নিউজ ডেস্ক, নিউইয়র্ক: যাচাই-এর কষ্টি পাথর সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ কুফুরীতে লিপ্ত। এ পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ে দেখা যাক, ফলাফল কি দাঁড়ায়। আসুন, এবার সেদিকে নজর দেয়া যাক।
বস্তুত : ঈমান ও ইসলামের বিপরীত হলো কুফর। কুফর শব্দটির আভিধানিক অর্থ ঢেকে রাখা, আচ্ছাদিত করা, গোপন করা, অস্বীকার করা এবং অকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। আর শরীয়াতের পরিভাষায় কুফর হলো, জরুরিয়াতে দ্বীন তথা দ্বীনের অত্যাবশ্যকীয়, সুস্পষ্ট, সর্বজনবিদিত হুকুম আহকাম, বিষয়াবলি অথবা তন্মধ্য হতে কোনো একটি বিষয় বা হুকুম অস্বীকার করা। যেমন কুফরে নির্মাত। এটা শোকরের (কৃতজ্ঞতার) বিপরীত শব্দ। এর অর্থ হলো অকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। (লিসানুল আরব : খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৬৯)। আর ঈমানের বিপরীত হলো কুফর। অর্থাৎ যে বিষয়ে ঈমান বা আন্তরিক বিশ্বাস থাকা অত্যাবশ্যক, সেখানে ঈমান না থাকা। (শারহুল মাশসিদ : খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৫৭)।
সাধারণত : কুফরকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা : (ক) কুফরে ইনকার : অর্থাৎ, যারা জরুরিয়াতে দ্বীনকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে না, মুখেও তার স্বীকৃতি দেয় না। যেমন প্রাথমিক যুগ হতে অদ্যাবধিকালের সাধারণ কাফির মুশরিক, যারা অন্তরেও বিশ্বাস করে না, এমনকি মুখেও স্বীকার করে না। এদের সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘আর কাফিররা ওই সকল বিষয় হতে মুখ ফিরিয়ে রাখে, যে সকল বিষয়ে তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন ও সতর্ক করা হয়েছে : (সূরা আহকাফ : আয়াত ৩)। মোটকথা, কুফরে ইনকার হলো অন্তরে ও মুখে অস্বীকার করা, সত্য বলে বিশ্বাস না করা এবং সত্যের নিকটবর্তী না হওয়া। (ফয়জুল বারী, শরহে বুখারী : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৭১)।
(খ) কুফরে জহুদ : যারা মনেমনে জরুরিয়াতে দ্বীনকে সত্য বলে অনুধাবন করে, কিন্তু অন্তর থেকে তা গ্রহণ করে না এবং মুখেও স্বীকার করে না। যেমন ইহুদী, নাসারা, মূর্তি পূজারী ও ইবলিস শয়তান এবং তাদের অনুসারীদের কুফরী। এতদপ্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর যখন ফিরিশতাদের উদ্দেশ্যে বললাম, তোমরা সবাই আদমকে সেজদা করো, সুতরাং তারা সিজদা করল। কিন্তু ইবলিস শয়তান সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানালো, অহঙ্কার করল, সে ছিল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত। ’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৩৪)। কার্যত : কুফরে জহুদ হলো অন্তর দিয়ে সত্য জানার পরও মুখে স্বীকার না করা। যেমন ইবলিস শয়তান কুফুরী করেছিল। (ফয়জুল বারী শরহে বুখারী : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৭১)।
(গ) কুফরে ইনাদ : অর্থাৎ, জরুরিয়াতে দ্বীনকে অন্তর থেকে মেনে নেয়, মুখেও স্বীকার করে। তারপরেও বাতিল, ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন দ্বীনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের প্রকাশ্য ঘোষণা প্রদান করে না। এই শ্রেণির লোকেরাও কাফির শ্রেণিভুক্ত। যেমন কতিপয় ব্যক্তি সত্য-সঠিক দ্বীন ইসলামকে গ্রহণ করার পর সাথে সাথে বর্তমান ইহুদী, খৃস্টান ও মূর্তি পুজারীদের ধর্মকে সঠিক ধর্ম বলে মনে করে। এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : ‘তোমরা কি কিতাবের এক অংশের ওপর ঈমান আনো আর এক অংশের সাথে কুফুরী কর? (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৮৫)।
প্রকৃতপক্ষে কুফরে ইনাদ হলো- অন্তরে সত্যটা বুঝতে পারে, মুখেও স্বীকার করে, তারপরও অন্তর থেকে বিশ্বাস ও মান্য করে না এবং সে অনুযায়ী জীবন যাপন করে না। যেমন আবুতালিবের কুফরী। (ফয়জুল বারী শরহে বুখারী : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৭১)।
(ঘ) কুফরে নিফাক : সত্য দ্বীনকে অন্তর থেকে অস্বীকার করে, কিন্তু পার্থিব স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যে মৌলিকভাবে দ্বীনের সত্যতা স্বীকার করে। এ শ্রেণির লোককে ব্যবহারিক ভাষায় মুনাফিকও বলা হয়। কাফির অপেক্ষা মুনাফিক ইসলামের জঘন্য শত্রু। বেশি ক্ষতিকারক। এদের প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘হে নবী! যখন মুনাফিকরা আপনার নিকট আসে, তখন তারা বলে : আমরা সাক্ষ্যদান করি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল’। (সূরা মুনাফিক : আয়াত-১)। আর কুফরে নিফাকের স্বরূপ হলো মুখে তো স্বীকার করে কিন্তু অন্তর থেকে অস্বীকার করে। (ফয়জুল বারী শারহে বুখারী : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৭১)।
(ঙ) কুফরে যিন্দিকাহ : অর্থাৎ, তারা প্রকাশ্যভাবে সকল জরুরিয়াতে দ্বীনকে মেনে নেয় এবং বাহ্যত: তাদেরকে মুসলমান মনে হয়। কিন্তু দ্বীনের সুস্পষ্ট অত্যাবশ্যকীয় কিছু বিষয়ের এমন অর্থ ও ব্যাখ্যা করে যা দ্বীনের সর্বজন স্বীকৃত, অকাট্য প্রমাণিত বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। যেমন ভ্রান্ত ফিরকাদের ব্যাখ্যা। এ কারণে তারাও যিদিক ও কাফির শ্রেণিভুক্ত। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৮৫: ফয়জুল বারী শারহে বুখারী : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৭১)।-ইনকিলাব
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।