বৃষ্টিহীনতায় সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ৮:০৫, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

বৃষ্টিহীনতায় সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা

ADMIN, USA
প্রকাশিত এপ্রিল ৬, ২০২১
বৃষ্টিহীনতায় সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা

মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ॥
বৃষ্টিহীনতায় শুরু হয়েছে সুন্দরবনের মধু আহরণ মৌসুম। আহরণ ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগের দু’টি রেঞ্জ থেকে এ লক্ষ্যে মৌয়ালদের মধ্যে পাস-পারমিট দেওয়া শুরু হয়েছে। বনবিভাগের পক্ষে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৪০০ কুইন্টাল মধু ও ৪৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। তবে বৃষ্টিহীনতায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মৌয়ালদের পাশাপাশি বনসংশ্লিষ্টরা। সুন্দরবনের পূর্ববনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে শরণখোলা রেঞ্জের বন থেকে ৭১১ দশমিক ৫০ কুইন্টাল মধু এবং ২১৩ দশমিক ৪৫ কুইন্টাল মোম আহরণ করা হয়। এবছর সেখানে ৮০০ কুইন্টাল মধু এবং ২৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দেয়া তথ্যমতে জানা যায়, এ বছর ১ হাজার ৪০০ কুইন্টাল মধু এবং ৪৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০ কুইন্টাল মধু এবং ৩০০ কুইন্টাল মোম। ওই বছর আহরণ হয়েছিল ১ হাজার ২২০ কুইন্টাল মধু ও ৩৬৬ কুইন্টাল মোম। পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, সংশ্লিষ্ট বন অফিস থেকে ১৪ দিনের পাস-পারমিট নিয়ে মৌয়ালরা বনে প্রবেশ করছে। এর আগে তাদের অনুর্ধ্ব ২০০ মণ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈধ বিএলসি ধারী নৌকার মালিকানাসহ নানা শর্ত বা নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে বন আইনে শাস্তির বিধান রেখে ৯ টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মৌয়ালদের। এর মধ্যে সংরক্ষিত অভয়ারণ্য এলাকা থেকে মধু আহরণ করা যাবে না। মৌয়ালদের কেউ নিষিদ্ধ বনাঞ্চলে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক তার পারমিট বাতিল করা হবে। এ ছাড়া মধু আহরণে মৌমাছি তাড়াতে অগ্নিকুণ্ড, মশাল বা অনুরূপ কোনো দাহ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন না। মৌয়াল ও বনসংশ্লিষ্টরা জানান, মৌসুমের শুরুতে খলিশা ফুলের মধু আসে। এর পর আসে গরাণ এবং সর্বশেষ আসে কেওড়া ও ছইলা ফুলের মধু। তিন প্রজাতির মধুর মধ্যে খলিশার মধু সবচেয়ে দামি। সুন্দরবনে মৌসুমে মধু কম-বেশি হওয়া অনেকটা বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। চলতি বছর এ অঞ্চলে এখনো তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। আর বৃষ্টি না হলে ফুলে মধু জমে না। ফুল শুকিয়ে ঝরে যায়। তাই এবছর মধু কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন মৌয়ালরা। সুন্দরবনের পশ্চিম বনবিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্জে চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী মধু আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে। ১ এপ্রিল সাতক্ষীরা সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) এম এম হাসান সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মধু আহরণ মৌসুমের উদ্বোধন করেন। এদিন থেকে আগামী ১৫ই জুন আড়াই মাসব্যাপী মৌয়ালরা সুন্দরবনে নির্দিষ্ট এলাকায় মধু আহরণ করতে পারবেন। তিনি জানান, চলতি বছর মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫০ কুইন্টাল এবং মোম ২৬৫ কুইন্টাল নির্ধারিত হয়েছে। প্রতি কুইন্টাল মধু আহরণের জন্য ৭৫০ টাকা এবং প্রতি কুইন্টাল মোম ১ হাজার টাকা হারে রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪টি স্টেশন বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক, কদমতলা ও কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন থেকে পাস পারমিট দেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বিঘ্নে মধু আহরণে মৌয়ালদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মৌয়ালরা জানান, প্রতিটি নৌকা প্রস্তুত করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। প্রতিটি নৌকায় ১০-১২ জন মৌয়াল থাকেন। প্রতি জন মৌয়ালের মৌসুমে খরচ হয় ১২-১৫ হাজার টাকা। গত বছর একেক জন মৌয়াল প্রায় ২ মণ করে মধু পান। প্রতিমণ মধু ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তবে এবার বৃষ্টি নেই। তাই মধু কেমন হবে তা নিয়ে রীতিমত আশঙ্কার মধ্যেই মধু আহরণে যাচ্ছেন তারা। অধিকাংশ মৌয়ালদের নিজস্ব পুঁজি না থাকায় মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়েই বনে যান তারা। তবে বৃষ্টি হিনতায় অনেক মহাজন এবার পুঁজি বিনিয়োগে ঝুঁকি নেননি। সর্বশেষ বৃষ্টিহীনতায় নানা আশঙ্কাকে সামনে রেখে মৌয়ালরা বাপ-দাদার পেশার আঁকড়ে ছুটছেন সুন্দরবনে মধুর খোঁজে।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।