বিপদের ভালো দিক  - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, ভোর ৫:৪৪, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

বিপদের ভালো দিক 

editor
প্রকাশিত জুন ২২, ২০২১
বিপদের ভালো দিক 
রশীদ জামীল:
বিপদ মানে মসিবত। মসিবত মানে মুশকিল। মুশকিল মানে দু:শ্চিন্তা। দু:শ্চিন্তা মানে কষ্ট। সুতরাং, বিপদের পুরো চেইনটাই যেখানে অপাঙক্তেয়, সেখানে বিপদের আবার ভালো দিক কেমন করে হয়?
হয়। হতে পারে।
বিপদও লোভনীয় হতে পারে।
বিপদ কাকে বলে- জানলেই বুঝতে পারব।
বিপদ বা মসিবতের সংজ্ঞা স্বয়ং নবিজি দিয়ে গেছেন। উদ্ধৃত হয়েছে তাফসিরে রুহুল মাআনিতে, সুরা বাকারার ১৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়। আল্লামা মাহমুদ আলুসি বাগদাদি লিখেছেন,
كل ما يؤذي المؤمن فهو مصيبة له وأجر
এমন যেকোনো ব্যাপার, যা মুমিনকে কষ্ট দেয়, সেটাই বিপদ বা মসিবত এবং সেটার বিনিময়ে রয়েছে প্রতিদান।
হাকিম মুহাম্মাদ আখতার রাহমাতুল্লাহি আলাইহি খুব চমৎকার একটি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, কারও কোনো বন্ধু মারা গেছে। 10 বছর পর হঠাৎ একদিন সেই বন্ধুর কথা মনে পড়ল। বন্ধুর কথা মনে হতেই মনটা খারাপ হলো একটু। একটু কষ্ট হলো। এটাও মসিবত। আর একর্ডিং টু হাদিস, এর বিনিময়েও সাওয়াব পাওয়া যাবে।
বিপদে বা মসিবতে প্রথম কাজ ইন্নালিল্লাহ বলা এবং সবর করা। নবিজি ছোট ছোট কারণেও ‘ইন্নালিল্লাহ’ বলতেন।  আল্লামা আলুসি লিখেছেন,
أن الأجر لمن صبر وقت إصابتها
‘মসিবত এলে সঙ্গে সঙ্গে সবর করতে পারলে তখন তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে প্রতিদান।’ এমন না যে, কাঁদতে কাঁদতে ট্রায়ার্ড হয়ে যাওয়ার পর সবর করা হল! অথবা ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে যখন দেখা গেল আর কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না অথবা জবাব দেওয়ার ক্ষমতা আর নেই, তখন বললাম, ‘আমি আল্লাহর জন্য সবর করে ফেললাম’। হবে না। তখন আর সবর করা বা না-করার কোনো মানে নেই।
বিপদ ছোট হোক বড় হোক- সাথে সাথে ইন্নালিল্লাহ পড়া নবিজির সুন্নাত। বিপদ-আপদে পড়লে আমাদের মুখ থেকে ইন্নালিল্লাহ খুব কমই বের হয়। ইন্নালিল্লাহকে আমরা মুর্দার জন্যই আলাদা করে রেখে দিয়েছি। আমরা ভাবি কেউ মারা গেলেই কেবল ইন্নালিল্লাহ বলতে হয়।
নবিজি চার স্থানে ইন্নাল্লিাহ বলতেন।
1. পায়ে কাঁটা বিধলে।
2. মশা কামড়ালে।
3. হঠাৎ বাতি নিভে গেলে।
4. জুতোর ফিতা ছিঁড়ে গেলে।
আমরা হোঁচট খেলে মুখ থেকে ইন্নালিল্লা’র জায়গায় যে বাক্যটি বেরো’য়, সেটিহল- ‘ও মাগো’! বান্দা সিলেটি হলে গ-য়ে তাশদিদ লাগিয়ে ‘ও মাইগ্গো’!
বিপদ এলে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি আরেকটি দুআও করা যায়। নবিজি করতেন। সেটি হলো, ‘আল্লাহুম্মা আ-জিরনি ফি মুসিবাতি, ওয়াখলুফলি খাইরাম-মিনহা’—হে আল্লাহ, আমাকে এই বিপদে সাওয়াব দান করুন এবং এরচেয়ে উত্তম বদলা দান করুন।’
এ প্রসঙ্গে ছোট্ট একটা গল্প শুনি।
এক মহিলা বিপদে পড়েছেন। তার স্বামী মারা গেছেন। মহিলা স্বামীকে খুব ভালোবাসতেন। এত ভালো স্বামী পৃথিবীতে আর কারও হতেই পারে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। সেই স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব ভেঙে পড়লেন তিনি। স্বামীর কথা ভুলতে পারেন না। মনকে মানাতে পারেন না।
নবিজি বলছেন, বিপদে পড়লে, কষ্টে থাকলে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলার সঙ্গে বেশি বেশি করে এই দুআটিও পড়বে।
اللهم أجرني في مصيبتي واخلف لي خيرًا منها
তিনি মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য দুআটি পড়তে থাকেন। একই সঙ্গে মনে মনে ভাবেন, দুআ তো পড়ছি ঠিকই; কিন্তু আমার স্বামী থেকে উত্তম স্বামী আর কোথায় পেতে পারি। তবু দুআটি তিনি নিয়মিত পড়তে থাকেন। নবিজির শিখিয়ে দেওয়া দুআ বলে কথা।
মহিলা জানান, কিছুদিন পর নবিজির কাছ থেকে যখন আমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব আসে, তখন আমি দুআর মর্ম বুঝতে পারি। তখন বিশ্বাস হলো, আবু সালমা থেকেও উত্তম স্বামী হতে পারেন। তাঁর চেয়েও উত্তম স্বামী আমি পেতে পারি।
মহিলার স্বামীর নাম ছিল আবু সালমা রাজিআল্লাহু আনহু। আর মহিলার নাম উম্মে সালমা। জি, উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালমা রাজিআল্লাহু আনহার কথাই বলছি…
.
ইলাইহিল ওয়াসিলা
পৃষ্ঠা ৩৫-৩৬
প্রকাশকাল: জুলাই ২০২১
প্রকাশ করছে: কালান্তর
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।