শেরপুরে আগাম শীত লাউয়ের বাম্পার ফলন : দাম ভাল থাকায় চাষীরা খুশী
০৭ অক্টো ২০২১, ০৩:৩৩ অপরাহ্ণ

মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর প্রতিনিধি :
শেরপুরের সদর উপজেলার চরাঞ্চলের ৮-৯টি, শ্রীবরদী উপজেলার ৪-৫টি, ও ঝিনাইগাঁতী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে এবার প্রচুর পরিমাণে আগাম জাতের শীত লাউ চাষ হয়েছে। বিশেষ করে শেরপুর সদরের কামারেরচর, চরমোচারিয়া, বলাইয়েরচর, জঙ্গলদী, লছমনপুর, চরপক্ষীমারী ও বেতমারী-ঘুঘুরাকান্দি, ঝিনাইগাঁতী উপজেলার বানিয়াপাড়া, মালিঝিকান্দা, হাতীবান্ধা, তেঁতুলতলা, বনগাঁও, চতল, সন্ধ্যাকুঁড়া, , ফাকরাবাদ, ডাকাবর,হলদিগ্রাম, ভারুয়া, আয়নাপুর, ধানশাইল, শ্রীবরদী উপজেলার গরজড়ীপা,ঘোনাপাড়া, ইন্দিলপুর,মাটিয়াকুড়া গ্রামে এবার ব্যাপকহারে লাউয়ের বাণিজ্যিক ভাবে লাউ চাষ হয়েছে।
ইতিমধ্যেই পাইকারি বাজারে প্রচুর পরিমাণে লাউ আমদানি হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে সবজি হিসাবে লাউয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও পাইকারী আড়তে ঢাকায় সবজি বিক্রেতা আড়তদারের আগমনে বাজার মূল্যও ভালো যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই স্থানীয় পাইকারী বাজারে এবং কৃষকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে লাউ কিনতে ভীড় করছে বাইরের জেলা থেকে আসা পাইকাররা। তাদের মাধ্যমে এসব লাউ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিটি লাউ ৪০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন লাউ চাষিরা।
বাজারে বিভিন্ন প্রকারের হাইব্রিড লাউয়ের বীজ আসার ফলে এখন কমবেশী সারা বছরই লাউ পাওয়া যায়। তবে শীত এলে লাউয়ের চাহিদা এবং উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়। শীত মৌসুমে লাউ খেতে সবাই পছন্দ করেন। এখন শেরপুরে প্রচন্ড গরম থাকার পরও আগাম চাষের হাইব্রীড জাতের লাউ কৃষকরা বাজারজাত করা শুরু করেছেন। এবছর শরৎকালে শেরপুরে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আগাম লাউয়ের উৎপাদন ভাল হয়েছে। আগাম সবজি হিসাবে বাজারে এখন মূল্যও বেশী। এখন আগাম উৎপাদিত লাউ চড়া দামে বিক্রি হলেও শীত আসার পর কিছুটা দাম কমবে। তবে তখন উৎপাদনও বেড়ে যাবে, ফলে চাষিদের ক্ষতি হবে না। চাষীরা মনে করছেন ধানের তুলনায় আগাম লাউ চাষে এবার তারা লাভবান হবেন।
লাউ চাষে রুগবালাই ও পোকার আক্রমণ কম হয় বলে উৎপাদন খরচও কম হয়। মাছি পোঁকার আক্রমণ এবং পাউডারি মিলভিউ নামক ছত্রাকের আক্রমণে লাউয়ের উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে জেলার চাষীদের রয়েছে লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষের প্রচুর অভিজ্ঞতা। তাই তারা এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় পারদর্শী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিগত সময়ের চেয়ে এবার জেলায় লাউয়ের চাষ বেশী হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দিক নির্দেশনায় বাণিজ্যিক ভাবে লাউ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের স্বল্প জমির প্রান্তিক কৃষকের আর্থিক সংকট লেগেই থাকতো। বর্তমানে এই স্বল্প জমির প্রান্তিক কৃষকরা মৌসুম অনুযায়ী সময়োপোযুগী নানা জাতের সবজি চাষ করে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সক্ষম হয়েছেন। শেরপুরে আগে বাণিজ্যিকভাবে লাউ চাষ হতো না। কেবল বাড়ির উঠানে মহিলাদের তত্ত্বাবধানে লাউচাষ হতো। সেখানে আজ মাঠপর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে লাউয়ের চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এলাকার অনেক কৃষক। স্বল্প জমির কৃষকরা বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা পতিত জমিগুলোতে অল্প খরচে লাউ চাষ করে অধিক লাভবান হওয়ায় বাণিজ্যিক চাষ বাড়ছে। অনেকেই নিচু জমিতে মাটির উঁচু ঢিবী তৈরি করে ও মাছ চাষের পুকুর পাড়ে লাউ চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা এবার লাউ চাষে বাম্পার ফলন এবং ভাল বাজার মূল্য পেয়ে খুশি।
লাউদিয়ে বিভিন্ন প্রকার টিপস তৈরী করা যায় যা খেতে খুবই সুস্বাধু।
লাউয়ে ১৭ ধরনের এ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন সি, রাইবোফ্লাভিন, জিঙ্ক, থায়ামিন, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ এবং ৯৬% পানি রয়েছে। এতে ফ্যাট ও কোলস্টেরল নেই বললেই চলে।
হাইব্রিড জাতের লাউয়ের চারা রোপণের ৫০-৬০ দিনের মধ্যেই উৎপাদন শুরু করা যায়। লাউ প্রধানত শীত মৌসুমের সবজি হলেও এটি উচ্চতাপ ও অতিবৃষ্টি সহিষ্ণু। ফলে সারাবছরই জেলায় কমবেশী লাউয়ের চাষ করা হয়। সাধারণত শীতকালীন চাষের জন্য ভাদ্রের প্রথমে আগাম ফসল হিসেবে চাষ করা হয়।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর জানান, ঝিনাইগাতীর উঁচু ভূমিগুলো পানি সংকটের কারণে ধান-পাট চাষ করা সম্ভব হতো না বলে পরিত্যক্ত থাকতো। এই অনাবাদি উঁচু ভূমিগুলো লাউসহ বিভিন্ন সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদনের জন্য উপযোগী। আমাদের পরামর্শে স্বল্প জমির দরিদ্র কৃষক ও প্রান্তিক চাষিরা ধান-পাটের পরিবর্তে সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল চাষ করে নিজেদের সংসারের সাচ্ছন্দ ফিরিয়ে এনেছে। তিনি আরো জানান, জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য উত্তম। এই উপজেলার মাটি এবং আবহাওয়া লাউ চাষের জন্য উপযোগি। লাউ চাষে তেমন খরচ না থাকায় কৃষকরা ভালো লাভবান হবেন। কৃষি অফিস থেকে লাউ চাষিদের সার্বিক ভাবে সহযোগিতা, পরামর্শ ও বিনামূল্যে বীজ প্রদান করা হয়ে থাকে বলে জানান তিনি ।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি উপ-পরিচালক মুহিত কুমার দে বলেন, লাউ চাষে চাষিরা লাভবান হওয়ায় শেরপুরে আগামী মৌসুমে লাউচাষির সংখ্যা আরো বাড়বে।