প্রকাশিত:সোমবার, ১৪ ডিসে ২০২০ ০৯:১২
মীর লিয়াকত: পৃথিবীতে ভাষা কয়টি? প্রথম ভাষা কোনটি? ভাষার সঠিক ইতিহাসে কোন ভাষায় প্রথম পড়া কিংবা লেখা হয়? কোন কোন ভাষা আন্তর্জাতিক? কোন ভাষায় কথা বলার জন্য রাজপথে পাখির মতো মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়? কোন দেশ ভাষাকে কেন্দ্র করে অবশেষে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা অর্জন করে? কোন দেশ ভাষা আন্দোলনে মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়ে মাতৃভাষাকে সমগ্র বিশ্বের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে নিতে সক্ষম হয়?
ভাষা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। তবে ভাষা নিয়ে বিশ্বের যে কোন স্থানে কোন আলোচনা, পর্যালোচনা, গবেষনা, লেখালেখি ইত্যাদির প্রয়োজনে সহজেই চলে আসে বাংলাদেশের নাম। উপরে যে প্রশ্নগুলোর অবতারনা করা হয়েছে সেখানে শেষের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় বার বারই চলে আসছে বাংলাদেশের নাম।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে গোটা বিশ্বে ভাষার সংখ্যা ছয়হাজার। এগুলো কথ্য এবয় লেখ্য। কিছু আছে কথ্য হলেও তা লেখা হয় না। বিজ্ঞানীরা কথ্য-লেখ্য ভাষাগুলোকে দশো ভাগে ভাগ করেছেন। এসব ভাষা থেকে কাল থেকে কালে জন্ম নেয় বহু ভাষা। অনেকটা বৃক্ষেও ডালপালা মেলার মতো। মানুষ বাঁচতে চায়। বাঁচতে চাইলেও মানুষের ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতির প্রয়েজন অত্যন্ত জরুরী। বাংলা বহু-প্রাচীন একটি ভাষা। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এর লিখিত প্রমান রয়েছে।
ড. শহীদুল¬ার বর্ননা মতে বাংলা ভাষার ইতিহাস চারটি ভাগে বিভক্ত। ৬৫০ খৃষ্টাব্দ থেকে ১২০০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রাচীন যুগ, ১২০০খৃ ষ্টাব্দ থেকে ১৩৫০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত সন্ধিযুগ, ১৩৫০ খৃষ্টাব্দ থেকে ১৮০০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত মধ্যযুগ, এবং ১৮০০ খৃষ্টাব্দ থেকে শুরু হয়েছে আধুনিক যুগ। এই আধুনিক যুগও আসলে এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। পন্ডিতেরা নিশ্চই চলমান গতিধারাকে নিয়ে আবারো ভাববেন। হয়তো খুব দুরে নয় তাঁদেরও ৩০০০ খৃষ্টাব্দের পর বলতে হবে ২০৫০ থেকে শুরু হয়েছে সর্বাধুনিক যুগ!’ ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতির এই পরিবর্তন সর্বদাই প্রত্যাশিত। কালের সাথে সম্পর্ক রেখে ভাষা পরিবর্তিত রূপ গ্রহন করে। পবিত্র কোরানে লিপিবদ্ধ আছে ‘একেক কালের জন্য একেক বিধানাবলী হইয়া থাকে।’
অর্থগতভাবে এর তাৎপর্য ব্যাপক হলেও ভাষার কথা এখানে বলা যায় একেক কালে ভাষার বিধানও পরিবর্তনযোগ্য। কাল অগ্রসরমান সে চলছেই। ক্রমে ভাষাও কালে কালে তার নিজস্ব গতিপথে এগিয়ে যাচ্ছে যাবেও।
আমরা যদি বেশি দূরে নয় মাইকেলের যুগে ফিরে তাকাই তাহলে কি দেখি? মোর, মোদের, তব, যেথা, হেথা, গাহি এসব অবলীলায় গ্রহনযোগ্যতা পেতে পেতে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল হয়ে ধেয়ে আসলো হাল আমলে। এখন কখনো কখনো এসব শব্দ হাসির উদ্রেক করে কবিতা পাঠের সময়। অথচ রবীন্দ্রযুগে এই শব্দগুলোই ছিলো অত্যাধুনিক। এখন এই অত্যাধুনিকতা কি ছাড়িয়ে যাচ্ছে না? ৩০০০ সালে আজকের কোন কোন শব্দও যে সেকালের কাছে হাসির খোরাক হবে না তাকি এখনই বলা যায়? ভাষা সাহিত্য তাই সর্বকালেই পরিবর্তনের পথে হাঁটে। সেটি কোন পথ সেটা সেই পথই নির্দেশনা দেবে। এভাবেই ভাষা যুগে যুগে কালে তার নিজস্ব অবস্থান পাল্টে নিচ্ছে।
তাই বলে মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়া যায় নাÑ বনধ ঘোষনা করা যায় না এটি চলমান চলতেই থাকবে। যে যার মুখের ভাষায় কথা বলবেযে ভাবে বংশপরম্পরায় সে চলে এসেছে। গায়ের জোওে অন্যভাষা তার মুখ দিয়ে বের করে আনার কোন সুযোগ নেই। আমাদের দেশে বর্বর পাকিস্তানীরা এই অশুভ কাজটি করেছিলো তাদের চিরাচরিত ডান্ডাবাজির জোরে। অবশ্য এর পরবর্তীতে তারা আরো জঘন্যতম কাজটিও করতে পিছপা হয়নি। আপাদমস্তক মুসলমানের বেশভূষায় থেকেও তারা নিরীহ মুসলমানের উপর একাত্তরে ঝাপিয়ে পড়তে দ্বিধা করেনি। এটা কোন মুসলমানিত্ব তা তারাই ভালো জানে। তারা তাদের মুখের ভাষা যা আমাদের কাছে দুর্বোধ্য তাই গায়ের জোওে চাপিয়ে দিতে যাচ্ছিলো আমাদের উপর। বৃটিশ খেদাও আন্দালনের একজন ডাকসাইটে নেতা হয়েও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কিভাবে বলতে পারলেনÑ
‘ উর্দু এন্ড উর্দু শ্যাল বি দ্য ষ্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ অব পাকিস্তান!’
তার মগজে কি এই ধারনা একবারও হয়নি তিনি যে দেশেরÑ যে জাতির পিতা সেই দেশের লোকসংখ্যা কতো? যেখানে বসে তিনি উর্দু মাতৃভাষা করার ঘোষনা করছেন সেখানে কয়জন লোক উর্দুতে কথা বলে? তিনি এতো তীক্ষè ধী সম্পন্ন ( যার জন্য তাকে কায়েদে আজম বলা হতো) নেতা হয়েও কি এটা বোঝেননি যে বন্দুকের নল দিয়ে মা ডাকানো যায় না। তিনি কি জানতেন না এইভাবে মানুষকে মা ডাকা বন্ধ করা যায় না। তিনি তো তখন আমাদের সবার জাতির পিতা ছিলেন। আমরা কি সবাই তা মেনেছিলাম?
মানি আর না মানি তিনি পাকিস্তান জাতির ‘জাতির পিতা’ তো ছিলেন। কাজটি কি জাতির পিতাসুলভ ছিলো? দুদিন পর এই কুকাজের জন্য তার জাতির পিতাগিরি যে লাটে উঠবে এটা কি তিনি তখন অনুধাবন করেননি? জিন্নার সামনেই তো ফুঁসে ওঠে ভাষা মতিন সহ উপস্থিত সবাই ‘নো,নো,নোÑ’
এটাও তো মেনে নিতে পারতেন জিন্না! মানেননি। চলে গেলেন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। জাতির পিতা তো নয়ইÑ জাতিই চলে গেলো হাত ফস্কে অন্যখানে! গায়ের জোরে কিছু করতে চাইলে তার পরিনতি এমনই হয়! তখন যদি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট থাকতেন মওলানা ভাসানী কিংবা শেখ মুজিব আর তারা কেউ যদি ঘোষনা দিতেন বাংলাই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা! তখন কি হতো পাকিস্তানে? বসে বসে তখন উর্দুওয়ালা পশ্চিম পাকিস্তানীরা কি আঙ্গুল চুষতো? তবে আশ্বস্থির কথা গনমানুষের জন্য রাজনীতি করা মওলানা ভাসানী কিংবা শেখ মুজিব এই ধরনের কুকাজ কখনো করতে যেতেন না। সর্বশেষ সময়েও জনদরদী শেখ মুজিব পাকিস্তান ভাঙতে চাননি। যদিও কাগমারীতে ভাসানী সহ্য করতে পারেননি। তিনি বলেই ফেলেছিলেন। শেখ মুজিব চেয়েছিলেন ভোটের মাধ্যমে যে ফলাফল আসবে তার মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানের রাস্ট্রপ্রধান হয়ে সাধারন মানুষকে মূল্যায়ন করবেন বাঙ্গালীর হৃত অধিকার প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করবেন। নিজেদের প্রাপ্য হিস্যা আদায় করবেন। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানীরা বাঙ্গালীদের দ্বারা শাসিত হবে এটা তারা মেনে নিতে পারেনি। শেখ মুজিব অর্থ্যাৎ একজন বাঙ্গালী তাদের শাষন করবে? আর এটাও তাদের মেনে নিতে হবে?
চালালো ষ্টীম রোলার। পরিনতি হলো ভয়াবহ। তবে একটা কথা ঠিক পাকিস্তানীদের এই কুমনোবৃত্তি ও পাশবিক কর্মযজ্ঞ জাগ্রত না হলে আমরা হয়তো আজো পরাধীনই রয়ে যেতাম। আমাদের সর্বস্ব ওরা শুষে নিতো। এদিক দিয়ে আমাদের পাকিস্তানের কাছে ‘কৃতজ্ঞ’ থাকা উচিৎ বৈকি!
আসলে সেই জিন্নার সামনে নো নো নো বলে প্রতিবাদ জানানোর পথ ধরে তখনই রচিত হয়েছে অবহেলিত নিষ্পেষিত বাঙ্গালীর মনে স্বাধীনতার আঁছোয়া রক্তগোলাপ যা ছুঁয়ে এনে তুলে দিয়েছিলেন শেখ মুজিব নামের সেই বজ্রকন্ঠ!
তাই বাঙ্গালীর স্বাধীনতার ইতিহাস অতি সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয় ‘ভাষা থেকে স্বাধীনতা!’
সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা এই যে বাংলাদেশের মানুষ যাদের জন্য নিজেদের মাতৃভাষা হারাতে বসেছিলো, যাঁরা বাঙ্গালীর মুখের ভাষা কেড়ে নেবার জন্যে রাজপথে ছাত্রজনতার উপর গুলি চালিয়েছিলো তিন দশকের মধ্যে তাদের অশুভ খপ্পড় থেকে আমরা বেরিয়ে এসে স্বাধীন হই। আবার এই স্বাধীনতার তিন দশকের মধ্যে আমরা যখন আমাদের মাতৃভাষাকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষমতা অর্জন করি তখন সেই বর্বর পাকিস্তান আন্তর্জাতিক এই মাতৃভাষাকে সমর্থন করে প্রস্তাবে সায় দিয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়। সেলুকাস আর কাকে বলে! এই ক্রেডিটও আমাদের।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আর ২০০০ সালের ২১ ফেব্র“য়ারীর এখানেই ব্যাবধান। একটি শোকের অগ্নি দহনে পুড়ে পুড়ে খাক হওয়া আর অপরটি এখান থেকেই জন্ম নেয়া বিশাল উচ্ছ¡াস আর চোখ জুড়ানো আনন্দ গাঁথার মঞ্জুল অবগাহন! কষ্টের ভেতর থেকে জন্ম নেয়া সুখের সংজ্ঞার তৃপ্তিই অন্যরকম।
সেই ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে হে মার্কেটে শ্রমিকদের আটঘন্টা কাজের দাবীতে করা আন্দোলনে যেভাবে গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিলো ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের দেশেও মাতৃভাষায় কথা বলার দাবীতে আন্দোলনরত সাধারন ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ সংঘঠিত হয়। ১৮৮৬ সালের আন্দোলনে রক্তের দাগের উপর গড়ে ওঠে মে দিবস আর ১৯৫২ সালের আন্দোলনে রক্তের দাগের উপর জন্ম নেয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একটি ১ লা মে অপরটি ২১ ফেব্র“য়ারী। দুটিই ইতিহাসের ‘রেড মার্কিং ডে।’
ধরা যাক আমার হাতে আমার কলম। আমার কলম দিয়ে তো আমারই লেখার কথা। যদি একজন এসে আমার কলম কেড়ে নিতে চায় স্বভাবতই তো আমি বাঁধা দেবো। আমার মুখের ভাষা কেড়ে নিতে যারা চেয়েছিলো তাদের আমরা প্রতিহত করেছি বলেই আজ আমরা কথা বলতে পারছি । আমাদের কথা বলায় কেউ আমাদের আর বাঁধা দিতে আসবে না। বাঁধা দিতে আসা তো দুরের কথাÑ এখন একটি দিনে এই গ্রহে শুধু বাংলার নামই উচ্চারিত হবে। মূলত সালাম বরকতের রক্তের ঋণ শোধের সত্য গল্পটির স্বার্থকতা এখানেই।
একুশের শিক্ষা এমনই।
এদেশের মূল শিক্ষাই তাই একুশ।
Head Office :
2152 – B, Westchester Ave,
Bronx, New York 10462
United States Of America.
Tel : 347 656 4623 (News), 718 823 7535 (Office), 929 261 8340 (CEO), 718 823 7538 (Fax).
Email :
report.banglanewsus@gmail.com (News),
riyahdahad@banglanewsus.com (Editorial)
info@banglanewsus.com (Advertisement)
ceo@banglanewsus.com (Event And Others).
First Fully Online Daily For The Worldwide
South Asian Community Jointly Published From
United States Of America, Great Britain
And Canada On Be-Half Of
POSITIVE INTERNATIONAL INC
@ 2014-2020
Developed BY : positiveitusa.com
Design and developed by positiveitusa.com