তমাল ভৌমিক, নওগাঁ :
প্লাস্টিক সামগ্রী আগ্রাসীতেও নওগাঁর ধামইরহাটে কুটির শিল্পের (বাঁশ ও বেত) মাধ্যমে বাড়তি আয় করে সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন আদিবাসিরা (ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী)। আদিবাসী সম্প্রদায়ের কারিগররা তাদের নিপুন হাতে মননশীলতা দিয়ে তৈরী করে থাকেন। গৃহস্থালী বাড়ীতে ধান মাড়াই কাজে সহযোগিতায় কুলা, ডালা, সাংসারিক কাজে খৈচালা, মাছ শিকারের খলইসহ প্রভৃতি করে থাকেন হস্তশিল্পীরা। বাজারে বিক্রি করে সামান্য টাকা পেয়েই খুশি তারা। এই শিল্পকে রক্ষা করতে দ্রুত সরকারি-বে-সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন মনে করছেন সংশ্লিষ্টারা।
জানা গেছে, বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে আঁকড়ে রেখেছেন নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আদিবাসী (খ্রিষ্টান) সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ। এই বাঁশ আর বেতই বর্তমানে তাদের জীবিকার প্রধান বাহক। কিন্তু আধুনিকতার ছোয়ায় দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। জীবন জীবিকার তাগিদে তবুও বাবা-দাদার এই পেশাকে এখনও ধরে রেখেছে কিছু সংখ্যক পরিবার।
সমাজে মাহালী সম্প্রদায় নামে পরিচিত বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের কদর আর তেমন নেই বললেই চলে। বাঁশ ও বেতের তৈরী এসব ঐতিহ্যবাহী উপকরণ হারাতে বসেছে। এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থলি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করলেও, এখন বিলুপ্তির পথে এ শিল্পটি। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র। এখন সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে চিরচেনা সেই চিত্র। এরপরেও ধামইরহাট উপজেলার আদিবাসী মাহালী নামে পরিচিত কিছু পরিবারের মানুষ ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। সংসারে অন্য কাজের পাশাপাশি এই কুটির শিল্পের মাধ্যমে বাড়তি কিছু টাকা আয় করে থাকেন।
কারিগররা জানান, বর্তমানে স্বল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় কুটির শিল্পের চাহিদা আর তেমন নেই। তাছাড়াও দ্রুব্যমূল্যে বাজারে দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত। এখন আর আগের মতো বাড়ির আশেপাশে বাঁশ ও বেত গাছ রাখছে না কেউ। সেগুলো কেটে বিভিন্ন চাষাবাদসহ দালান তৈরি করছে মানুষ। তাই কাঁচামাল আর আগের মতো সহজেই পাওয়া যায় না।
দেখতে নজর কাড়া হওয়ায় প্লাস্টিক ও অন্যান্য দ্রব্যের পণ্য টেকসই ও স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় সাধারণ মানুষের চোখ এখন সেগুলোর দিকে। তবে এখনো গ্রামীণ উৎসব ও মেলাগুলোতে বাঁশ ও বেতের তৈরি খোল, চাটাই, খোলই, ধামা, টোনা, পালল্টা, মোড়া, দোলনা, বুক সেল্ফ কদাচিৎ চোখে পড়ে।
দক্ষিন চকযদু মাহালী পাড়া গ্রামের আলব্রিকুশ মারান্ডি ও তার স্ত্রী মিলিনা হেমব্রম বলেন, বাপ-দাদাদের রেখে যাওয়া বেত শিল্পের দুর্দিনেও তারা হাতে গোনা কিছু সংখ্যক পরিবার বাঁশ-বেতশিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছেন। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেলেও পূর্ব পুরুষের হাতেখড়ি এই পেশাকে কিছুতেই ছাড়তে পারেননি তারা।
হস্ত ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের কারিগর আলব্রিকুশ মারান্ডি আরও বলেন, দয়ালের মোড়ের এক ব্যবসায়ী তার থেকে গাছের চারার নিরাপত্তায় ব্যবহৃত টোপা কেনার অর্ডার করেছেন, ২৫০ টি টোপার প্রতিটি ৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন তিনি। তার মতো একই কাজে উপজেলায় প্রায় ৪শ’ পরিবার জড়িত। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় স্বল্পসূদে সরকারি অথবা বে-সরকারি ভাবে ঋণ বা সরকারী প্রনোদনা দেওয়ার দাবি জানান কারিগররা।
ধামইরহাট উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা গণপতি রায় বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে, আদিবাসী বা মাহালী সম্প্রদায় হিসেবে যারা পরিচিতি যদিও সরকার এই জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে সম্মানিত করেছেন, আবেদন পেলে আমরা তাদের জন্য স্বল্পসুদে ঋণদানসহ সকল সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।