আবু জাফর মাহমুদ ::
৮ই ফেব্রুয়ারী’২১, সোমবার ::
শুরুতেই বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছেন এন্তনি জে ব্লিংকেন। প্রেসিডেণ্ট বাইডেন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি। প্রথম পদক্ষেপেই ইয়েমেনের আনসারুল্লাহর ওপর থেকে অবরোধ এক মাসের জন্য তুলে নিয়েছেন। “সন্ত্রাসীগোষ্ঠী”র তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে আনসাররুল্লাহ’র নাম। নিঃসন্দেহে একটা সুযোগ সব পক্ষের জন্যে। এ সময় যে যাকে যেভাবে বোঝেন,বুjঝতে পারেন।
সরকারের এই কূটনৈতিক ঝোঁক-নির্ভর বিশ্ব সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে মনে পড়ছে যার নাম, তিনি জন কেরি।বিশ্ববিখ্যাত কূটনীতিক-রাজনীতিক যিনি প্রায়ই ৪৬বছর যাবত মার্কিন সেনেটে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটির নীতি নির্ধারক চেয়ারম্যান ছিলেন।পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান পদে দীর্ঘকাল দায়িত্বপালনের পর ওবামা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
ওবামা সরকারে তাঁর নেতৃত্বাধীন এই বিশ্বসম্পর্ক বিষয়ক কূটনৈতিক অভিযানের অধিনায়কদের অন্যতম এক কূটনৈতিক নীতিনির্ধারক হচ্ছেন এন্তনি জে ব্লিংকেন।বিশ্বনেতা আমেরিকার অন্যতম এই নির্ধারককে জন কেরির উত্তরাধিকারি পদে পেয়ে শান্তিকামী বিশ্ববাসী পরাশক্তিদের সম্পর্কের জানালায় ভারসাম্যের সূর্যালোক দেখছে।
একই সাথে জেনারেল লয়েড অষ্টিনকে পেণ্টাগনের সর্বোচ্চ পদ বা প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে নিয়ে আমেরিকার নিরাপত্তা এবং সুসম্পর্কের এক আলোকোজ্জ্বল চেহারা উম্মোচন করলেন।
ভাইস প্রেসিডেণ্ট কমলা হ্যারিস ও সমগ্র মন্ত্রীসভা গঠনে সরকারের পৃষ্টপোষক নীতিনির্ধারকগণ আমেরিকাকে বিশ্বনেতৃত্বে ফিরিয়ে আনার যে চমৎকার দূরদর্শীতার পথ রচনা করলেন,বাইডেন সরকারের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই প্রশংসিত শুরু নিশ্চয়ই অসাম্প্রদায়িক বিশ্ববাসীকে আন্দোলিত ও স্পন্দিত করেছে।
মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, প্রেসিডেণ্ট জো বাইডেন কংগ্রেসকে জানিয়েছেন যে, আনসারুল্লাহকে “সন্ত্রাসীগোষ্ঠী”র তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে।
পররাষ্ট্রনীতির এই যাত্রা আমেরিকাকে সাম্প্রতিক অতীতের বিশ্ব- বিচ্ছিন্নতা নীতি এবং বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে আকস্মিকভাবে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে নীরিহ হওয়ার পথ এড়ালো।বর্ণবাদী বিদ্বেষকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করা থেকে আমেরিকাকে বের করলো।এতে সাম্প্রদায়িকতা বনাম অসাম্প্রদায়িকতার বিরোধে প্রথমটা প্রত্যাখ্যাত হলো। বর্ণের চেয়ে মেধাকে আমেরিকার পছন্দে আনা হলো।
ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস মারফি বাইডেন সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।এর আগে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কির্বিও বলেছিলেন, ইয়ামেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র রিয়াদকে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।মুসলমানরা বলছেন, আলহামদুলিল্লাহ্!
বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির প্রথম পদক্ষেপেই ইয়েমেনের আনসারুল্লাহর ওপর থেকে অবরোধ এক মাসের জন্য তুলে নিয়েছে।মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, জো বাইডেন কংগ্রেসকে জানিয়েছেন যে, আনসারুল্লাহকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে।
নয়া মার্কিন প্রশাসন আনসারুল্লাহকে ইয়েমেনের প্রভাবশালী একটি দল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।যুদ্ধের চোরাবালি থেকে মিত্র সৌদি জোটকে আত্নরক্ষার পথ কোঁড়ে দিচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা দাবি করছেন। ইয়েমেনে পরাক্রমশালী রাজনৈতিক সামরিক শক্তিই হচ্ছে আনসারুল্লাহ হুতি বাহিনীর যোদ্ধা এবং মুক্তিকামী ইয়েমেনিদের প্রতিরোধ শক্তি।
সম্প্রসারণবাদী সৌদি সরকারের অহংকার নেতিয়ে গেছে।তাদের খুঁটিগুলো অকেজো হয়ে গেছে।যা বুঝবার ক্ষমতা আমেরিকার রয়েছে।তাই বাস্তবতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেই ইয়েমেন ও আনসারুল্লাহ’র প্রতি আমেরিকা সমর্থন দিয়েছে।
সম্ভবতঃ আমেরিকার বর্তমান প্রশাসন ইয়েমেনি জীবন পুনরুদ্ধারে ব্যাপক অবদানও রাখবে। প্রধান পরাশক্তির ঐতিহ্যগত ও স্বার্থগত সম্পর্ক সুরক্ষায় অপরাপর পরাশক্তিদের সাথে প্রতিযোগীতা ও একসাথে অবস্থান করার রাজনীতিই আমেরিকার বর্তমান সরকারের নীতি হোক।নিপীড়িত জাতি ও দেশকে সমৃদ্ধির অংশীদার করার আমেরিকান ধারাবাহিকতা নিশ্চয়ই অব্যাহত থাকবে।
যাহোক, আরো ভালো লক্ষণ হচ্ছে, আমেরিকার সরকারের সাম্প্রতিক ইয়েমেন-নীতিকে সতর্কতার সাথে বিবেচনায় নিয়ে ইয়েমেনী আনসারুল্লাহ প্রধান বিবৃতি দিয়েছেন।
বিশ্ব-বিবেকের নিন্দার চাপ গিলে ধরাশায়ী এখন মোনাফেক নীতি। প্রশংসিত হচ্ছে যুদ্ধ বন্ধের নীতি।আমেরিকার সবচেয়ে অভিজ্ঞ পররাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারক জনকেরির বাইডেন প্রশাসনে উপস্থিতির দিকেই আমার নজর। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা তাঁর সাথে বহিঃরাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মার্কিণ স্বার্থের প্রতি অনুগত দক্ষ ও মেধাবি নেতা।
প্রধান পরাশক্তিরূপে হুমকি ধমকির সামান্য ঝোঁকও তাদের নীতিতে দেখা যায়না।নীরিহ মানুষদেরকে ইয়েমেনে নির্দয় আক্রমণ ও খুন করার দায় থেকে আমেরিকাকে মুক্ত করার রাষ্ট্র নায়কোচিত এই ঘোষণা আমেরিকার প্রতিটী নাগরিককে সম্মানিত করেছে। হোয়াইট হাইস ও সরকারকে আস্থাহীনতা থেকে তুলে এনে আশাবাদী বিশ্বশক্তির প্রতীকে পরিণত করার পথ বেয়ে উঠছে।
এমতাবস্থায় ইসরাইলকেও প্রতিবেশীদের কাছে আরো গ্রহনযোগ্য করার জন্যে নিরাপদে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিস্তারের সুযোগ ও হচ্ছে বিস্তৃত। ইসরাইল নীতিতেও আমেরিকা মধ্যপন্থীদেরকে বিশ্বশান্তিতে সহ-অবস্থানের পৃষ্ঠপোষকতা বিবেচনা করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।তাই বাইডেন সরকারের পররাষ্ট্রনীতি সুধীমহলের মনোযোগ ও সমর্থন কুড়াচ্ছে।
কট্টর উগ্রবামপন্থার বিদ্বেষবাদীতা তাই বলে আঙ্গুল চুষে চুষে প্রতিপক্ষদের প্রশংসিত সুনামে পথ বদলাবেনা। থেমে যাবেনা। তারাও নিশ্চয় নয়া কৌশলে আঘাত করবে।অস্থিরতা ছড়াবে। এই প্রতিযোগীতাই চলবে নিরন্তর। ভেতরে বাহিরে পরিস্থিতি যতই মোনাফেকি হউক,তবুও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কূটনৈতিক পথকেই বিশ্ব-সম্পর্কের প্রধান বিজ্ঞান বিবেচনায় রাখা হবে। তাই হোক।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।