মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বনাম শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থীতা ও পদোন্নতি - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ২:৫৫, ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বনাম শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থীতা ও পদোন্নতি

ADMIN, USA
প্রকাশিত আগস্ট ১৩, ২০২০
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বনাম শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থীতা ও পদোন্নতি
মোঃ আমিনুল ইসলাম বিএসসি (সম্মান) প্রথম শ্রেণি এমএসসি (গণিত) প্রথম শ্রেণি বিএড, ডিপিএড , সহকারী শিক্ষক, দামকুড়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পবা, রাজশাহী
 মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার, যা প্রশংসাযোগ্য। প্রাথমিক শিক্ষা ডিজিটালাইজেশনের চিন্তাভাবনা ও প্রয়োগ তার ভেতর অন্যতম। বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে ই-মনিটরিং সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসতে ইতোমধ্যেই অফিসারদের দেওয়া হয়েছে ট্যাব ও নেট সংযোগ। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন শুরু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এর ফলে শিক্ষকদের অংশগ্রহণে গতি আসবে বলে ধারণা করা যায়। সরকারের আরেকটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৩ হাজার ৬৮৯টি ল্যাপটপ এবং ২২ হাজারের বেশি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর বিতরণ করা হয়েছে এবং এটি চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যেই বিদ্যালয়গুলোতে নেট সংযোগের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে আইসিটি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষেই প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল ডিভাইস বিতরণ করা হবে। ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরিতে এসব কার্যক্রম বিশেষ ভূমিকা রাখবে। একটি বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এগুলোর প্রয়োজন আছে, তবে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক সুবিধা ও ভাগ্যোন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। নতুবা এটা হবে গাছের গোঁড়া কেটে মাথায় পানি ঢালার শামিল (It is like cutting the root of a tree and pouring water on the head)। যখন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মহিলা ও পুরুষদের ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হতো তখন ঠিকই সকল শিক্ষকদের অফিসার হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু আজ যখন মহিলা ও পরুষ উভয়ের নিয়োগের যোগ্যতা সমান করে কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রী করা হলো তখন আবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড কর্মকর্তা ও নন গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ (খসড়া) তে সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থীতা বাতিল করে শুধু প্রধান শিক্ষকদের একক সুবিধা রাখা হয়েছে যা মোটেও কাম্য নয়। কারণ বিদ্যালয় পর্যায়ে সহকারী শিক্ষকদের ভূমিকা প্রধান শিক্ষকের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এটা বিবেচনায় রেখে ১৯৮৫, ১৯৯৪ এবং ২০০৩ সালের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড কর্মকর্তা ও নন গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের অফিসার হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল। তাই হঠাৎ করে এই সুযোগ বাতিল না করে বর্তমান নিয়োগবিধিতেও বহাল রাখা অত্যন্ত জরুরী। কারণ সহকারী শিক্ষকদের বঞ্চিত করে কোনভাবেই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। পূর্বের নিয়োগবিধি গুলোতে শিক্ষকদের শুধু সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও) পদে বিভাগীয় প্রার্থীতা ছিলো। কিন্তু বর্তমানে বহু শিক্ষক রয়েছে যাদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সহ সিইনএড, ডিপিএড, বিএড ও এমএড ডিগ্রী রয়েছে। তাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ইউআরসি সহ. ইন্সট্রাক্টর, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর ও পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদেও চাকুরীর বয়সের শর্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় প্রার্থীতা ও পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবেই শিক্ষকদের হতাশা দূর হবে ও প্রাথমিক শিক্ষায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত কার্যক্রমে গতি আসবে। তাই অবিলম্বে সরাসরি নিয়োগ বাতিল করে শিক্ষকদের মধ্য থেকে শতভাগ বিভাগীয় প্রার্থীতা ও পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। এতে জুনিয়র শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থীতার মাধ্যমে অফিসার হবে ও সিনিয়ররা পদোন্নতির মাধ্যমে অফিসার হবে। অর্থাৎ একজন শিক্ষক দুভাবেই অফিসার হওয়ার সুযোগ পাবে। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষকদের হতাশা দূর হবে এবং শিক্ষকরা তাদের কাজের প্রতি আন্তরিক হবে। কথায় আছে কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয় (If you want to get something, you have to give something or Give to take)। আশাকরি বিষয়টি নিয়ে কতৃপক্ষ গভীরভাবে ভাববেন এবং শিক্ষকদের ভাগ্যোন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।