আনোয়ারুল ইসলাম জুয়েল, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) :
চর ও উপকূলীয় এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত জনগণের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে সমমর্যাদাসহ পূর্ণ জীবনমান প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ২৪টি গ্রামের দুস্থ্যচরবাসীদের মাঝে ভেড়া প্রদান, মৌসূম ভিত্তিক ভালোমানের বিভিন্ন জাতের সবজি বীজ, কীটনাশক ফাঁদ ও ঔষধ বিতরণ করা হয়েছে। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা “ফ্রেন্ডশিপ” এর ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্থাটি এসব প্রদান করেন।
সরেজমিন চিলমারী উপজেলার চর বজরাদিয়াখাতা এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, ঐ চরের এফডিএমসির সদস্য মিনারা বেগম। সে ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্প থেকে ৩৬০০/- টাকা মূল্যের একটি ভেড়া পেয়েছেন এবং নিজে একটি ভেড়া ক্রয় করেন। এখন তার আটটি ভেড়া; যার বাজারমূল্য ২৮,০০০/-। মিনারা বেগম আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর তার বসতবাড়ীতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর ৫,০০০/- টাকার সবজি বিক্রি করেছেন; যা তার সাংসারিক ব্যয়ভার বহনে সহায়ক হচ্ছে এবং সে সবজি এবং দুইটি ভেড়া বিক্রির টাকা দিয়ে ১৭,০০০/- মূল্যের একটি গরু ক্রয় করেছেন।
প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, সদস্যদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সম্পদবৃদ্ধি এবং সমাজে সুশাসন যেমন বাল্যবিবাহ রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ, জাতীয় সংসদ ও সংবিধান সম্পর্কে ধারণা, জিডি করার কৌশল ইত্যাদি শিক্ষামূলক আলোচনাসহ দুর্যোগ পরিন্থিতি মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ক্লাইমেট এ্যাকশন প্রকল্পের টিম লিডার মো: নাঈম খান জানান, চরাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভালোমানের সবজি বীজ বিতরণ করে সদস্যদের চাষাবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সদস্যরা নিজেদের বসতবাড়ীতে আধুনিক পদ্ধতিতে বেড এবং মাদায় জৈব সার ব্যবহার করে ভালোমানের সবজি চাষ করে নিজেদের খাদ্যের চাহিদা ও পুষ্টি পূরণে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া উৎপাদিত অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, যা এলাকায় সবজি চাষে ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভালোমানের বীজে অধিকতর ফসল উৎপাদন দেখে এলাকার জনমনেও সবজি চাষাবাদে অনুপ্রেরণা জাগ্রত হয়েছে। অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার আশায় সদস্যদের ভেড়া প্রদান করা হয়েছে। সবজি বীজ বিতরণ ও ভেড়া প্রদানের পূর্বে সকল সদস্যদের আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ এর উপর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দ্বারা সকল সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সদস্যদের ভেড়া প্রদানের সময় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দ্বারা টিকা ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট প্রদান করে সুস্থ সবল ভেড়া প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে অনেক সদস্যদের ভেড়া বাচ্চা প্রসব করেছে এবং কোন কোন সদস্য আগ্রহী হয়ে নিজ উদ্যেগে আরও ভেড়া কিনেছেন। ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার চর বজরা দিয়ার খাতা এলাকায় প্রকল্পের কিছু নতুন সদস্যদের ভেড়া প্রদান, মৌসূম ভিত্তিক ভালোমানের বিভিন্ন জাতের সবজি বীজ, কীটনাশক ফাঁদ ও ঔষধ বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের ক্লাইমেট এ্যাকশন টিম লিডার মো: নাঈম খান, প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক প্রমুখ।
এ সময় উদ্যোগতারা জানান, প্রজেক্ট অফিসার, সিনিয়র ফিল্ড ফ্যাসিলেটর, ফিল্ড ফ্যাসিলেটরদের সহযোগিতায় এবং আঞ্চলিক সমন্বয়কারীর তত্ত্বাবধায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।