায় সে নাকি এখন ফ্লাইং ব্যবসা করে। পিক পকেটিং ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগে। রুহেল ও রুহেলের মা সবাই খুশি। ঈদে চাঁদে বাড়ী আসে ভানু।
বাড়ীতে আর টাকা দিতে হয়না। এখানে ছেলের রোজগারই যথেষ্ট। ভানু তার রোজগার দিয়ে দক্ষিনখানে তিন কাঠা জায়গাও নাকি কিনেছে রুহেলের জন্য কিস্তিতে।
একবার কোরবানীর ঈদে ছেলের কর্মস্থলের বাড়ীতে এলো ভানু।
এখন আর নিজবাড়ী এলাকায় যায়ই না কেউ। রুহেলের কথা সেখানে গেলে মানুষ নাকি এখনো ওদের দিকে
বাঁকা চোখে তাকায়। কি দরকার ওখানে যাওয়ার। ভানু ধুমধাম করে ঈদ উদযাপন করল। ছেলে
বউ এর মুখে হাসির ঝলক। দুদিন থেকে নাইট কোচে ঢাকায় চলে গেল ভানু।
পরদিন অফিস। রুহেল তার মানিব্যাগটা খুজে পাচ্ছেনা। মাথা খারাপ হয়ে গেল রুহেলের।
রুহেলের বউও খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। পাওয়াই গেল না মানিব্যাগ। প্রায় পাঁচ হাজার ডলার ছিল ব্যাগে। অফিসের কাজের টাকা।
পরদিন অফিসে যাবার সময় মা মানিব্যাগটা রুহেলের হাতে দিতেই রুহেল বলল,‘কি ব্যাপার মা? কোথায় পেলে মানিব্যাগ?
ব্যাগতো আমার প্যান্টের পকেটে ছিল। আর আমি তো প্যান্ট পরেই ছিলাম। তাছাড়া জিনসের পকেটটায় এই দ্যাখো খুব শক্ত চেইন ও বকলেস! পড়ে যাবারও তো কথা নয়। কোথায় পেলে?’আস্তে করে ছেলের কানের কাছে মুখ নিয়ে মা বললেন ‘কাজটা তোর বাবার।’
‘কি বলছ তুমি মা? বাবা এখনো ……..।
‘না! সেই আমার বিছানার নিচে রেখে গেছে।
আমাকে ফোনে বলেছে বহুকালের অভ্যাস তো! স্বাস্থ্যবান মানিব্যাগ পকেটে দেখলে হাত নিশপিশ করে।’
‘তাই বলে ছেলের পকেটেও!’ অবাক হয়ে বললো রুহেল ।
‘একথা বলেই তো হাসছিল। বলল কথা বলতে
বলতে ওর পকেট থেকে নিয়ে তোমার বিছানার নীচে রেখে এসেছি- ওকে দিয়ে দিও।’
‘কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব মা?
‘তোর বাবার দ্বারাই সম্ভব। তবে সে আর এখন ওসব করে না। তাই ব্যাগটা রেখে আমাকে ফোন করেছে।’
আসলে অভ্যাস পরিত্যাগ করা কঠিন। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় একটা কথা আছে
‘খইছলত যায় না মইলে, স্বভাব যায় না ধইলে।’ সমাজে সব লোকদেরই খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করা
উচিত। ভালো হয়ে থাকার কোন বিকল্প নেই।
এই বিশ^ পরিস্থিতিতে বিশ^জুড়ে মানুষের অনেক কিছু বদলে গেছে। আমাদের
দেশও তার ব্যতিক্রম নয় কম বেশি। যেমন মাস্ক পরা , তিন ফুট দূরত্ব অবলম্বন করা, যেখানে
সেখানে কফ থুথু ফেলা, জীবানুনাশক ব্যবহার করা, ভাইরাস সংক্রমিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন, পরিবেশ দূষিত না হয় এমনভাবে নিজেকে তৈরী রাখা ইত্যাদি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কিন্তু এসবের দিকে উদাসীনতা প্রকট। তবু কিছুটা হলেও ভালো প্রভাবও আছে। করোনা এইসব আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। করোনা অভিশাপ হয়ে দেখা দিলেও বলা যায় এটা করোনার আশীর্বাদই!
কিন্তু এই কাজগুলো আগেও আমরা করতে পারতাম। এ কাজ করলে তো কোন ক্ষতি নেই। নিজেদের স্বার্থেই আমরা করতে পারতাম। অথচ আমাদের দেশে অভ্যাসগুলো পরিবর্তন হয়েছে এই কথার কোন ভিত্তিি নেই। আসলে কু-অভ্যাস পরিত্যাগ করা খুবই কঠিন্। মানুষ এখনো যেখানে সেখানে কফ থুূতু ফেলছে নির্বিকারভাবে। অনেকস্থানে মাস্ক পরলে লোকজন হা করে চেয়ে থাকে যেন চিড়িয়াখানার কোন জন্তু দেখছে। গ্রামদেশে তো অনেকে হাসাহাসিও করে। হুকিংবা সরকারী বিধিনিষেধের তোয়াক্কা অনেকেই করে না। এইসবই আমাদের কু অভ্যাসের ফসল।
অথচ জীবন নিয়ে যেখানে সংকট সেখানে অবশ্যই এইসব কু অভ্যাস পরিত্যাগ করতেই হবে।আসলে এই
মহামারী অন্যান্য মহামারীর মতো নয়। রয়েছে ভিন্নতা। সংক্রমিত মানুষের পাশে কেউ যাচ্ছেনা।
সংক্রমনের ভয়ে মৃত লাশ দেখতে কিংবা লাশের সৎকার করতেও কেউ যাচ্ছে না। গেলে যদি নিজেকে সংক্রমিত হতে হয়? মানুষ মানুষের জন্য। মানুষের শেষ যাত্রায় মানুষের পাশে মানুষ যাবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু করোনা মহামারী এমনি যে শেষ যাত্রার সময়ও গিয়ে দেখা সম্ভব হচ্ছে না। এই চরম পরিস্থিতিতে সরকারী বিধি কিংবা বিশ^ স¦াস্থ্য সংস্থার নির্দেশাদি মেনে না চললে ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের অসচেতনতার দেশের কপালে কিন্তু ভয়াবহ খারাবী আছে,কথাটা ভালো ভাবে মনে রাখতে হবে। এখন সবচেয়ে বড় বিষয় এই মহাসংকট থেকে বেরিয়ে আসা। প্রাথমিক ভাবে সকলকে ঘরে থাকতে হবে, সংক্রমন রোধ কারার জন্য। এছাড়া হাত ধোয়া, গরম পানি খাওয়া, দুরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি। তারপর প্রতিষেধক আবিস্কার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া এখন আর কোন পথ খোলা নেই। এটাতো সবাই ভলো বোঝেন যে অন্যান্য দেশের তুলনায় সব দিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে আছি। ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে আমাদের জটিলতা অন্যন্যদের চেয়ে বহু বহু গুন বেশি। তাই সব কথার শেষ কথা আমাদের এখন ঘরে থাকতে হবে যে কোন কিছুর বিনিময়ে, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে সবার
সাহচর্য। যদিও বাহ্যত অনেক কিছুই এখন স্বাভাাবিক বলে বলা হচ্ছে, পারিপাশির্^কতা দেখে মনেও হচ্ছে।
তবু সতর্ক থাকতেই হচ্ছে। সংক্রমন মৃত্যু কি সত্যিই কমছে? না কমছে না! তাই কু-অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করে অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে জীবনকে সংকটে না ফেলার কাজে থাকতেই হচ্ছে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই।
মীর লিয়াকত \
সব্যসাচী লেখক।
Head Office :
2152 – B, Westchester Ave,
Bronx, New York 10462
United States Of America.
Tel : 347 656 4623 (News), 718 823 7535 (Office), 929 261 8340 (CEO), 718 823 7538 (Fax).
Email :
report.banglanewsus@gmail.com (News),
riyahdahad@banglanewsus.com (Editorial)
info@banglanewsus.com (Advertisement)
ceo@banglanewsus.com (Event And Others).
First Fully Online Daily For The Worldwide
South Asian Community Jointly Published From
United States Of America, Great Britain
And Canada On Be-Half Of
POSITIVE INTERNATIONAL INC
@ 2014-2020
Developed BY : positiveitusa.com
Design and developed by positiveitusa.com