ঝিকরগাছা ৭শ’৫০ একর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত
০২ ফেব্রু ২০২০, ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ
বেনাপোল (যশোর) :
যশোরের ঝিকরগাছার বাঁকড়া অঞ্চলে বিল কচুয়ায় জলাবদ্ধতায় ৭শ’৫০ একর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অবৈধ ঘের কেটে জলাবদ্ধতা করে রেখেছে একটি প্রভাবশালি মহল। প্রশাসন জনপ্রতিনিধিদের কাছে একের পর এক ধর্ণা দিয়েও লাভ হচ্ছে না ভুক্তভোগি কৃষকদের।
অবৈধ ঘেরের পাশ দিয়ে খাল খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে কয়েক বার সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি। ঘের মালিকরা নিজ খরচে খাল খননের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করেনি। যশোরের বাঁকড়ায় বৃহৎ বিল, বিল কচুয়া। বিল বেষ্টিত হাজিরবাগ, বাঁকড়া ও শংকরপুর ইউনিয়নের দশটি গ্রামের বাসিন্দাদের কৃষি ,মাছ আহরন জীবন জীবিকার মাধ্যম ছিল এ বিল।
বিল ছিল দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত। বেত্রাবতি নদীর সাথে সংযোগ খাল ও কলারোয়া উপজেলার পাটুলিয়া কাজির হাট সড়কের কালভার্ট নির্মানের পর বিলের পানি কপোতাক্ষ ও বেত্রাবতি নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন হয়ে বিলের জমি আবাদী হয়ে উঠে। আমন ফসল শতভাগ না হলেও রোরো মৌসুমে শতভাগ ধান উৎপাদনের আওতায় আসে।
কয়েকটি অংশে বিলের বুকচিরে সড়ক নির্মন হলেও সংযোগ খালে যাতে পানি যেতে পারে তার জন্য ব্যায়বহুল কালভার্ট তৈরি করা হয়। কিন্তু বিগত ৬-৭ বছর একটি প্রভাবশালি মহল নিজ জমির সাথে খাস জমি দখল করে অপরিকল্পিত ঘের নির্মান করে দখলে নেয়। ঘের কাটার সময় কৃষকরা বলা সত্বেও পাশ দিয়ে সংযোগ খালে পানি যাওয়ার কোন ব্যাবস্থা রাখেনি।
বর্তমান কয়েক মৌসুম অনাবাদী হয়ে গেছে কৃষকের জমি। সরেজমিনে বিল কচুয়ায় যেয়ে দেখা গেছে, কয়েক বছরের ব্যাবধানে বিলে অপরিকল্পিত ঘেরের কারনে মানচিত্র বদলে গেছে। কয়েক হাজার একর জমি বেষ্টিত বিলের প্রায় ৫০ ভাগ দখল করে ঘের নির্মান করেছে প্রভাবশালি মহল।
বিষ্টপুর গ্রামের কৃষক লুৎফার রহমান, ওমর আলী, আব্দুল গণি, আঃ রাজ্জাক, আব্দুল মালেক, কামরুজ্জামান, খাটবাড়ীয়া গ্রামের বাবলুর রহমান, মফিজুর রহমান, জিয়াউর রহমান, জামসের আলী, হরিদ্রাপোতা গ্রামের হাশেম আলী, লিয়াকত হোসেন, ক্ষুদা বক্স, বাঁকড়ার আব্দুল কাদের, মফিজুর ইসলাম, আনিছুর জামান ও ওয়াহেদ আলী জানান ৭৫০ একর জমি জলাবদ্ধতার কারনে বোরো আবাদ হবে না।
গতবছর কৃষকদের চাপে প্রভাবশালি ঘের মালিকরা লিখিত ভাবে অঙ্গীকার করেছিল বিগত বৈশাখের ৩০ তারিখের মধ্যে খাল খনন করে পানি বেত্রাবতি সংযোগ খাল দিয়ে বের করবার ব্যাবস্থা করে দেব। সময় পার হলেও তার ব্যাবস্থা তারা করেনি। বাঁকড়া গন্দুর মোড় থেকে বড়খলসী নবনির্মিত পাকা সড়কের উত্তর প্রান্তে অপরিকল্পিত ঘের নির্মানের কারনে বিশাল জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে আছে।
সর্বাপেক্ষা বড় ক্ষতির মুখোমুখি দাড়িয়ে কাঁদছে হাজিরবাগ ইউপির বিষ্টুপুর মহেষপাড়া শংকরপুর ইউপির খাটবেড়িয়া হরিদ্রাপোতার কৃষকরা। বিগত ১৯ জানুয়ারী বাঁকড়ায় সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে বিল কচুয়া বেষ্টনি কয়েক গ্রামের শতাধিক কৃষক একযোগে স্থানীয় সংসদ সদস্যর নিকট বিষয়টি জানান। তিনি আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না বলে কৃষকরা জানিয়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার প্রতিনিধিদের পাঠান বাঁকড়া তদন্ত কেন্দ্রের আইসি ইন্সপেক্টর শেখ শাহিনুর কবীর, হাজিরবাগ ইউপির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু ও বাঁকড়া ইউপি চেয়ারম্যান নিছার আলিকে সাথে নিয়ে ঘের মালিকদের পানি সেচে দেয়ার জোর তাগাদা দিয়েছেন। কিন্তু কৃষকরা তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তারা দাবি করেছেন বেত্রাবতি বিলের সংযোগ খালের সাথে সংযোগ খাল খনন করবার।