সালেহ আহমদ ( লন্ডন ) যুক্তরাজ্য থেকে :
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে কমিউনিটির ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী সাজ্জাদ মিয়া এমবিই।
লন্ডনে কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব সাজ্জাদ মিয়া এমবিই কে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন- সমাজ ও শিক্ষা প্রসারে তার অবদান লক্ষণীয়। তিনি বর্তমান সময়ে জন্য রোল মডেল। সাজ্জাদ মিয়াকে নিয়ে গর্ব করতে পারে বাংলাদেশ সরকার, ব্রিটিশ সরকার ।
গত ২২ শে জুলাই বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের ইম্প্রেশন ইভেন্টস ভ্যেনুতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের আয়োজনে কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব সাজ্জাদ মিয়া এমবিইকে এক নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। বর্নাঢ্য জীবনে অধিকারী সাজ্জাদ মিয়ার কমিউনিটির কাজে উল্লেখযোগ্য ভুমিকার কথা তুলে ধরা হয় এই অনুষ্ঠানে।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক পরিচালনা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি জালাল উদ্দিন। প্রধান অতিথি হিসেবে জুমের মাধ্যমে উপস্তিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এম. এ. মান্নান এমপি ।
প্রধান বক্তা ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট ৩ আসনের আওয়ামীলীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব।
তারা তাদের বক্তব্যে সাজ্জাদ মিয়াকে একজন নিরংহকার, স্পষ্টভাষী এবং সৎ ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশের মাননীয় হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীম। টাওয়ার হ্যামলেটেস কাউন্সিলের স্পীকার কাউন্সিলর আহবাব হুসাইন, এক্সেকিউটিভ মেয়র জন বিগস, ক্রয়ডন মেয়র কাউন্সিলর শেরওয়ান চৌধুরী।
হাইকমিশনার তার বক্তব্যে সাজ্জাদ মিয়ার রাণীর কাছ এমবিই খেতাবে ভূষিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একটি সম্মানসূচক ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। মানপত্র পাঠ করেন সংগঠনের সহ সভাপতি দীর্ঘ দিনের সহকর্মী হরমুজ আলী। এ সময় ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয় এবং ইউকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এ সময় আরো অনেকেই বক্তব্য রাখেন ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। লন্ডন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হক লালা মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আলতাবুর রহমান মুজাহিদ ও দলের পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট মহিব চৌধুরী, বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমদাদুল হক চৌধুরী, সেক্রেটারি মোহাম্মদ জুবায়ের, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এম.এ. রহিম (সি আই পি) যুগ্ম সম্পাদক, নঈম উদ্দিন রিয়াজ, মারুফ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক, আব্দুল আহাদ চৌধুরী, কাউন্সিলর আব্দুল মুকিদ ছুনু এমবিই, টাওয়ার হ্যামলেটেসের সাবেক ডেপুটি লিডার রাজন উদ্দিন জালাল, ড. আব্দুল হান্নান, আনসার আহমদ উল্লাহ, কাউন্সিলর আব্দাল উল্লাহ সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য তরুণ সমাজকর্মী সাজ্জাদ মিয়া ১৯৬৭ সালে যুক্তরাজ্যে আসেন। এরপর থেকে কমিউনিটির উন্নয়নে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যান। মহান মুক্তিসংগ্রামে প্রবাসে গড়ে উঠা আন্দোলন সংগ্রামে তার উপস্থিতি ছিল প্রায় প্রতিটি মিটিং এবং মিছিলে। – আজকের প্রবীন সাজ্জাদ মিয়া ছিলেন তখনকার উদ্যমী তরুন। ব্রিটেনে আজকের ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের গৌরব গাথা, অর্জন দৃশ্যমান। তবে অতীত এ রকম ছিল না, ছিল সংগ্রামের, লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হত। কারণ বর্ণ বৈষম্য ছিল তুংগে। আর তাই ১৯৭৬ সালে প্রতিস্টিত হয় বাংলাদেশ ইয়ুথ এসোসিয়েশন। বর্নবাদ বিরোধী আন্দোলন তরান্বিত করে এই সংগঠন।
তারুণ্যের প্রতীক নিয়ে নিজে হাল ধরেছেন সংগঠনের ট্রেজারার হিসেবে। এরপর জেনারেল সেক্রেটারি, সর্বোচ্চ পদ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কমিউনিটির সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ব্রিটেনে বাংলাদেশী মুসলমানদের অন্যতম অর্জন ঐতিহাসিক ব্রিকলেন জামে মসজিদ। খৃস্টীয় ধর্মাবলম্বীদের চার্চ, ইহুদিদের সিনাগগের পর আল্লাহর ঘর মসজিদ স্থাপিত হয়। পূর্বে লন্ডন জামে মসজিদ ট্রাস্ট যা বর্তমান নাম হচ্ছে ব্রিকলেন জামে মসজিদ ট্রাস্ট। ১৯৭৮ সালে এর সদস্যপদ গ্রহন করেন সাজ্জাদ মিয়া। দীর্ঘ দিন মসজিদের সেবার মাধ্যমে ২০১৫ সালে ঐতিহ্যবাহী ব্রিকলেন জামে মসজিদ ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের যারা এখন যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকের ঘরে ঘরে, এখন শিক্ষিত নব প্রজন্ম থাকলেও আজ থেকে ৪ যুগ আগে এ দৃশ্য কেমন ছিল তার সাক্ষী সাজাদ মিয়ার মত প্রবীন ব্যক্তিরা। দেশ থেকে আসা বাংলাদেশীদের জন্য সাহায্য সহযোগিতা করার লক্ষে প্রতিস্টিত হয়েছে বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের মতো সেবা প্রদানকারী সংগঠন। বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ১৯৮২ সালে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও নির্বাচিত হন। আস্থার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষা প্রসারেও তার অবদান লক্ষণীয়। ১৯৮৪ সালে থমাস বাক্সটন প্রাইমারি স্কুলের প্যারেন্ট গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ১৬ বছর চেয়ার অফ গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৮ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস ল সেন্টারের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ব্রিটিশ রাজনীতিতেও আবদান রাখেন সাজ্জাদ মিয়া। ১৯৯০ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস ওয়েভার্স ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে কমিউনিটির নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি অন্যান্য সংগঠনের সাথে মিলে দেশে বিদেশে কমিউনিটির সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৫-২০১৭ সালে জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়েই সংগঠনের পক্ষ থেকে শুরু করা হয় জিসিএসই ও এ লেভেল উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান অনুস্টানের।
জীবনের প্রথম ধাপ থেকে আজ পর্যন্ত কমিউনিটির সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন। আর তাই ২০২০ সালে ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ কর্তৃক এমবিই খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। তার জীবনের দীর্ঘ অর্জন সমাজের অন্যান্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।