শুনানিতে অংশ নিয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) অভিযোগ করে, নিজেদের দাবির পক্ষে ব্যবসায়ীরা যথাযথ তথ্যপ্রমাণ উত্থাপন করতে পারেননি। আইনগত দিক বিবেচনা করলেও অপারেটরদের আবেদন আমলে নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। তাই ব্যবসায়ীদের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। কমিশন জানিয়েছে, সব পক্ষের মতামত বিবেচনা করে তারা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।
বর্তমানে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের বিইআরসি নির্ধারিত দাম এক হাজার ৩৩ টাকা। বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। গতকাল রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শুনানিতে বেসরকারি এলপিজি কোম্পানিগুলো ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম এক হাজার ৩৮০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। এ প্রস্তাবে শুনানিতে অংশ নেওয়া ভোক্তা প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা শুনানিতে বলেন, বর্তমান দামেও লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। তাই দাম বাড়ানোর আবেদন করেছেন তারা। শীর্ষ এলপিজি ব্যবসায়ী বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, ওমেরা, পেট্রোম্যাক্স ও টোটাল গ্যাসের প্রতিনিধিরা বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়ায় বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা রয়েছে। দাম বাড়ানো না হলে ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়বে। আমদানির পরিবহন ব্যয়, বিনিয়োগের বিপরীতে আয়, পরিচালন ব্যয়, পরিবেশকের ব্যয়, খুচরা বিক্রেতার ব্যয় এবং সিলিন্ডারের অবচয়- এ ছয়টি খাতে ৫০৬ টাকা চেয়েছেন তারা। এর সঙ্গে প্রতি মাসে সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) যুক্ত করে দাম সমন্বয় করতে চাইছেন তারা। এতে সিলিন্ডারপ্রতি দাম বাড়বে ২২৪ টাকা।
তাদের প্রস্তাব মূল্যায়ন করে বিইআরসির কারিগরি কমিটি বলছে, ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারে এলপিজির সর্বোচ্চ দাম হতে পারে এক হাজার ৯৭ টাকা ৭৬ পয়সা। এটি কার্যকর হলে সিলিন্ডারপ্রতি দাম বাড়বে প্রায় ৬৫ টাকা। পরিবহনে ব্যবহূত অটোগ্যাসের দাম অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শুনানিতে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, মুক্তবাজারে চলমান দামের চেয়েও বাড়তি দাম চাওয়ার প্রস্তাব অযৌক্তিক।
আইনজীবী তুরিন আফরোজ বলেন, বাজারের চেয়ে বেশি দামের প্রস্তাব প্রতিযোগিতা আইনে অপরাধ। আর প্রস্তাবের পক্ষে তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
শুনানিতে অংশ নিয়ে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ভারতে ভর্তুকি ছাড়া ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বর্তমানে ৮৭৫ টাকা। তাই দাম সংশোধনে প্রস্তাবিত চার্জহার অযৌক্তিক ও সামঞ্জস্যহীন। এ ছাড়া বেক্সিমকোর প্রস্তাবে পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতার চার্জ ২৪ ও ২৭ টাকা ধরা হয়েছে। আর অন্যদের ক্ষেত্রে এটি ৫০ ও ৮০ টাকা ধরা হয়েছে। এ অসংগতি প্রস্তাবের অযৌক্তিকতার প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তিনি বলেন, আদালতে এ বিষয়ে একটি মামলা চলছে। এখন এলপিজির দামের বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হলেই ভালো। শুনানিতে ভোক্তারা কিছুই পাবে না।
বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, গণশুনানির পর কারও কোনো মতামত থাকলে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিশনে লিখিত জানাতে হবে। এরপর সব পক্ষকে নিয়ে ছোট পরিসরে আলোচনা করা হবে। সবার জন্য গ্রহণযোগ্য দাম নির্ধারণ করবে কমিশন।
গণশুনানিতে বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিলের সভাপতিত্বে কমিশনের সদস্য, অপারেটর প্রতিনিধি, ভোক্তা অধিকার প্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
গত ১২ জানুয়ারি এলপিজির দাম নির্ধারণে প্রথম গণশুনানি হয়। ১২ এপ্রিল প্রথম এলপিজির দাম নির্ধারণ করে কমিশন। এরপর প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট নতুন দাম ঘোষণা করে কমিশন।