নিউজ ডেস্কঃ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লাগাম টেনে ধরতে এবং তাদের কর এড়ানোর পথ বন্ধ করতে ঐতিহাসিক এক চুক্তিতে পৌঁছেছে বিশ্বের ১৩৬টি দেশ। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে দেশগুলো কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অন্তত ১৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর আদায় করবে। পাশাপাশি যে লাভ তারা করবে, সেটির একটি ন্যায্য অংশ যেন তারা কর হিসেবে দেয়, সেটাও নিশ্চিত করা হবে।
এ চুক্তির জন্য আলোচনা চলছিল গত চার বছর ধরেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমর্থন আর কভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক অভিঘাত সেই আলোচনাকে আরও বেগবান করে।
যে ১৪০টি দেশ এ আলোচনায় ছিল, তাদের মধ্যে চার উন্নয়নশীল দেশ কেনিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা আপাতত চুক্তিতে আসছে না। খবর বিবিসির
এ আলোচনার নেতৃত্বে থাকা প্যারিসভিত্তিক অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) বলছে, বিশ্ব অর্থনীতির ৯০ শতাংশ এই চুক্তির আওতায় আসবে।
জার্মানির অর্থমন্ত্রী ওলাফ শলৎস বলেন, কর খাতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আম আজ নিলাম।
জি৭-এর বৈঠকে ধনী দেশগুলোর এই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর করপোরেট করারোপে ঐতিহাসিক ও বৈশ্বিক ঐকমত্যে পৌঁছার পর গত ১ জুলাই এক অনলাইন ফোরামে ধনী দেশগুলোর সঙ্গে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোও এই ঐকমত্যে পৌঁছায়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তখন বৈশ্বিক করারোপের এ সমঝোতাকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছিল, ‘ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে পরিচিত নিম্ন করের দেশগুলোতে কোম্পানিগুলোর মুনাফা স্থানান্তরের বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করতেও জি৭ প্রণোদনা কমাবে।
ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, সুষম কর ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এখন আমাদের একটি স্পষ্ট পথ তৈরি হলো। বহুজাতিক বড় কোম্পানিগুলো যেখানেই ব্যবসা করুক, তারা ন্যায্য হিস্যা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন এ চুক্তিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার ভাষায়, অর্থনৈতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে এ চুক্তি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
গুগল, অ্যাপল, অ্যামাজন ও ফেইসবুকের মত টেক জায়ান্ট এবং বড় কোম্পানিগুলোর আয় আয়ারল্যান্ড বা অন্য কোনো ‘করস্বর্গে’ স্থানান্তরের মাধ্যমে কম কর দিয়ে বেশি মুনাফা করার পথও এই প্রক্রিয়ায় বন্ধ হবে।
কর এড়াতে এক দেশ ছাপিয়ে অন্য দেশে কোম্পানি নিবন্ধনের এ প্রবণতা নিয়ে আলোচনা চলছিল বেশ কয়েকবছর ধরেই।
চলতি সপ্তাহে দীর্ঘ এ আলোচনার পথে শেষ পর্যন্ত আয়ারল্যান্ড, ইস্তোনিয়া ও হাঙ্গেরির মত নিম্ন করহারের দেশগুলো তাদের আপত্তি তুলে নিলে চুক্তির পথ সুগম হয়।
তবে নূন্যতম কর আরও বেশি নির্ধারণের পক্ষে থাকা কিছু উন্নয়নশীল দেশ বলেছে, এ সিদ্ধান্তে তাদের দাবিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আয়ারল্যান্ডের মত ধনী দেশের স্বার্থ দেখতে গিয়ে তাদের বক্তব্যকে আমলে নেওয়া হয়নি।
ওইসিডি জানিয়েছে, এখন এ চুক্তি জি২০ ভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে তোলা হবে। ওই বৈঠকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হবে। আগামী বুধবার ওয়াশিংটনে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এরপর জি২০ দেশগুলোর নেতাদের বৈঠকে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। রোমে চলতি মাসের শেষে এ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।