ডেস্ক রিপোর্ট, ইউএসঃ : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মার্চের শেষদিকে মারা যান নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি গৃহবধূ তিষা চাকলাদার। রেখে যান ৪, ১১ এবং ১২ বছর বয়সী তিন সন্তান। নাগরিকত্বের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় এখনো পাওয়া যায়নি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে তিষার মৃত্যুর সার্টিফিকেট। তার স্বামী বোরহানউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সন্তানদের দেখভালের জন্য নিজে কোনও কাজ করতে যেতে পারছি না। অ্যাসাইলাম মঞ্জুর না হওয়ায় ফেডারেল, স্টেট অথবা সিটির কোনও অর্থ সহায়তা পাচ্ছি না। অথচ সিটি মেয়র কয়েক সপ্তাহ আগে ঘোষণা দিয়েছেন যে, অভিবাসনের মর্যাদা নেই এমন লোকজনকে মাথাপিছু এক হাজার ডলার করে দেওয়া হবে।”
বোরহানউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলা সময় তার পাশেই ছিলেন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময়ে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে নিরলস কাজ করে যাওয়া বোর্ড অব ইলেকশনের কমিশনার ও ‘সাউথ এশিয়ান ফান্ড ফর এডুকেশন, স্কলারশিপ অ্যান্ড ট্রেনিং’ (স্যাফেস্ট) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রেসিডেন্ট মাজেদা এ উদ্দিন।
তিনি জানান, কেবল নিউ ইয়র্ক সিটিতেই করোনাভাইরাসে ২১৪ জন প্রবাসী বাংলাদেশি আক্রান্ত হন। মারা গেছেন ২৭ জন। আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশিদের মধ্যে তিষার মত কাগজপত্রহীন বাংলাদেশির সংখ্যা ৫১।
মাজেদা বলেন, “করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া কাগজপত্রহীন এসব ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা সবচেয়ে কষ্টে আছেন। বৈধ কাগজ না থাকায় করোনা-মুক্ত সময়ে তারা কাজ পাবেন, এমন কোনও নিশ্চয়তা এখন আর নেই। কারণ, সবাই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রেস্টুরেন্ট, ব্যবসা পরিচালনা করতে কর্মচারীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে।”
মাজেদা আরও বলেন, “ইতোমধ্যে আমি কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং- এর সাথে দুর্দশায় পতিত কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের জন্য কিছু করার অনুরোধ রেখেছি। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ যদি করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সার্টিফিকেট ইস্যু না করে তাহলে কোনকিছুই সম্ভব হবে না।”
কমিউনিটিতে সেবামূলক কাজ করার জন্য পরিচিত-মুখ মাজেদা বলেন, “আমার কাছেই ৯০০ জন প্রবাসীর তালিকা রয়েছে, যারা করোনাভাইরাসে বন্দিজীবনে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন।”
নিউ ইয়র্ক সিটিতে বসবাসরত কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা বছরে প্রায় ৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার কর দিলেও ক্রান্তিকালে কোনও সহযোগিতা পাননি বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
গত এপ্রিল মাসে নিউ ইয়র্ক সিটিতে দিনে গড়ে আটশরও বেশি মৃত্যু হয় কোভিড-১৯ এ। সে সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে নিরলস কাজ করে গেছেন মাজেদা।
তিনি বলেন, “অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি নারী নিঃসঙ্গ কিংবা স্বামীর সাথে ঝগড়ার প্রেক্ষিতে আগে থেকেই সিটির আশ্রয় কেন্দ্রে বাস করছিলেন। এদের অনেকেরই হাসপাতালে ফোন করার মত অভিজ্ঞতা বা সুযোগ ছিল না।”
“এদের কেউ কেউ আমার কাছে সংবাদ পাঠানোর পর আমি হাসপাতালে ফোন করি। মে মাস পর্যন্ত হাসপাতালে সিট পাওয়া কঠিন একটি বিড়ম্বনা ছিল।”
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ ইয়র্কে বৈধতার কাগজপত্রহীন প্রবাসীদের মধ্যেই ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছে। কোনও কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণদের গুরুত্ব দিয়েও ত্রাণ সহায়তাসহ অন্যান্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধান অনুযায়ী এরকম পাঁচশরও বেশি ব্যক্তি ও সংগঠন নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন জায়গায় করোনাভাইরাস মহামারীর ভেতর এখনো প্রবাসীদের সহায়তা করে যাচ্ছে।
সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংগঠন ও ব্যক্তির তালিকা দেওয়া হলো-
বাংলাদেশ সোসাইটি
নিউ ইয়র্ক অঞ্চলের দেড়শরও বেশি আঞ্চলিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’। এর ভোটার সংখ্যা সাড়ে ২৭ হাজার। প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতি লালন এবং নতুন প্রজন্মে বিকাশের সংকল্পে ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক সেবামূলক এই সংগঠনের কর্মকর্তারা নিউ ইয়র্কে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পরই একটি বৈঠক করেন।
সেখানে কমিটির সবাই সিদ্ধান্ত নেন যে, করোনাভাইরাসের সময়ে আক্রান্তদের সেবাদান, হাসপাতালে ভর্তির পর খোঁজ-খবর নেয়া, মারা গেলে সেই লাশ দাফনের যাবতীয় ব্যবস্থায় যতটা সম্ভব সহযোগিতা দেওয়া হবে।
মার্চের মাঝামাঝির সেই সভার স্মৃতিচারণকালে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার বলেন, “অসুস্থ মানুষদের খোঁজ-খবর নেওয়ার সময়েই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আমাদের প্রেসিডেন্ট কামাল আহমেদ এবং নির্বাহী সদস্য বাকির আযাদ। তবু আমরা থামিনি। সেক্রেটারি রুহুল আমিন সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলীসহ সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহায়তা দিচ্ছি।”
“অন্তত ১৩৫ জনকে দাফনের ব্যবস্থা করেছি সোসাইটির কেনা কবরে। এর মধ্যে একশটি বিনামূল্যে দিতে হয়েছে। ৩৫টির মূল্য এক হাজার ডলারের জায়গায় ৫০০ ডলার করে নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি স্বজনহীন অথবা স্বজনেরাও সংকটে থাকা পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে সোসাইটির ফান্ড থেকে। এই সিটিতে এ যাবত কমপক্ষে ২৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা হয় সামর্থ্যবানদের নিজস্ব অর্থে অথবা নিজ নিজ এলাকার সংগঠনের মাধ্যমে।”
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার
নিউ ইয়র্কে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে পরিবারের আকার অনুযায়ী ১০০ থেকে ৫০০ ডলার পর্যন্ত নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। পরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয়।
সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, “যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই কিংবা করোনা তাণ্ডবের অল্প কিছুদিন আগে অভিবাসনের মর্যাদা নিয়ে এসেছেন, তারা ফেডারেল সরকারের কোন সহায়তাই পাচ্ছেন না। মূলত তাদেরকে আমরা এখন অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তারা যেন জেএমসির সাথে যোগাযোগ করেন।”
পিপল এন টেক
আইটি সেক্টরে প্রবাসী শিক্ষিত বাংলাদেশিদের চাকরির উপযোগী কোর্স করানোর প্রতিষ্ঠান ‘পিপল এন টেক ইন্সটিটিউট’র সহযোগী ‘পিপল এন টেক ফাউন্ডেশন’র পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসে দুর্দশাগ্রস্তদের নিয়মিত অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে ।
এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও আবু হানিপ বলেন, “করোনাভাইরাসে অনেকেই কষ্টে পড়েছেন। সবার কাছে যাওয়া সম্ভব না হলেও সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি। নিউ ইয়র্ক অঞ্চলে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করেছেন এমন কয়েকটি সংগঠনের পাশে ছিলাম আমরা। তবে দুর্দশা এখনও কাটেনি।”
তিনি বলেন, “লকডাউনের শিথিলতা আসায় কোর্স আবার চালু করবো। তবে ফি-র ক্ষেত্রেও বিশেষ ছাড়ের কথা ভাবছি।”
জাকারিয়া চৌধুরী
নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ফোবানার নির্বাহী কমিটির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী এ দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণে জোর দেন করোনাভাইরাসে দুর্দশায় পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায়।
অন্য অসহায় প্রবাসীদের মত বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা যারা বয়সের কারণে অথবা করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় আইসোলেশনে ছিলেন, তাদের বাসায় খাদ্য-সামগ্রীর প্যাকেট পৌঁছে দিয়েছেন জাকারিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন স্বেচ্ছাসেবক দল।
তিনি জানান, নিউ ইয়র্কে আড়াইশরও বেশি এবং নিউ জার্সিতে দুইশ-রও বেশি পরিবারের মধ্যে ফোবানার গ্রোসারি প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
ফোবানার পক্ষ থেকে ডালাস, আটলান্টাতেও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল ফোবানা, যা প্রবাসীদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।
মোহাম্মদ এন মজুমদার
ব্রঙ্কস এলাকায় প্রায় দুই হাজার দুস্থ পরিবারের মধ্যে খাদ্য-সামগ্রী, নগদ অর্থ বিতরণের পাশাপাশি বিনামূল্যে ৫ হাজার মাস্ক বিতরণ করেছেন কমিউনিটি লিডার ও আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদারের নেতৃত্বাধীন স্বেচ্ছাসেবক দল। মজুমদার ফাউন্ডেশন, বিএসিসি এবং ইকনা রিলিফ যৌথভাবে এই কর্মসূচি পালন করেছে।
হাসানুজ্জামান হাসান
নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম হাসানুজ্জামান হাসান নিউ ইয়র্ক এবং বাংলাদেশের নীলফামারি ও রংপুর অঞ্চলের হাজারেরও বেশি অসহায় মানুষকে নগদ অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এটি আমার নৈতিকতার পরিপূরক বলে সাধ্যমত এমন সহায়তা অব্যাহত রেখেছি।”
অধ্যাপক দেলোয়ার
নির্মাণ ব্যবসায়ী ও সমাজ-সংগঠক অধ্যাপক দেলোয়ার প্রবাসের পাশাপাশি দেশে নিজ এলাকায় করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অনেকের কাছেই নগদ অর্থ সহায়তার পাশাপাশি দৈনন্দিন খাদ্য-সামগ্রীর ব্যবস্থা করেছেন।
মঈন চৌধুরী
কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা এবং ইমিগ্রেশন বিষয়ক আইনজীবী মঈন চৌধুরী সারাবছরের চেয়ে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন এবং এখনও সহায়তা করে যাচ্ছেন। দেশ ও প্রবাসে বারশরও বেশি দুর্দশাকবলিত মানুষকে তিনি সহায়তা দিয়েছেন বলে জানান।
নিউ ইয়র্কের বেশ কয়েকটি সংগঠনের ত্রাণ তৎপরতায় তিনি জড়িত রয়েছেন। চলতি সপ্তাহের রোববার জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় দাঁড়িয়ে তিনি মাস্ক বিতরণ করেন।
আ. কাদের মিয়া
নির্মাণ ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক আ. কাদের মিয়া রাজনৈতিক দলের ব্যানারের বাইরে মানুষের পাশে ছিলেন। পরিচিতজনদের মধ্যে যারা খুব অভাবে পড়েছিলেন, তারা ছিলেন তার লক্ষ্য। কারণ, এমন লোকজনের পক্ষে কারো কাছে হাত-পাতা সম্ভব হয় না। সন্দ্বীপে নিজ এলাকায় অসহায় মানুষের জন্য তার পাঠানো অর্থে ত্রাণ-সহায়তা চলছে।
কাজী নয়ন
বাংলাদেশ সোসাইটির ঝুলে থাকা নির্বাচনে একটি প্যানেলের সভাপতি-প্রার্থী কাজী নয়ন নিউ ইয়র্কে অন্তত ৮৫জন কাগজপত্রহীন বাংলাদেশির পাশে দাঁড়িয়েছেন ব্যক্তিগতভাবে। এর বাইরে তার প্যানেলের পক্ষ থেকে পরিচালিত ত্রাণ সহায়তায় জড়িত ছিলেন। চট্টগ্রাম এবং মিরসরাইয়ে নিজ এলাকার অভাবী মানুষের জন্যে প্রতিনিয়ত তিনি অর্থ সহায়তা পাঠাচ্ছেন।
গিয়াস আহমেদ
কমিউনিটি লিডার ও বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ সাংগঠনিক ব্যানারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেককে সহায়তা দিয়েছেন। এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ
ত্রাণ বিতরণে রোজার পুরো মাসে বেশি তৎপর ছিল কমিউনিটির অধিকাংশ সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগ।
ঈদের পর করোনাভাইরাসের তাণ্ডব কিছুটা কমলেও কাগজপত্রহীন প্রবাসীদের কর্মসংস্থান হয়নি। এমন প্রবাসীদের মধ্যে দুই দফায় মিসবাহ আহমেদ এবং ফরিদ আলমের গড়া যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের নেতা-কর্মীরা বিপুল পরিমাণ খাদ্য-সামগ্রী এবং স্বাস্থ্যবিধির পরিপূরক মাস্ক, গ্লাভস ইত্যাদি বিতরণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র যুবদল
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি না থাকায় কয়েকখণ্ডে বিভক্ত সংগঠনটির যুব ফ্রন্টও অনৈক্য রয়েছে। তবে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় সব পক্ষ থেকেই ত্রাণ তৎপরতা চালানো হয়েছে। এর বাইরে ব্যক্তি উদ্যোগে যুবনেতা এম এ বাতিন এবং জাকির এইচ চৌধুরী অনেক প্রবাসীকে সাধ্যমত সহায়তা দিয়েছেন।
আবু তাহের
যুক্তরাষ্ট্র জাসাসের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় জাসাসের আন্তর্জাতিক সম্পাদক আবু তাহের প্রবাসের পাশাপাশি নিজ এলাকা সন্দ্বীপের অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করেছেন ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে।
ফাহাদ সোলায়মান
মূলধারার অন্যতম সংগঠক এবং জেবিবি-এর নেতা ফাহাদ সোলায়মান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর সময়েই মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন। এরপর জ্যাকসন হাইটস এলাকার স্টেট অ্যাসেম্বলি সদস্য ক্যাটালিনা ক্রুজকে সঙ্গে নিয়ে আড়াইশরও বেশি প্রবাসীর মধ্যে খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছেন। অনেকের বাসায়ও পৌঁছে দিয়েছেন নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিস।
ইন্ডিয়া হোম
নিউ ইয়র্কের প্রবীণ প্রবাসীদের জন্য কাজ করছে ‘ইন্ডিয়া হোম’, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই ৫৭৩ জন প্রবীণের মধ্যে নিয়মিত খাদ্য-সামগ্রী দিয়ে যাচ্ছে তারা। এগুলো সবার বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
এ সংস্থার প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সিলভিয়া শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সপ্তাহে তিনদিন করে তালিকাভুক্ত ১১০ জনের বাসায় গ্রোসারিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। এর বাইরে আরো ৪৬৫ জনের বাসায় পর্যায়ক্রমে খাদ্য-সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।”
“পাশাপাশি এসব প্রবীণরা যাতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে না পড়েন সেজন্য ঘরেই কম্পিউটার শেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যায়ামের দিক-নির্দেশাও দেওয়া হয় অনলাইনে। সিটিজেন হতে আগ্রহীদের বিস্তারিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই ভার্চুয়ালে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দেওয়া হয় প্রবীণদেরকে।”
সিলভিয়া আরও বলেন, “প্রতিদিনই তারা বাসায় ফোন করে জেনে নেন প্রবীণদের সর্বশেষ অবস্থা। ইতোমধ্যে ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে অন্তত: চারজনের নিশ্চিত মৃত্যু সংবাদ নথিভুক্ত হয়েছে। অনেকেই সুস্থ হয়েছেন। আবার কেউ কেউ চিকিৎসাধীন রয়েছে নিজ বাসায়। এসব প্রবীণের মধ্যে কাগজপত্রহীন রয়েছেন অনেকে। আমরা সব মানুষকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। একইসঙ্গে চলমান আদমশুমারীতেও সক্রিয় করছি প্রবীণদের।”
“তারা যাতে পরিচিতজনদের আদমশুমারীতে অংশ নেন সে চেষ্টাও রয়েছে। কারণ, ফেডারেল, স্টেট, সিটি প্রশাসন থেকে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার জন্য আদমশুমারীতে অংশগ্রহণের বিকল্প নেই।”
খোরশেদ খন্দকার
ডেমক্র্যাটিক পার্টির সংগঠক খোরশেদ খন্দকার করোনাভাইরাসে আটকে ছিলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালিতে। গত মাসে বিশেষ ফ্লাইটে নিউ ইয়র্কে ফেরার আগে নিজ এলাকায় দুস্থদের মধ্যে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে। এছাড়া নিউ ইয়র্কে তিনি ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
অন্যান্য
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের সহায়তায় এগিয়ে আসা অন্যান্য সংগঠনগুলো হলো- জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন, বিয়ানিবাজার সমিতি, নোয়াখালী সোসাইটি, চট্টগ্রাম সমিতি, কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, হেল্পিং হ্যান্ড ফর চিটাগোনিয়ান ইনক, ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।
এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে কাজী আজম এবং ফিরোজ আহমেদ করোনাভাইরাস টেস্ট করার জন্য ভ্রাম্যমান ক্যাম্প স্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বিডিনিউজ
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।