চোখের সামনে প্রতিটি দিন-রাত সে বড় হচ্ছে। শুদ্ধ গান ভীষণ পছন্দ করে। ৯ বছর বয়সে সে আমার সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীত ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ গেয়েছে। ভিডিওটি ফেসবুকে প্রকাশ করার পর অনেকেই প্রশংসা করেছেন। শুদ্ধ একেবারে ছোট্টবেলা থেকে আমার সঙ্গে কণ্ঠ মেলায়। ওর সঙ্গে আমি কণ্ঠ মিলিয়েছি। অন্যরকম অনুভূতি, অন্যরকম ভালো লাগা। সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের অনুভূতি কিংবা বাবা-মায়ের জন্য সন্তানের অনুভূতি- এর কোনো তুলনা হয় না। সন্তান যখন বাবা-মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকে; তাদের মধ্যে যে অভাববোধ হয়, এখন তা ভালোভাবে বুঝি।
অধিকাংশ মা-বাবারই স্বপ্ন থাকে সন্তান যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা সাধারণ চাওয়া। প্রতিষ্ঠিত মানুষ যে কোনোভাবেই হতে পারে। সন্তান মানুষের মতো মানুষ হোক- এটা অনেকেই ভাবেন না। প্রতিষ্ঠিত হওয়া মানেই মানুষ হওয়া নয়। আমি চাই আমার সন্তান মানবিক গুণাবলি নিয়ে মানুষ হোক। ছেলের যোগ্যতা তাকে কতদূর নিয়ে যাবে- এটা আমি স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। সে কী করবে তা নির্ভর করবে তার মেধার ওপর। তার ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। শুধু বলব, ‘একজন ভালোমানুষ হ বাবা।’ পরিবারের প্রতি, দেশের প্রতি যেন তোর দায় আর ভালোবাসাটুকু থাকে আমৃত্যু। করোনাকালে এখন বাসায় বেশিরভাগ সময় কাটে। ঘরবন্দি থাকার সুবাদে পিতা-পুত্রের মধুর সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়েছে। গত দেড় বছরে ছেলেকে যে সময় দিয়েছি, গত ১০ বছরে তা দিতে পারিনি। শুদ্ধ শিশু থেকে কিশোর হচ্ছে। তার শারীরিক পরিবর্তন ঘটছে। তার যে বয়স চলছে, এই বয়সে মা-বাবাকে তার বেশি দরকার। চেষ্টা করছি সন্তানকে ছায়ার মতো আগলে রাখতে। ‘পিতৃস্নেহে অন্ধ’ কথাটা এখন প্রতি মুহূর্তে বুঝতে পারি। জন্মের পর থেকে এত বছর পর্যন্ত, একসঙ্গে একটানা এতদিন একাত্ম হয়ে অহর্নিশ মিশে থাকা হয়নি, যে সুযোগটা করোনা করে দিয়েছে। জন্মের পর থেকে শুদ্ধ শুধু আমাকে বাবা হিসেবে নয়, পেয়েছে বন্ধু হিসেবে, যা আমরা পাইনি। যখন আমরা বাবাকে বন্ধু হিসেবে পেলাম, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আনন্দ-আবদারের চেয়ে তার সুস্থতা নিয়েই তখন উদ্বিগ্ন থাকতে হয়েছে বেশি। পড়ালেখা, খেলাধুলা, স্কুল, আরও কতকিছু- ছন্দময় একটা সময় ছিল আমাদের সন্তানদের! করোনায় গত দেড় বছরে সেই ছন্দের পতন ঘটেছে। এভাবে বেড়ে ওঠা, পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার জন্য কতটা শঙ্কার- সেটা ভেবেও বিচলিত হই। এই দুর্যোগ কেটে যাক। শুদ্ধ স্বাভাবিক সময় পার করে মানুষ হয়ে উঠুক- এটাই প্রার্থনা।
লেখক: অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী