চার মাসের ব্যবধানে খরচ দ্বিগুণ সিরাজগঞ্জে লক্ষাধিক তাঁত বন্ধ, আড়াই লাখ তাঁতশ্রমিক বেকার - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সকাল ৭:৪৬, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

চার মাসের ব্যবধানে খরচ দ্বিগুণ সিরাজগঞ্জে লক্ষাধিক তাঁত বন্ধ, আড়াই লাখ তাঁতশ্রমিক বেকার

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ২৮, ২০২১
চার মাসের ব্যবধানে খরচ দ্বিগুণ সিরাজগঞ্জে লক্ষাধিক তাঁত বন্ধ, আড়াই লাখ তাঁতশ্রমিক বেকার

আবু সাইয়্যিদ সরকার, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:

গত ৪ মাস ধরে সূতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির মুল্যবৃদ্ধি পেতে পেতে এখন সূতার দাম দ্বিগুনেরও বেশী হওয়ায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচি সহ বিভিন্ন উপজেলার তাঁতকারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাঁতীদের কাপড় তৈরীতে ৬০০টাকার সেই কাপড়টি এখন তৈরী করতে ১২০০ টাকা খরচ হচ্ছে। পক্ষান্তরে উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি করতে পারছেনা তাঁতীরা। স্থানীয় সুতার মিলের মালিকগন দফায় দফায় ইচ্ছামাফিক সূতার মূল্য বৃদ্ধি করছে। কারন হিসাবে তুলার মূল্য বৃদ্ধির কথা বলছে মিল মালিকরা। কিন্তু মজার বিষয় হল তুলার মূল্য বেড়েছে পাউন্ড প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা, কিন্তু মিলমালিকরা সেই সুযোগ নিয়ে সুতার মূল্য বৃদ্ধি করেছে প্রতি পাউন্ডে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। রং ও ক্যামিক্যালের মূল্যও কয়েক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁতীদের কল্যানে কোন পদক্ষেপ না নিলে তাঁতশিল্প ধংশ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে এ জেলায় লক্ষাধিক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে, আড়াই লাখ তাঁতশ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। তারা অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে।

সূতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির মুল্য দ্বিগুনেরও বেশী বৃদ্ধির ফলে কাপড় উৎপাদনে লোকশান গুনতে হচ্ছে তাঁত মালিকদের, তারা বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন তাদের তাঁত কারখানাগুলো।

 

 

তাঁতসমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ৫লাখ (হস্তচালিত ও বিদ্যুৎ চালিত) তাঁত রয়েছে। গত চার মাসে লক্ষাধিকেরও বেশী তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছে আড়াই লাখ তাঁতশ্রমিক। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।তাদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে করোনাকালীন প্রনোদনা প্যাকেজ একান্তই জরুরী হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় তাঁতী সমিতির সভাপতি মোঃ মনোয়ার হোসেন ও সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক একরামুল হক রিজভীসহ এলাকার তাঁতমালিক, তাঁতশ্রমিক ও তাঁতী নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়,
তাঁতশিল্পকে ধংশের হাত থেকে রক্ষাকল্পে ও বেকার তাঁতশ্রমিকদের কর্মসং¯হানের ব্যাব¯হা করতে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সঠিক নজরদারি হলেই তাঁত শিল্পকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব, এই বিপর্যস্থ থেকে অতি দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তাঁতীরা জোর দাবী জানাচ্ছে। তা হলো বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডকে চলমান আমদানী সুবিধা প্রদানের জন্য তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমদানি সুপারিশ প্রদান করতে হবে এবং ¯হানীয় মিলের সূতার মূল্য কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে সেই সূতার সহিত প্রতিযোগিতামূলক কম মূল্যের পলিষ্টার সূতার আমদানীর ব্যব¯হা গ্রহন করা জরুরী যাহা পূর্বে থেকেই চালু আছে কিন্তু অজ্ঞাত কারনে আমদানী সুপারিশ ইস্যু করা হচ্ছেনা। এছাড়াও করোনা মহামারীর মোকাবেলায় আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা প্রয়োজন। সেইসাথে স্থানীয় সূতা মিল মালিকদের উপর কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডে তাঁতশিল্পের উন্নয়ন কাজের জন্য যেসব সিদ্ধান্তগুলো ঝুলিয়ে আছে তা দ্রুত সমাধান করতে হবে । রং এবং সুতার বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একটি মনিটরিং টিম গঠন করার কথাও বলেন তারা।

এদিকে সূতা, রং ও রাসায়নিকদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারনে তাঁত সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, কামারখন্দ, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলা এলাকায় প্রায় ৫ লক্ষাধিক (বিদ্যুৎ চালিত ও হস্তচালিত) তাঁত রয়েছে, এসব তাঁতে শাড়ী, লুঙ্গী ও গামছা উৎপাদনের জন্য কাজ করছে প্রায় ১২ লাখ তাঁতশ্রমিক। পর্যায়ক্রমে এসব তাঁত বন্ধ হয়ে গেলে এই ১২লাখ তাঁতশ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে লক্ষাধিক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে, আড়াই লাখ তাঁতশ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।