অর্থপাচার রোধে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে ॥ অর্থমন্ত্রী - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সকাল ৭:১৫, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

অর্থপাচার রোধে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

editor
প্রকাশিত জুন ১৭, ২০২১
অর্থপাচার রোধে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

নিউজ ডেস্কঃ

দেশ থেকে অর্থপাচাররোধে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, অর্থপাচাররোধে নতুন আইনকানুন করা হবে। দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ভাল হলে আর কেউ টাকা পাচার করবে না। রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেয়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ঋণ দিয়ে প্রতিবেশী দেশকে যদি সাহায্য করতে পারি, এটা খারাপ না। আমরা যে টাকা ঋণ হিসাবে দেব তার থেকে ভাল রিটার্ন পাব। টেলিকম অপারেটরদের আয়ে নজরদারিতে প্রযুক্তি পাচ্ছে বিটিআরসি। এ খাতের রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে বিটিআরসির জন্য ৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় ‘টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম’ কেনায় সায় দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় এবং সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব তথ্য জানান। ওই সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৭টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) জন্য টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম কেনায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী নিজে প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশ থেকে কেন টাকা পাচার হয়?

এর দুটো কারণ হতে পারে-একটি যাদের টাকা আছে তারা ভাল পরিবেশে বিনিয়োগ করতে পারছে না। কিংবা বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারছে না। অন্যটি অবৈধ উপায়ে উপার্জন। এ কারণে অবৈধ উপাজর্নের অর্থ টাকা পাচাররোধে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা প্রয়োজন। এজন্য নতুন আইনকানুন করতে হবে। আরও একটা কারণ হতে পারে এদের চারিত্র্যক বৈশিষ্ট্যই টাকা পাচার করা। তাদেরকেও আমরা ডিজিটালি ট্র্যাক করে সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে এসে আইনী প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেব। আমরা দেখেছি, কীভাবে টাকা পাচার হয়। যারা টাকা পাচার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। অনেকে জেলে আছে।

আগামী ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে মুদ্রাপাচার, মানি লন্ডারিংয়ের মতো ১৫টি আইন সংসদে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেগুলো সংসদে আনা হবে তার মধ্যে কিছু নতুন আইন এবং কিছু সংশোধনী। ১৪ তারিখে দুটি বিল আমি অলরেডি সংসদে নিয়ে গেছি। আমাদের লেনদেনগুলো ম্যানুয়াল না, এখন লেনদেন ডিজিটাল। এই লেনদেনগুলো আগে ম্যানুয়াল ছিল, সেগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে নেয়ার জন্য একটি আইন, আরেকটি হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের একটি আইন নিয়ে এসেছি।

অন্যটি বিনিয়োগের ভাল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে। যাতে করে কেউ টাকা বিদেশে নিয়ে আর না যান। খেলাপী ঋণের পরিমাণ বাড়ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে তথ্য সংগ্রহ করব। এরপরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, যদি ঋণ দিই তবে সারাদেশের মানুষ তা জানতে পারবেন। এর আগেও আমি সংসদে বলেছি, এখন ঋণ নিচ্ছি বেশি দিন বাকি নেই আমরা ঋণ দেব। আমরা যদি লাভবান হই, যদি বাড়তি কিছু পাই তাহলে মন্দ না। বিদেশে বা পার্শ্ববর্তী দেশে বাড়তি রিটার্নের আশায় ঋণ দিচ্ছি। নজরদারিতে প্রযুক্তি পাচ্ছে বিটিআরসি \ টেলিকম অপারেটরদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে বিটিআরসির জন্য ৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় ‘টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম’ কেনায় সায় দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় এবং সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান। ডিজিটাল রেগুলেটরি মনিটরিং ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান হওয়ার পর এ সিস্টেম কেনা হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, এই সিস্টেম কেনা, উন্নয়ন, সরবরাহ, ইনস্টল, টেস্টিং ও কমিশনের জন্য ৭৭ কোটি ৬৫ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৬ টাকা ব্যয় হবে। কানাডার টিকেসি টেলিকম এ সিস্টেম সরবরাহ করবে বলে জানান তিনি। এ সিস্টেমের কাজ কী হবে- জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, টেলিকম অপারেটরদের যে রাজস্বটা আদায় হচ্ছে, এক্ষেত্রে অনেক সময় সঠিক তথ্য নাও থাকতে পারে। এজন্য এ মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে শতভাগ রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে এবং সে অনুযায়ী সরকারকে অপারেটদের অবহিত করতে হবে। অপারেটরদের তথ্য অনুযায়ী, সরকার এ খাত থেকে বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব পেয়ে থাকে।

অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন জানান, বুধবারের সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন (২য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাবের জন্য ১০১ কোটি ২৮ লাখ ৪ হাজার ৩৬ টাকায় মালামাল কেনার অনুমোদন দেয়া হয়। এ প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ইন্সট্রাক্টর টেবিল, ৫ হাজার ইন্সট্রাক্টর চেয়ার, ৮০ হাজার কম্পিউটার টেবিল এবং ১ লাখ ৬০ হাজার কম্পিউটার চেয়ার সংগ্রহ, সরবরাহ ও স্থাপন করা হবে। হাতিল কমপ্লেক্স (১টি লট), আরএফএল প্লাস্টিকস লিমিটেড (২টি লট), আকতার ফার্নিচার লিমিটেড (৩টি লট) এবং পারটেক্স ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (১টি লট) কাজগুলো পেয়েছে। পেট্রোবাংলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এক্সালেরেট এনার্জি এলপি থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি সর্বমোট ৩১৩ কোটি ৬৮ লাখ ৯৭ হাজার ৬৮০ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদনও দেয়া হয় বৈঠকে। এছাড়া পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) ৫টি প্যাকেজের আওতায় ১২ লাখ ৩৫ হাজার টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল ৫ হাজার ৭৭৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের’ চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা চায়না রেলওয়ে গ্রæপের সঙ্গে স্বাক্ষরিত কমার্শিয়াল চুক্তি এবং পার্টিকুলার কন্ডিশন চুক্তি এবং পেমেন্ট সিডিউলের কয়েকটি ক্লজ পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।

এ প্রস্তাবের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, মূল চুক্তিপত্রে কোন পরিবর্তন হবে না, কিছু কাজ যা ওই কোম্পানি করত, তা বর্তমানে প্রকল্প থেকেই করা হবে। এছাড়া নৌপরিবহন কর্পোরেশনকে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স থেকে ২৩১ কোটি ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭২৬ টাকায় ৩টি যাত্রীবাহী ক্রুজ ভেসেল সরবরাহ ও নির্মাণ কাজ ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয় সভায়। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কাফকো থেকে ৮৭ কোটি ৬৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৭ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অন-লাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মোটরযানের কর ও ফি আদায়ের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডর হিসেবে ২১৮ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ৫ বছরের জন্য নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।