মিশিগানের শিব মন্দিরে দুর্গাপুজোর আনন্দে মেতেছে বাঙালিরা

Daily Ajker Sylhet

newsup

১০ অক্টো ২০২১, ০৯:০১ অপরাহ্ণ


মিশিগানের শিব মন্দিরে দুর্গাপুজোর আনন্দে মেতেছে বাঙালিরা

মিশিগান ডেস্কঃ 

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নগরীতে নব প্রতিষ্ঠিত শিব মন্দির- টেম্পল অব জয়-এ শুরু হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সাতদিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রথম দিনে আজ শনিবার (৯ অক্টোবর) বিশেষ পূজা, অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। পূজার পাশাপাশি বিকেলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ছিল নাচ, গান, ধামাইল ও আরতি।

বিকেল ৫টায় মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মন্দিরের দাতা, বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং স্বনামধন্য দার্শনিক ডা: দেবাশীষ মৃধা ও তার সহধর্মিনী চিনু মৃধা। এ সময় চিনু মৃধা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ১০ দিনের শিশু এই মন্দিরটিতে প্রথমবারের মতো পূজার আয়োজন করতে পেরে আমরা খুবই খুশি। তিনি বলেন, পূজার আয়োজনে সংশ্লিষ্ট সকলের কর্মতৎপরতা ছিল খুবই আন্তরিক এবং অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এজন্য তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।


এপরপরই শুরু হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। এতে গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পী পূর্বা চৌধুরী, সুস্মিতা ধর, নুর চিশতি, অজিত দাস, কাবেরি দে, শ্রুতি হাওলাদার, অঙ্কুর দে, অতসি চৌধুরী, অদিতি দেব, পৃথা দেব। অতিথি শিল্পী হিসেবে নিউইয়র্ক থেকে আগত জনপ্রিয় লোক সঙ্গীত শিল্পী দুলাল ভৌমিক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তাকে তবলায় সহায়তা করেন উত্তম বড়ুয়া।


অতিথি শিল্পী সঙ্গীতা করের সাথে চমৎকার দুটি নৃত্য পরিবেশন করেছেন মন্দিরের দাতা, সমাজসেবী  চিনু মৃধা ও তার কন্যা অমিতা মৃধা। পরে নৃত্য শিক্ষক ও প্রশিক্ষক সঙ্গীতা কর একটি গান পরিবেশন করেন। এছাড়াও নৃত্যানুষ্ঠানে শিল্পীদের মধ্যে রিয়া রায়, কৃষ্টি পাল, স্বাগত পাল, অদ্রিজা চক্রবর্তী অংশ নেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন মন্দিরের দাতা, বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং স্বনামধন্য দার্শনিক ডা: দেবাশীষ মৃধা এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৌরভ চৌধুরী।


এদিকে পূজা উপলক্ষে শিব মন্দিরটির ভেতর ও বাইরে বিরাজ করছে সাজসাজ রব। উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে পূজা অর্চনা। করা হয়েছে আলোকসজ্জা। ঢাক-ঢোল, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনিতে মুখরিত এই পূজামন্ডপ। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই নয় আজ এ আনন্দে একাত্ম হয়েছেন সব ধর্মের মানুষ। উৎসব হয়ে উঠেছে সার্বজনীন। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অসামান্য মেলবন্ধন।

শিব মন্দির- টেম্পল অব জয়-এর গ্র্যান্ড সেলিব্রেশনের দ্বিতীয় দিনে আজ রোববার বিশেষ পূজা ও অঞ্জলি প্রদান করা হবে। বিকেলে রয়েছে কবিতা পাঠের আসর, ফ্যাশন শো, গান, নৃত্যানুষ্ঠান, ধামাইল প্রভৃতি। এছাড়া দুর্গোৎসব চলাকালে প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ-আরতি হবে। থাকবে আরতি, ধামাইল, ধুনুচি নৃত্যসহ নানা আয়োজন।


শরৎ কালে দুর্গাপুজো শুরু নিয়ে একাধিক ইতিহাস থাকলেও, তর্কাতীত নয় এবং জটিলও বটে। তবে বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় যে তথ্যটি প্রচারিত, তা হল, সীতাকে লঙ্কাপতি রাবণের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য শরৎকালে রাজা রামচন্দ্র দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ঐতিহ্যগত ভাবে তার আগে বসন্তকালে দুর্গাপুজো হত। অকালবোধন শব্দটি কৃত্তিবাসের রামায়ণে পাওয়া গেলেও, বাল্মিকী রামায়ণে এর কোনও উল্লেখ নেই। অকালে দুর্গাকে আহ্বান জানানো হয়েছিল বলেই, অকালবোধন বলা হয়ে থাকে। বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে শারদীয় পূজাই সবচেয়ে বড় উৎসব। প্রতি বছর সনাতন ধর্মের ভক্তরা আকাঙ্ক্ষিত বড় উৎসব তথা দুর্গা পূজার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। এ উৎসবে পরিবারের সবার মধ্যে মিলন মেলা ঘটে।


পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গার ঘোটকে আগমন। ফল ছত্রভঙ্গ এবং দেবীর দোলায় গমন ফল মড়ক। বর্তমান বছরে দেবীর আগমন এবং গমন উভয়ই খুব শুভ বার্তা দান করে না।


পঞ্জিকা অনুযায়ী, সোমবার (১১ অক্টোবর) সকালে ষষ্ঠী তিথিতে মিশিগানের বিভিন্ন মন্দিরে বোধন, বা দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা হবে। ষষ্ঠী তিথিতে বিহিতপূজার পর দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল দূর্গোৎসবের সূচনা। উৎসবের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) মহাসপ্তমী। এদিন সকালে ত্রিনয়নী দেবীদুর্গার চক্ষুদান করা হবে। এরপর দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা হবে। বুধবার (১৩ অক্টোবর) মহাঅষ্টমী পূজা। এরপর বৃহষ্পতিবার (১৪ অক্টোবর) মহানবমী। শুক্রবার (১৫ অক্টোবর)  বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব। একটি বছরের জন্য দুর্গতিনাশিনী দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে দেবালয়ে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।