নিউজ ডেস্কঃ
ভারতে চিহ্নিত করোনার বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভারতে যেভাবে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে তা ক্রমে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ভারত পরিস্থিতিতে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ এবং সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের পরামর্শ দিয়েছেন। প্রয়োজনে সীমান্ত বন্ধ রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এছাড়া ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের কঠোরভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখার পরামর্শ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, দেশে এমনিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এর মধ্যে আরো একটি আঘাত এলে সেটা মহাবিপদ ডেকে আনবে। তখন বিদ্যমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না।
লকডাউনের কারণে ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বিমান যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সহসাই বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সগুলো ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট অপারেশনে যাচ্ছে না বলে আভাষ দিয়েছে।
ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, তার পেছনে কোভিড-১৯’র নতুন ধরন ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে কারণে দেশটি ইতিমধ্যে ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণের দেশে পরিণত হয়েছে। এখন ভারতের আগে রয়েছে কেবল যুক্তরাষ্ট্র। দেশে বর্তমানে বিধি-নিষেধের আওতায় ৫টি দেশ ছাড়া সব দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর। ২৮শে এপ্রিলের পর ভারতের সঙ্গে বিমান যোগাযোগের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের সতর্কতা হিসেবে গত মঙ্গলবার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির এক সভাতে ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়।
ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ায় দেশটির সঙ্গে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি বলে জানিয়েছেন কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ। শনিবার সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে খুব বেশি যাতায়াত হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অবশ্যই আছে।
তিনি বলেন, আমরা সীমান্তে কড়াকড়ি করতে বলছি। আসা-যাওয়া সীমিত করতে হবে। এর মানে একেবারে প্রয়োজন ছাড়া কেউ ভ্রমণ করবেন না। কোনো রকম পর্যটন, বিনোদন বা সাধারণ কারণে যাতায়াত বন্ধ করা যেতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। অক্সিজেনের অভাবে অনেক হাসপাতাল থেকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর খবর আসছে। বিশ্বরেকর্ড গড়ে আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছে প্রতিদিন। এরমধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন একাধিক ধরনও শনাক্ত হয়েছে দেশটিতে। এমনকি ‘দুইবার রূপ পরিবর্তন করা’ ধরনও পাওয়া গেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানায় বিবিসি।
এমন পরিস্থিতিতে দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক সহিদুল্লাহ বলেন, ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, সীমিত করতে না পারি এবং কোয়ারেন্টাইন করতে না পারি, তাহলে এটা তো ছড়িয়ে পড়বেই।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় কমিটির সদস্যরা এরমধ্যে কথা বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি সরকারকে জানানো হবে। আমরা এখনও সুপারিশ করিনি। তবে করব। সদস্যদের মিটিংয়ে এটা আলোচনা হয়েছে।
তবে এ মুহূর্তে সীমান্ত বন্ধের কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। এক্ষেত্রে ভ্রমণকারীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে বর্ডার বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যারা ভারত থেকে আসবেন, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে। এটার বিকল্প কিছু নেই।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি ও জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতি মারাত্মক হওয়ায় আমরা অবিলম্বে সরকারকে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। সীমান্ত যদি পুরোপুরি বন্ধ রাখা সম্ভব নাও হয়, তাহলে অবশ্যই ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে সীমান্তে বিধি-নিষেধ আরোপের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও একই ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, আর কোনো বিপর্যয় এড়াতে এখন ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ রাখা উচিত। এ বিষয়ে আমাদের মতামত আমরা যথাযথ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। যদিও সরকারের উপরের মহল থেকেই এই সিদ্ধান্ত আসবে।
অপরদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলদেশের সবচেয়ে ব্যস্ত যোগাযোগ সীমান্ত হিসেবে পরিচিত বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত অব্যাহত রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ৫ থেকে ৬ শতাধিক মানুষ সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়া করছেন। এদের প্রায় সবাই চিকিৎসা সেবা নিতে ভারতে যাতায়াত করেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারতের এই ভাইরাস আমাদের দেশে ছড়ানোর সমূহ আশঙ্কা আছে। একে তো আমাদের প্রতিবেশী দেশ, তারওপর স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করছে। ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ একদম বন্ধ করা সম্ভব নয় বিভিন্ন কারণে। আর এ কারণে এই ভ্যারিয়েন্ট আসতে পারে। তারা বলেন, বন্দরগুলোতে অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করা উচিত। এতে ২০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল জানা যাবে। কোয়ারেন্টিনও সেরা উপায়। কিন্তু যদি সেটা সম্ভব না হয়, তবে পরীক্ষা করিয়ে দেশে ঢোকাতে হবে। এতে অন্তত ৯০ শতাংশ শনাক্ত করা যাবে।
এদিকে শনিবারও ভারতে রেকর্ড তিন লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে টানা তৃতীয় দিন তিন লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে দেশটির সরকার।
শনাক্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে রেকর্ড দুই হাজার ৬২৪ জন রোগী মারা গেছেন বলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার এই দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু সংখ্যা এক লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৪ জনে পৌঁছেছে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।