করোনায় কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন ৪ থেকে ৫ লাখ অভিবাসী
৩১ জুলা ২০২১, ০১:৫০ পূর্বাহ্ণ

নিউজ ডেস্কঃ
করোনা মহামারির মধ্যে ৪ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিককে জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২০২১ সালের বিশ্ব মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
বুধবার সকালে বিশ্ব মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস ‘ওয়ার্ল্ড ডে এগেনস্ট ট্রাফিকিং ইন পারসন ২০২১’ সামনে রেখে ওয়েবিনারের আয়োজন করে আইওএম। এতে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো, বাংলাদেশের আইওএমের প্রধান গিওরগি গিগাওরিসহ বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনৈতিক, জাতিসংঘ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এতে সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনসিডিং বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী। অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়।
মূল প্রবন্ধটিতে করোনাকালের মানব পাচার নিয়ে বর্তমান চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে করোনা মহামারির সময়ে সাড়ে ৩ লাখ পুরুষ ও ৫০ হাজার নারী বাংলাদেশি অভিবাসীকে জোর করে ফেরত পাঠানো হয়। ফিরে আসা বাংলাদেশিদের ৭০ শতাংশের দেশে কাজ খুঁজে পেতে কষ্ট হয়েছে। তাঁরা ঋণে জর্জরিত।
তিনটি রুটে বাংলাদেশিরা পাচার হয়ে থাকেন। রুটগুলো হলো বাংলাদেশ-তুরস্ক-লিবিয়া-ইউরোপ, বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলঙ্কা-লিবিয়া-ইউরোপ এবং বাংলাদেশ-সংযুক্ত আরব আমিরাত-জর্ডান-লিবিয়া-ইউরোপ। সাম্প্রতিক সময়ে এসব রুটে যাওয়া বাংলাদেশিদের অনেককেই ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। করোনার কারণে মানব পাচারের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। করোনায় বাংলাদেশি যাঁরা ইউরোপে উন্নত জীবনের জন্য অভিবাসী হতে চান, তাঁদের কারণে মানব পাচারকারীদের সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া করোনায় জীবিকার সংকটে নারী ও শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনও বেড়ে গেছে। মেয়েশিশুদের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে।
অপরদিকে করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে গত একবছরেরও বেশি সময়ে বিদেশ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খান ।
বুধবার পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খান সংবাদ সন্মেলনে জানান, বিদেশ থেকে যখন প্রবাসীরা ফেরত আসেন, তখন তাদের একটি রেজিস্ট্রি করা হয়। সেই তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় চার লাখ ৮০ হাজার ফেরত এসেছেন। সেটার ভিত্তিতে পাঁচ লাখ ফেরত আসা প্রবাসীর তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বিদেশ প্রত্যাগত দুই লাখ প্রবাসীকে এককালীন ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া এবং তাদের ডেটাবেজ তৈরি সংক্রান্ত একটি ৪২৭ কোটি টাকার প্রকল্প পাশের সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এ হিসেব একনেক সভায় দিয়েছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম সংবাদ সন্মেলনে বলেন, বিদেশ ফেরতদের একটি ডেটাবেজ করা হবে এবং তাদের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, এতদিন প্রবাসীরা দিয়েছেন, এখন আমাদেরকে তাদের দিতে হবে।
বুধবার একনেক সভায় প্রায় দুই হাজার ৫৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি অর্থায়ন দুই হাজার ১৫০ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ৪২৫ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক’র চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।