মোঃ রায়হান উদ্দিন :– “মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে সময়ে যেন একটি স্নেহ করস্পর্শ তাহার ললাটে পৌঁছে- যেন একটিও করুনাদ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে এ জীবনের অন্ত হয়। মরিবার সময় যেন কাহারও একফোঁটা চোখের জল দেখিয়া সে মরিতে পারে।”
দেবদাসের মৃত্যু সম্পর্কে শরৎ বাবুর এই শেষ কথাগুলো পড়ে আমার মত অনেকের মনটা আদ্র হয়ে ওঠে নিশ্চয়ই।
আসলে মৃত্যু হলো জন্মের দায়। যে জন্ম গ্রহন করেছে সেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে, যে জন্ম গ্রহণ করে নাই, শুধুমাত্র তারই মরন হবে না।
শরৎবাবুর দেবদাসের মৃত্যুকে আমার আত্মহত্যা মনে হয়। দেবদাস চাইলে পার্বতী না হোক চন্দ্রমুখীর কোলে মাথা রেখে মরতে পারতো, এমন মৃত্যু নাও হতে পারতো।
বৈশ্বিক মহামারী করোনার এই নিদানকালে প্রতিদিনকার বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনায় আমার বারবার ‘দেবদাস’ শেষ কথা গুলোই মনে পড়ছে, শরৎবাবু যেন আজ থেকে একশো বিশ বছর আগে সেই ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে (যদিও প্রকাশকাল ১৯১৭) বর্তমান এই করোনা আক্রান্ত রোগীর মরণকালকেই মনে রেখেই দেবদাস উপন্যাসটির শেষ কটা লাইন লিখেছিলেন।
সত্যিকার অর্থে নিদানকালেই মানুষের আসল পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ে, সম্পর্কগুলোর সত্যিকারের শক্তি বোঝা যায়, কে কতটা মানবিক তাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
স্বামী-সন্তান স্ত্রী কিংবা মাকে গোপনে বনে ফেলে পালিয়েছে, স্বামী করোনা আক্রান্ত সন্দেহে স্ত্রী ও সন্তান বাসায় ঢুকতে দিচ্ছে না, লাশ পড়ে আছে কেউ দাফন করছে না, পরিবারের করোনা আক্রান্ত সদস্যকে ফেলে বাসার বাকী সদস্যরা পালিয়ে গেছে, করোনায় মরেছে সন্দেহে লাশ দাফনে বাধা প্রদান করছে- এমন খবর এখন আর আমাদের বিচলিত করে না, কেমন যেন গা সহা হয়ে গেছে। অথচ, আমরা সৃষ্টির সেরা জীব, এতদিন নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, মানুষের প্রতি দয়া ও দরদ এবং মানবিক মূল্যবোধের কতই না বড়াই করে বেড়িয়েছি।
লেখকঃ সভাপতি, হিতৈষী ফাউন্ডেশন, চুনারুঘাট।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।