নিউজ ডেস্ক, নিউইয়র্ক : ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কেয়ামত হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধ্বংসের দিন। যেদিন পৃথিবী অসীমের মাঝে বিলীন হয়ে যাবে। সেদিন মহান আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকবেনা।
কেয়ামতের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ইসলাম ধর্মে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কেয়ামতের আকীদা ছাড়া একজন মুসলমান মহান আল্লাহর মুমিন বান্দা হতে পারেনা। পৃথিবী যখন পাপে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে, মহান আল্লাহর নাম নেয়ার মতো পৃথিবীতে পুন্য বা নেক আমল করার মতো কেউ থাকবেনা তখন কেয়ামত সংঘটিত হবে।
কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট দিনের বা সময়ের বর্ণনা নেই তবে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এর কিছু আলামত বা লক্ষণের কথা বলা হয়েছে। কেয়ামত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে বলেন-
‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দিন, এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তা অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও যমীনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের ওপর আসবে, তখন অজান্তেই এসে যাবে।’ (সূরা আরাফ, আয়াত -১৮৭)
পবিত্র কোরআনে আরো বর্ণিত আছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে।’ (সূরা লুক্বমান, আয়াত-৩৪)
মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘যেদিন আপনার পালনকর্তার কোনো বড় নিদর্শন আসবে, সেদিন এমন কোনো ব্যক্তির বিশ্বাস স্থাপন তার জন্য ফলপ্রসূ হবে না।’ (সূরা আনআম, আয়াত-১৫৮)
আল্লাহ তাআলা বান্দার সতর্কতা জন্য দেড় হাজার বছর আছে কুরআনুল কারিমে সব বলে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘একমাত্র আপনার মহিমায় এবং মহানুভব পালনকর্তার সত্তা ছাড়া পৃথিবীর সবকিছুই ধ্বংসশীল।’ (সুরা আর-রাহমান : আয়াত ২৬-২৭)
তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া হাদিসে পাকে কেয়ামতের আগে সংঘটিত অনেকগুলো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। যার অনেক কিছুই সমাজে দেখা যাচ্ছে। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী বুঝা যাচ্ছে যে, কেয়ামত খুবই সন্নিকটে। মানুষ চরম বাড়াবাড়িতে লিপ্ত। তাই কেয়ামত সম্পর্কে সজাগ থাকতে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষিত আলামতগুলো তুলে ধরা হলো।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
* মানুষ যখন অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জনে প্রতিযোগিতা করবে;
* গচ্ছিত সম্পদের তথা আমানতে খেয়ানত করবে;
* জাকাত দেয়াকে জরিমানা মনে করবে;
* ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দিয়ে (জাগতিক) বিদ্যা অর্জন করবে;
* পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে;
* মায়ের সঙ্গে (সন্তান) খারাপ আচরণ করবে;
* বাবাকে বাদ দিয়ে (সন্তান তার) বন্ধুকে আপন করে নেবে;
* মসজিদে শোরগোল (বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি) করবে;
* জাতির দূর্বল ব্যক্তি সমাজের নেতৃত্ব দেবে;
* নিকৃষ্ট ব্যক্তিরা জনপ্রতিনিধি হবে;
* খারাপ কাজে সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করবে এবং এ খারাপ কাজের ভয়ে ঐ ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে;
* বাদ্যযন্ত্র ও নারী শিল্পীর অবাধ বিচরণ বেড়ে যাবে;
* মদ পান করা হবে এবং
* বংশের শেষ প্রজন্মের লোকজন আগের প্রজন্মকে অভিশাপ দেবে।
সে সময়ে তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে, যার ফলশ্রুতিতে একটি ভূমিকম্প ভূমিকে তলিয়ে দেবে। (তিরমিজি)
যখনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। সে সময় কী ঘটবে? কুরআনের কারিমে তাও বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের আগে ভূমিকে এমনভাবে প্রকম্পিত করবেন যে, জমিন তার গর্ভে ধারণ করা সব বস্তুকে বের করে দেবেন। কুরআনুল কারিমে এ কথা এভাবে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন-
‘যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে। যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে।’ (সুরা যিলযাল : আয়াত ১-২)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে জীবনের শেষ মুহূর্তভেবে উল্লেখিত কাজগুলো থেকে বিরত থাকা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কেয়ামতের সব আলামত ও তার ভয়াবহতা থেকে হেফাজত করুন। ঈমান ও নেক আমলের ওপর জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।