‘সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই আর নেই কোনো হতাশা। যারা ইমান এনেছেন এবং যারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলেন। তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হেরফের হয় না। এটাই হলো মহাসফলতা।’ সুরা ইউনুছ : ৬২-৬৪
কোরআনে কারিমের এই আয়াতে আল্লাহর বন্ধুদের ভয়-ডরহীন থাকার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর বন্ধু হওয়ার অর্থ দুনিয়া ও পরকালে তার কোনো ভয় ও হতাশা না থাকা। কারণ এ কথা আল্লাহ নিজে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আল্লাহর বন্ধু কে? কাদেরকে আল্লাহ বন্ধু হিসেবে সম্বোধন করেছেন? কিংবা আল্লাহর বন্ধু হতে হলে কী করতে হবে? কোন আমলের বদৌলতে মানুষ আল্লাহর বন্ধুতে পরিণত হবে।
আল্লাহর বন্ধু হওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে সব ধরনের গোনাহ ও আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা। নিজেকে আল্লাহর বন্ধু হিসেবে তৈরি করতে গোনাহমুক্ত জীবনের জন্য তওবার কোনো বিকল্প নেই। কেননা গোনাহ থেকে ফিরে থাকার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর বন্ধুতে পরিণত হয়।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘তোমরা যদি গোনাহ না করো, তবে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে দেবেন এবং তোমাদের স্থলে আল্লাহ অন্য এক জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা গোনাহ করবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করবে। আর আল্লাহও তাদের ক্ষমা করে দেবেন।’ সহিহ্ মুসলিম
বর্ণিত হাদিস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ চান বান্দা সবসময় আল্লাহর কাছে তাদের গোনাহের জন্য তওবা করুক, ক্ষমাপ্রার্থনা করুক। আর তওবা ও ক্ষমাপ্রার্থনার কারণে আল্লাহ ওই বান্দার প্রতি খুশি হয়ে যান। ওই বান্দাকে আল্লাহ তার বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন।
তওবাকারী ব্যক্তি আল্লাহর একান্ত প্রিয়। বান্দা যখন গোনাহ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন, তখন আল্লাহ খুশি হয়ে বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কোরআনে কারিমে তওবাকারীদের সম্পর্কে একাধিক আয়াতে তার খুশির কথা জানিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারী এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন।’ সুরা বাকারা : ২২২
নবী কারিম (সা.)-এর নসিহত
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে তওবা ও তওবাকারী সম্পর্কে ঘোষণা করেন, ‘আদম সন্তান সবাই অপরাধ করে। অপরাধীদের মধ্যে উত্তম তারাই যারা তওবা করে।’ তিরমিজি
নবী কারিম (সা.) গোনাহমুক্ত জীবনের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ বার তওবা-ইস্তেগফার করতেন। তাই মুমিন-মুসলমানের উচিত, নিয়মিত তওবা-ইস্তেগফার করা। গোনাহমুক্ত জীবন লাভে সচেষ্ট হওয়া। সুন্নতের অনুসরণে প্রতিদিন ন্যূনতম ৭০ থেকে ১০০ বার তওবা-ইস্তেগফার পড়া। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ সুরা নুর : ৩১
নিয়মসহ তওবার কয়েকটি বাক্য
এক. ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।
নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ইস্তেগফারটি ৩ বার পড়তেন।’ মিশকাত
দুই. ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।’
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমাপ্রার্থনা করছি এবং তার দিকেই ফিরে আসছি।
নিয়ম : এ ইস্তেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তওবা ও ইস্তেগফার করতেন।’ সহিহ্ বোখারি
তিন. ‘রাব্বিগফিরলি ওয়াতুব আলাইয়্যা ইন্নাকা আনতাত তাওয়্যাবুর রাহিম।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং তওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি তওবা কবুলকারী করুণাময়।’
নিয়ম : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।’ আবু দাউদ
চার. ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লাইলাহা ইল্লা হুওয়্যাল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়াআতুবু ইলাইহি।’
অর্থ : ‘আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তার কাছেই (তওবা করে) ফিরে আসি।’
নিয়ম : দিনের যেকোনো ইবাদত-বন্দেগির সময় এভাবে তওবা-ইস্তেগফার করা। হাদিসে এসেছে, এভাবে তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।’ আবু দাউদ
সাইয়েদুল ইস্তেগফার
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লাইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা-সানাতু আবুয়ুলাকা বিনিয়ামাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুয়ুলাকা বিজাম্বি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের ওপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’
নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইস্তেগফার পাঠ করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইস্তেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি এ ইস্তেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।’ সহিহ্ বোখারি