মনসুর আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ওয়াহেদ আলী ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রায় ২ মাস যবত। এই খবর জানেন না চুনারুঘাটের সাংবাদিক নেতারা। গতকাল (০৮ মে) যখন যৌনকর্মী সহ চুনারুঘাট হাসপাতালের ডাক্তার মোমিন জনতার হাতে আটক এবং বড় অংকের টাকার বিনিময়ে রফাদফার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও খবরের কাগজে প্রকাশ হয়, তখনই আলোচনায় আসে সাংবাদিক ওয়াহেদ আলীর বিষয়টি। গত ১৮ ডিসেম্বর ওয়াহেদ আলী তার গুরুতর অসুস্থ ভাগীনা তানিম মিয়া কে নিয়ে চুনারুঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। তখন তানিম শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছিল ঠিকই কিন্তু নড়াচড়া করছিল না। ইমার্জেন্সিতে কোন ডাক্তার না পেয়ে তিনি ক্ষেপে যান। পরে কয়েকবার ফোন করার পরে কর্তব্যরত ডাক্তার রাসমিনা আক্তার পলি আসেন। তখন ডাঃ রাসমিন পাশেই একটি ক্লিনিকে রোগী দেখছিলেন। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে ডাঃ রাসমিন চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় সাংবাদিক ওয়াহেদ আলী উত্তেজিত হয়ে যান। এবং দু’জনের মধ্যে বাকবিতন্ডা দেখা দিলে পাশে থাকা কয়েকজন নার্স ও বয় এগিয়ে এসে সমাধান করার চেষ্টা করেন। জানা যায়, এর একটু পরই ঘটনা স্থলে উপস্থিত হন চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোজাম্মেল হোসেন। তিনি বিষয়টি সমাধান করে দেন। এবং সাংবাদিক ওয়াহেদ আলী তার কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি সমাধান হলেও একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে ডাঃ রাসমিন আক্তার উৎসাহিত হয়ে ওয়াহেদ আলীর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অযুহাত দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। আর এই মামলায় গত ১৩ মার্চ আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হাজির হলে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সমাজকর্মী জানান, চুনারুঘাট উপজেলায় সাংবাদিক দের ৪ টি সংগঠন থাকলেও তাদের মধ্যে কোন ঐক্য দেখা যায় না। উনারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি হিংস্র মনোভাব প্রকাশ করে থাকেন। যে কারণে চুনারুঘাটে সাংবাদিক প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হলেও কোন বিচার হচ্ছে না।
চুনারুঘাট প্রেসক্লাবে সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন লিটন মুঠোফোনে জানান, আমার পক্ষ থেকে বিষয়টি সামাজিক ভাবে সমাধানের চেষ্টা করলেও সমাধান করা সম্ভব হয়নি। আমি এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় হতাশ হয়েছি। এবং সহকর্মীর মুক্তি দাবি করছি।
এবিষয়ে মুঠোফোনে চুনারুঘাট রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, সাংবাদিক ওয়াহেদ আলী চুনারুঘাট সাংবাদিক সমিতির সভাপতি। তিনি চুনারুঘাট হাসপাতালে তার ভাগ্নেকে চিকিৎসা করাতে যান। এ সময় ডাঃ রাসমিনা একটি ক্লিনিকে রোগী দেখছিলেন। সাংবাদিকের ফোন পেয়ে তিনি হাসপাতালে এসে তিনি সাংবাদিকের সাথে তর্কে লিপ্ত হন। এ সময় উভয়ের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এতে ডাঃ রাসমিনা ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। রাসমিনা চুনারুঘাটের বউ।সেই প্রভাবে সাংবাদিক ওয়াহেদ কে তিনি ফাঁসিয়ে দেন। আমি সাংবাদিক ওয়াহিদ আলীর উপর দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা ও তার মুক্তি দাবী করছি।
মুঠোফোনে চুনারুঘাট রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তর প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ জানান, বিষয়টি ঘরোয়া আলোচনায় সমাধানের আন্তরিকতা ও চেষ্টা আমার পক্ষ থেকে কম ছিলোনা। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে ডাক্তার রাসমিন আক্তার কে বুঝানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমি এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাংবাদিক হয়রানির নিন্দা জানাই।
চুনারুঘাট সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুনিরুজ্জামান তাহের মুঠোফোনে জানান, পাহাড়, জঙ্গল, চা বাগান অধ্যুষিত চুনারুঘাট উপজেলার প্রায় ৪ লক্ষ্য মানুষের চিকিৎসা কেন্দ্র চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জরুরী বিভাগে অধিকাংশ সময় চিকিৎসক পাওয়া যায় না। তারই প্রতিবাদ করেছিলেন সাংবাদিক ওয়াহিদ আলী। প্রতিবাদ করায় মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মুলক মামলায় এখন জেলে তিনি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুর্নীতির কোন শেষ নেই।দীর্ঘদিন যাবত কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারী একই স্থানে থাকায় দূর্নীতি আরো বেড়ে যায়। দেখার যেন কেউ নেই। আমি মনে করি সাংবাদিক, সুশীলসমাজ, জনপ্রতিনিধিগন, সম্মিলিত ভাবে আন্তরিকতার সাথে হাসপাতালের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা দরকার।
চুনারুঘাট সাংবাদিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক রাজু জানান, এতদিন পর্যন্ত আমি জানতাম না আমাদের সহকর্মী সাংবাদিক ওয়াহেদ আলী কারাগারে। আমরা সাংগঠনিক ভাবে তার মুক্তির জন্য কাজ করে যাব। এবং উপজেলা প্রশাসন বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করবো।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।