থানচিতে পাথর পরিবহনের কারনে পানি ব্যবহার অনুপোযোগী - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ৪:৪৬, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

থানচিতে পাথর পরিবহনের কারনে পানি ব্যবহার অনুপোযোগী

ADMIN, USA
প্রকাশিত এপ্রিল ২১, ২০২১
থানচিতে পাথর পরিবহনের কারনে পানি ব্যবহার অনুপোযোগী

 

মংবোওয়াংচিং মারমা (অনুপম)
থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি ২১ এপ্রিল ২০২১
…………………………………………………….
স্বাধীনতা ৫০ বছর পর্যন্ত আমরা এখানে সবুজ পাহাড়ে আলোবাতাস নিয়ে প্রকৃতি সম্পদ উপর ভর করে বসবাস করে আসছি । কিন্তু আমাদের সেই আর থাকলনা সব কেড়ে নিয়েছে কয়েকজন পাথর খেকো । আমাদের কোন ক্ষমতা নাই সরকার উন্নয়ন করেছে অনেক সেখানে পাথর দেয়ার জন্য আমাদের ব্যবহারে খালে উপর যতগুলি পাথর ছিল তা গত দুই এক বছরে তুলে নিয়ে গেচ্ছে । এখন খালের পানি ময়লা অবর্জনা গোলা পানিতে গোসল খানা বাসন-পাতিল ধোয়া এবং গহীন জঙ্গলে গিয়ে খাওয়ার পানি নেয়া ছাড়া কিছু নেই । কথাটি বললেন লাংরই হেডম্যান পাড়া ( বোল্ডিং পাড়া) নিবাসী লেলক ম্রো ৮৫, সাবেক কারবারী তংরুং ম্রো ৭৫সহ অনেকে । কাইতং পাড়া বাসিন্দা থানচি সদর ইউপি মেম্বার রেংক্লাং ম্রো ৬২,বর্তমান মেম্বার অংপ্রে ম্রো ৫১ বলেন,আমাদের পাড়া ইউনিসেফে প্রাক প্রাথমিক স্কুল ছাড়া ১ম হতে পশ্চম শ্রেনির স্কুল নেই। ক্লাস ওয়ান হতে পশ্চম শ্রেনির পর্যন্ত একটি স্কুল ঘর নির্মান ও দুইজন শিক্ষক দেয়ার কথা বলে কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ী থানচি বাজার বাসিন্দা মোঃ জসিম উদ্দিন, সাতকানিয়া বাসিন্দা এম এম এমরান মিয়া, রুমা বাসিন্দা চিংসাথোয়াই মারমা (বিপ্লব) পর্দ্দা ঝিড়ি ,হাতি ঝিড়ি আগা,কুংহ্লা পাড়া ঝিড়ি হতে পাথর উক্তোলন করেন । তা পাড়ার সকলে মিলে দিয়েছিলাম কিন্তু দুই বছর অতিক্রম করলো স্কুল ঘর নির্মান ও শিক্ষ দিল না তারা । বারবার তাদের বলা হলেও সরকারী উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের জন্য এই পাথর নিয়েছি । পাথর গুলি নতুন রাস্তায় রাখা হয়েছে সেখান থেকে কোথায় নিয়ে গেচ্ছে আমরা জানিনা । এদিকে একই খালে লামা উপজেলা ফাইসিাখালী বাসিন্দা কাজী নুরুল আনোয়ার একই কথা বলে চমি পাড়া, হাবরু হেডম্যান পাড়া ,বোল্ডিং পাড়া নিচে অংশ , লাকপাইক্ষ্যং পাড়া, টুকটং পাড়া অংশ হতে গত দুই বছর যাবৎ পাথর উক্তোলন করে কয়েকটি বড় বড়[ ট্রাক করে পরিবহনে নিয়ে নতুন সড়কে ৮ হতে ৯ কিলোমিটার স্থানে স্তুপ করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করে আসছেন । দুই বছর পার হলেও তাদের কথা দেয়া কোন প্রকার বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন। ঐসব অঞ্চলে বর্তমানে গ্রীষ্ম মৌসুমে, তীব্র পানির অভাব পড়িনত হয়েছে ।
খোজ নিয়ে জানা যায়,বান্দরবানে থানচিতে খুড়ে খুড়ে উক্তোলীত পাথর পরিবহনে পাথর খেকোদের প্রযোজনে পাহাড় ও খাল কেটে রাস্তা নির্মানে প্রতিদিন অর্ধশাতাধিক ট্রাক চলাচলে বিশুদ্ধ পানি ছাড়াও প্রয়োজনীয় পানিও অভাব দেখা দিয়েছে ।
সাংগু নদীর শাখা প্রশাখা পার্দ্দা খাল, রেমাক্রী খালের প্রবাহমান অসংখ্য ঝিড়ি ঝর্নায় আশে পাশে^ অবস্থানরত পাহাড়ী জনগোষ্ঠিদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানীয় জলে অভাব দেখা দিয়েছে ।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে পর্যটন কেন্দ্র তাজিংডং এর পাশে^ সিংতøাপি বম পাড়া হতে পর্দ্দা ঝিড়ি পানির উৎসবে প্রধান স্থান । সেখান থেকে নিচে আসতে থাকলে প্রথমে পড়ে কুংহ্লা ম্রো পাড়া, কাইতং ম্রো পাড়া, বোল্ডিং পাড়া, লাইপাইক্ষ্যং পাড়া, হাবরু ম্রো পাড়া, চমি ম্রো পাড়া, রুনাজন ত্রিপুরা পাড়া. থাংলং ম্রো পাড়া, অংথোয়াইপ্রু মারমা পাড়াসহ ১৫-১৬টি পাড়া রয়েছে । থানচি নতুন সড়ক হতে কাইতং পাড়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার, খাল পথে সিংতøাংপি পাড়া হতে অংথোয়াইপ্রু মারমা পাড়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার কালে এপার ওপার ও খালে ভিতরে করে রাস্তা তৈরী করে প্রতিদিন অন্তত পক্ষে ১০/১২টি ট্রাক গত ডিসেম্বর ২০২০ সাল হতে এই পর্যন্ত পাথর পরিবহন করে আসছে । ফলে পর্দ্দা ঝিড়ি খালে পানি সুকিয়ে মরুভমিতে পরিনত হয়েছে অবশিষ্ট পানির গুলিগোলা ব্যবহারে উপযোগী দেখা যায়নি।
একইভাবে থানচি উপজেলা ২নং তিন্দু, ১নং রেমাক্রী,রুমা উপজেলা রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের অংশ ঙাফাঁখুম, তাজিংডং পর্যটন কেন্দ্র রেমাক্রী খাল উপর প্রকৃতিভাবে ঘড়ে উঠা ছোট বড় পাথরকে দেখতে প্রতিদিন ভ্রমন পিপাসুরা চলে আসে । রেমাক্রী খালে চারিপাশে^ গাছ পাথর না থাকলে ঐসব পর্যটন কেন্দ্রতে ভ্রমন পিপাসুরা ভ্রমনে নিরুসাহী হয়ে যাবে এবং পর্যটনের উপর নির্ভর পাহাড়ে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতি প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
খোজ নিয়ে জানা যায়, থানচি উপজেলা ২নং তিন্দু ইউনিয়নে ৭-৮ ৯ নং ওয়ার্ডে ঙাক্ষ্যং খালে উপর আমিয়াখুম, সাতভাইখুম,বেলাখুম, সাফাহাঁকুমসহ ছোট বড় ৭-৮টি পর্যন্ত কেন্দ্র রয়েছে । ঙাক্ষ্যং খালের উপর বিশাল পাথর ও ছোট বড় পাথর গুলি গত মার্চ মাস হতে ভারুদ দিয়ে ভাঁঙ্গতে শুরু করেছে ঐসব পাথর খেকোরা । ঙাক্ষ্রং খালে মংখয় খিয়াং পাড়া, জিন্না পাড়া, দুঃহ্লা খিয়ান পাড়া, রামদো পাড়া, স্যালোক্যা ত্রিপুরা পাড়া, নিপিউ পাড়া, দলিয়াং হেডম্যান পাড়া, ছোট মধক ক্যমং হেডম্যান পাড়াসহ আশে পাশে^ থাকা ঝিড়ির ঝর্ণা গুলিতে পাথর খেকোরা টার্গেট করে রাখা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে ।
বিএনপি নেতা মোঃ জসিম উদ্দিনে মুঠোফোন ০১৫৫২৪৬৬৬৭৪ এর বার বার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। অপর পাথর আহরনকারী এম এম এমরান মিয়া বলেন, আমি ৩-৪ পাড়া কারবারী ও মৌজা হেডম্যানকে নগদ টাকা দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে । যে পরিমান পাথর পাওয়া কথা ছিল তা পাইনি। আমি সবাইকে ম্যানেজ করা হয়েছে বাকি থাকলে করবো।
থানচি উপজেলা পরিষদে সাবেক চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা বলেন, এক সময় যোগাযোগ পিছিয়ে থাকা থানচি উপজেলাকে মাননীয় পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর (উশৈসিং) মহোদয় বান্দরবান জেলা থেকে থানচি উপজেলা পর্যন্ত যোগাযোগের সড়ক, সাংগু সেতু ছাড়া অভ্যন্তরী ভাবে বিভিন্ন জায়গা যাওয়ার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নির্মান করেছে । যোগাযোগ উন্নত হলেও মানসিক উন্নত হয়নি সরকারি উন্নয়ন কাজে চট্টগ্রাম হতে আমদানি করা (এলসি) উন্নতমানে পাথর ব্যবহারের পরিবহনে কোন বাধা নেই। এক শ্রেনির মুনাফা লোভীরা দরিদ্রতাকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ে পাড়ার প্রধান (কারবারী) মৌজা প্রধান (হেডম্যান)দের কে স্বল্প মূল্যে ম্যানেজ করে এই সব করা হয়েছে । ফলে পর্যটন শিল্প ও জৈববিচিত্র ধংসমূখে অদূর ভবিষ্যতে পাহাড়ে পাথর,গাছ, প্রকৃতিভাবে গড়ে উঠা জৈব বিচিত্র প্রাকৃতি খনিজ সম্পদগুলি বিলুপ্ত হয়ে চিড়িয়াখানা ছাড়া খুজে পাওয়া কঠিন হবে ।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন থানচি শাকা সাধারন সম্পাদক কবি উমংসিং মারমা বলে, কারবারী হেডম্যানরা সজাগ থাকলে স্বল্পমূল্যে পাথর বিক্রি না করলে পাথর খেকোরা কোন সময় পাথর উক্তোলন করতে পারে না । স্থানীয় প্রশাসন হেডম্যান কারবারীদের নিশেধাজ্ঞা দিতে হবে এবং কঠোর শাস্তি ব্যবস্থা করতে হবে বলে মত দিলেন তিনি। পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর বীর বাহাদুর (উমৈসিং) আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।