নিউজ ডেস্কঃ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা বয়স্ক মানুষের শরীরে করোনা প্রতিরোধে ৮০ ভাগ কার্যকর। আর গুরুতর অসুস্থতা বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি ঠেকাতে শতভাগ কার্যকর।
গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে এ টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শেষে এমনটাই জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এদিকে আন্তর্জাতিক বিমান ভ্রমণে যাত্রীদের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা বাধ্যতামূলক হতে পারে, অস্ট্রেলিয়ার বিমান সংস্থা কোয়ান্টাসের প্রধান নির্বাহী অ্যালান জয়েস এমন তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, অনেক দেশের সরকার বলছে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়া না থাকলে অন্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদের প্রবেশের অনুমতি মিলবে না। খবর বিবিসি, এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উদ্ভাবন করে যুক্তরাজ্য ও সুইডেনভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। টিকাটির কার্যকারিতা প্রমাণে এর আগে মানবদেহে বেশি পরীক্ষা চালানো হয়।
তবে এসব পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বয়স্ক ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি থাকায় বেশকিছু দেশ বয়স্ক ব্যক্তিদের এ টিকা দেওয়ার বিরোধিতা করে। তাছাড়া এই টিকা নিয়ে বড় বিতর্ক শুরু হয় চলতি মাসের প্রথমদিকে। বলা হয়, অক্সফোর্ডের টিকা গ্রহণের পর রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির ভয়ে বেশকিছু দেশ ওই টিকাদান স্থগিত রাখে।
তবে টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। টিকাটি নিরাপদ বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-ইএমএ।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের মানবদেহে পরীক্ষায় ৩২ হাজার ৪৪৯ জন অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের টিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশের বয়স ৬৫ বা তার বেশি এবং প্রায় ৬০ শতাংশের স্বাস্থ্যগত অবস্থা করোনায় চরম ঝুঁকিপূর্ণ। তারা ডায়াবেটিস, অত্যধিক স্থূলতা, হৃদজনিত রোগে আক্রান্ত।
দেখা গেছে, টিকাটি সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের উপসর্গ মোকাবিলায় ৭৯ শতাংশ কার্যকর। আর গুরুতর অসুস্থ ও হাসপাতালে হওয়া রোগীদের জন্য টিকাটি কার্যকর ১০০ শতাংশ।
বিমানযাত্রীদের টিকা : অস্ট্রেলিয়ার বিমান সংস্থা কোয়ান্টাসের প্রধান নির্বাহী অ্যালান জয়েস বলেন, সরকারি নির্দেশ না এলেও বিমান সংস্থাগুলোর উচিত নিজ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বিমান ভ্রমণে টিকা নেওয়ার শর্ত আরোপ করা।
তিনি বলেন, যাত্রী ও ক্রুদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। বিমানের ভেতর সবাইকে নিরাপত্তা দিতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে টিকিট বুক করার শর্ত বদলাতে হবে।
জয়েস মনে করেন, যাত্রীরাও নতুন এই শর্ত মেনে নেবে। কারণ সিংহভাগ যাত্রীই মনে করেন, টিকা বাধ্যতামূলক করা যথার্থ একটি পরিকল্পনা। তিনি জানান, কোয়ান্টাসের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ যাত্রীই মনে করে আন্তর্জাতিক রুটে বিমানযাত্রীদের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। অর্থাৎ টিকা নেওয়া না থাকলে আকাশপথে ভ্রমণ করা যাবে না।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অনেকেই বিমানযাত্রায় কোভিড টিকা বাধ্যতামূলক করার বিপক্ষে। ডব্লিউএইচও-এর একজন পরিচালক বার্নার্ডো মারিনো বিবিসিকে বলেন, বিমানযাত্রায় টিকা পাসপোর্টের বাধ্যবাধকতা আমরা অনুমোদন করছি না। তিনি বলেন, বেসরকারি খাত চাইলেও এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সব দেশের সরকারকে অভিন্ন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে।