মো: ওয়াহেদুর রহমান, দিনাজপুর।।
দিনাজপুর জেলা কারাগার প্রতিষ্ঠার ১৬৭ বছর পর এই প্রথম কারাগারের ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির। স্ত্রী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি আব্দুল হককে ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আসামি আব্দুল হক রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভক্তিপুর চৌধুরীপাড়া গ্রামের মৃত আছিরউদ্দীনের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করে দিনাজপুর জেলা কারাগারের জেলার ফরিদুর রহমান রুবেল জানান, আব্দুল হক ২০০২ সালের ২৮ আগস্ট থেকে রংপুর কারাগারে বন্দী ছিলেন। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হওয়ার পর ফাঁসি কার্যকরের জন্য ২৩ মে রংপুর কারাগার থেকে তাকে দিনাজপুর জেলা কারাগারে আনা হয়। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জল্লাদ ওহিদুর রহমানকে আনা হয়, সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামি। তিনি জানান, ৯ জুন বিকালে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি আব্দুল হকের পরিবারের ১৫ সদস্য তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করেন এবং খাবার খাইয়ে ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পর চলে যান। এরপর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কারাবিধি অনুযায়ী ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে রাত ১২টা ১ মিনিটে আসামি আব্দুল হকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুরের ডিআইজি (প্রিজন) আলতাফ হোসেন, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বিপিএম, পিপিএম (বার), দিনাজপুর জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ, চিকিৎসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জেলা কারাগারের কর্মকর্তারা। ফাঁসি কার্যকরের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রাত ২টায় আসামির লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি আব্দুল হক তার স্ত্রীকে হত্যা করেন। ঘটনার পরের দিন ৯ ফেব্র“য়ারি তার শাশুড়ি বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২৮ আগস্ট গ্রেফতার হন আব্দুল হক। পাঁচ বছর পর ২০০৭ সালের ৩ মে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের বিচারক আব্দুল হকের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। পরে আব্দুল হকের পরিবার হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলেও মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল থাকে। সর্বশেষ আব্দুল হক রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। গত বছরের ১৮ মে রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয় কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রংপুর কারাগারে ফাঁসির কার্যকরের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় সেখান থেকে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ওই আসামিকে দিনাজপুর জেলা কারাগারে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। জেলা কারাগারের জেলার ফরিদুর রহমান রুবেল আরও জানান, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দিনাজপুর জেলা কারাগার। এরপর ২০১৭ সালে দিনাজপুর কারাগারটি আধুনিকায়ন করা হয় এবং সে সময় তৈরি করা হয় আধুনিক ফাঁসির মঞ্চ। এ কারাগারের রেকর্ড অনুযায়ী দিনাজপুর জেলা কারাগার প্রতিষ্ঠার ১৬৭ বছর পর এবারই প্রথম কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো বলে জানান জেলার ফরিদুর রহমান রুবেল। জেল কারাগারে অবস্থানরত বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের সাথে কথা বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আসামীর কাছে ফাঁসির মঞ্চ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, ফাঁসির মঞ্চটি দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। দীর্ঘ বছর পর জেলা কারাগারের ফাঁসি কার্যকর করে তার যৌবন ফিরে পেয়েছে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।