শাহজাদপুর বাঁধার মুখে জমিতে নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ৩:৩৬, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

শাহজাদপুর বাঁধার মুখে জমিতে নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান

ADMIN, USA
প্রকাশিত মে ৩০, ২০২০
শাহজাদপুর বাঁধার মুখে জমিতে নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান

শাহজাদপুর(সিরাজগঞ্জ) :
প্রতিপক্ষের বাঁধার মুখে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের পাড়কোলা গ্রামের প্রায় ১৫০ বিঘা জমির পাকা ধান কৃষকরা কাটতে পারছেনা। ফলে ওই সব জমির ধান জমিতেই ঝড়ে পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সময় মত এ সব পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারলে এ গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক কৃষকের ঘরে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে চরম খাদ্যাভাব দেখা দিবে। পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হবে। অপর দিকে ওই গ্রামে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প থাকার পরেও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর রহমান পিযুষ গ্রুপের লোকজনের জমি থেকে বর্তমান কাউন্সিলর বেলাল হোসেন গ্রুপের লোকজনের বিরুদ্ধে জমি থেকে পাকা ধান কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শাহজাদপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর রহমান পিযুষের স্ত্রী পলি খাতুন সহ ওই গ্রামের অর্ধশতাধিক নারী শুক্রবার সকালে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে ওই গ্রামের পলি খাতুন,শেফালি খাতুন,বিলকিস বেগম,সাজেদা বেগম ও সুফিয়া বেগম বলেন,আমাদের অধিকাংশ জমির ধান পেকে গেছে। পাকা ধান জমিতে ঝড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। অনেক জমির পাকা ধানে গাছ গজিয়ে গেছে। এ ছাড়া ঘুর্ণিঝড় আমপানের প্রভাবে এ এলাকায় প্রচুর ঝড় ও বৃষ্টি হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে নিচু জমির পাকা ধান পানিতে ডুবে গেছে। ২/১ দিনের মধ্যে এ সব জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারলে জমিতেই পচে নষ্ট হয়ে যাবে। তারা আরো বলেন,এ পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারলে আমাদের সারা বছর ছোট ছেট ছেলে মেয়ে নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। তারা বলেন,বর্তমান কাউন্সিলর বেলাল গ্রুপের কৃষক আলী আজগর খুন হওয়ার পর থেকে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প থাকা সত্বেও দিনের বেলায়ই তারা জমি থেকে পাকা ধান কেটে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সেচযন্ত্র, টিউবলেয় ও আসবাবপত্র চুরির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের লোকজন জমিতে পাকা ধান কাটকে গেলে তারা বাধা দিয়ে হামলা করছে। প্রাণ ভয়ে আমরা জমিতে যেতে পারছি না। অপরদিকে আমাদের পরিবারের সকল পুরুষ মানুষ হামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে রয়েছে। এতে আমাদের সংসারে আয় উপার্জন বন্ধ হয়ে আমরা চরম অর্থ কষ্টে পড়েছি। এর উপর জমি থেকে একের পর এক পাকা ধান লুট হয়ে যাচ্ছে। এ ধান গেলে সারা বছর খাব কি। আমাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। তাই মানবিক কারণেই এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অপরদিকে পাড়কোলা গ্রামের সানোয়ার হোসেনের স্ত্রী ময়না খাতুন বলেন,কাউন্সিলর বেলাল হোসেনের লোকজন বৃহস্পতিবার সকালে তাদের ১ বিঘা জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে গেছে। পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বেলাল হোসেন তাদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,তাদের জমির কোন ধান কেটে নেওয়া হয়নি। তারা নিজেরাই কেটে নিয়ে আমাদের নামে মিথ্যা দোষারোপ করছে। ফলে ধান কাটা শ্রমিকদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা নিয়ে ও ভিডিও সাক্ষাৎকার নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে ধান কেটে নিয়ে যেতে বলেছি। তিনি আরো বলে এটা না হলে তারা নিজেরাই ধান কেটে নিয়ে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন,তবে আলী আজগর হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত কোন আসামীকে ধান কাটতে দেওয়া হবে না। তারা শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে নিলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আসামীরা ধান কাটতে এলে তাদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হবে। সেচযন্ত্র চুরির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন,নিজেরাই খুলে নিয়ে আমাদের নামে মিথ্যা দোষারোপ করছে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তারা আবার সেচযন্ত্র জমিতে স্থাপন করে চাষাবাদ করছে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন,ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমার কাছে এ পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য,আধিপত্য বিস্তার ও একটি পুকুরের মাছ বিষ দিয়ে মেরে ফেলাকে কেন্দ্র করে গত ৩ মে শাহজাদপুর পৌরসভার ৫নং ওযার্ডের কাউন্সিলন বেলাল হোসেন গ্রুপের সাথে ও সাবেক কাউন্সিলর পীযুষ গ্রুপের রক্তক্ষয়ী হামলা সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে বেলাল গ্রুপের আলী আজগার প্রামাণিক (৬৫) প্রতিপক্ষের ফালার আঘাতে নিহত হয়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই গ্রামে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। তারপরেও হরহামেশাই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন আসামী পক্ষের লোকজনের জমি থেকে পাকা ধান কেটে লুট করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।