নিউজ ডেস্কঃ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন নিজেকে পরাশক্তি ভাবতে শুরু করেছে। একের পর এক দম্ভোক্তি করে যাচ্ছে স্বার্থে আঘাত হানা প্রতিটি দেশের বিরুদ্ধে।
নিজেদের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে এক পায়ে খাড়া চীন, মানবাধিকার যেখানে ধুলায় মিশে যাক। উইঘুর মুসলিম হত্যা, সাম্প্রতিক তাইওয়ান পরিস্থিতি ইত্যাদি পারিপার্শ্বিক প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোতে চীনের দম্ভ ভাঙতে এবার জোট বেঁধেছে যুক্তরাষ্ট্র জাপান।
শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হোয়াইট হাউজে এক বৈঠকে মিলিত হন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা।
বৈঠকে মিলিত হয়ে দুই শীর্ষ নেতা এ সময় যৌথভাবে চীনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অঙ্গীকার করেন বাইডেন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা-ও এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে একমত প্রকাশ করেন। খবর রয়টার্স, আলজাজিরা।
জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর হোয়াইট হাউজে বিদেশি কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের সঙ্গে এটিই তার প্রথম বৈঠক।
বৈঠকে চীনের পাশাপাশি বেইজিং-এর মিত্র উত্তর কোরিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রেও একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেন এ দুই নেতা।
করোনাভাইরাস, জলবায়ু পরিবর্তন, টোকিও অলিম্পিক, চীনের জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলমানদের ওপর নির্যাতন এবং তাইওয়ান পরিস্থিতির মতো বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলেন বাইডেন-সুগা।
দুই নেতাই যুক্তরাষ্ট্র-জাপান মৈত্রীর প্রতি তাদের অনমনীয় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। পূর্ব চীন ও দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতেও একযোগে কাজ করতে সম্মত হয় দুই দেশ। এ বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচনে জয়লাভের পরপরই বাইডেন সুগাকে এ বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছিলেন। সেটাই বাস্তবায়ন হলো শুক্রবার। এটাই কোনো বিদেশি নেতার সঙ্গে বাইডেনের হোয়াইট হাউজে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠক।
বিশ্বজনীন টিকা উদ্যোগ, ফাইভজি নেটওয়ার্ক, কৃত্রিম গোয়েন্দাবৃত্তি এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিংসহ নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে একযোগে কাজ করার ব্যাপারেও একমত হয়েছেন বাইডেন ও সুগা। বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও জাপানে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন তারা।
হোয়াইট হাউজে অনুষ্ঠিত এই আলোচনাকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ হিসাবে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৈঠক শেষে জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের মতো মূল্যবোধগুলোর ক্ষেত্রে দুই দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জো বাইডেন বলেন, এই একবিংশ শতকে এসে গণতন্ত্র এখনো লড়াই করে জিততে সক্ষম। এটি প্রমাণে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান একযোগে কাজ করবে।
তিনি বলেন, আমাদের বৈঠক দারুণভাবে ফলপ্রসূ হয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা বলেন, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধির ওপর চীনের প্রভাব নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। বলপূর্বক পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরের বিদ্যমান স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের যে কোনো প্রয়াসের বিরোধিতার ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।
বাইডেন বলেন, ‘আমরা মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো প্রশান্ত মহাসাগরের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চীনের ছোড়া চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য এবং পূর্ব চীন সাগর, দক্ষিণ চীন সাগর, পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার মতো ইস্যুতে একসাথে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তাইওয়ান সরকার এ বৈঠককে স্বাগত জানিয়ে চীনকে আরও দায়িত্বশীলতা অর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের মুখপাত্র জাভিয়ের চ্যাং এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা আশা করি বেইজিং কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পাদন করবে এবং স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখবে।’
শনিবার বেইজিং-এ বৈঠকের তীব্র বিরোধিতা করে বিবৃতি প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে কিয়োডো নিউজ। বিবৃতিতে চীন সরকারের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চীন তার জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও উন্নয়নের স্বার্থকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে।’ যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির দূতাবাস জানিয়েছে, ‘তাদের যৌথ বিবৃতি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্বাভাবিকতার পরিধি অতিক্রম করেছে।’
দূতাবাস জানিয়েছে, ওয়াশিংটন এবং জাপান তৃতীয়পক্ষের স্বার্থের জন্য, আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং আস্থা এমনকি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরের শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে ক্ষতিকর।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।