আসিফের স্বপ্ন জয়
৩১ অক্টো ২০২১, ০৫:১৫ অপরাহ্ণ

নিউজ ডস্কঃ
আবু বকর সিদ্দিক আসিফ। হাজার হাজার প্রতিযোগীর সাথে পাল্লা দিয়ে মেধাতালিকায় ২য় অবস্থানে উঠে আসা এক উজ্জ্বল নাম। যে কিনা বারবার হোঁচট খেয়ে পেয়েছে স্বপ্ন জয়ের শিক্ষা। বুঝেছে কীভাবে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হয়। পরিশ্রমই যার কাছে সাফল্যের মূলমন্ত্র। খাগড়াছড়ির ছেলে সেই আসিফ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বি ইউনিটে ভর্তির মেধাতালিকায় ২য় হয়েছে।
১ হাজার ২২১টি আসনের বিপরীতে এই ইউনিটে ২৯ হাজার ৫২৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল ভর্তিযুদ্ধে। নেমেছিল আয়তনে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই ক্যাম্পাসকে নিজের করে নিতে, পৃথিবীর একমাত্র শাটল ট্রেনওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেনযাত্রী হতে। কেউ স্বপ্নকে জয় করেছে, কেউ পারেনি। আসিফ সেই স্বপ্নজয়ীদের একজন। শুধু স্বপ্নকেই জয় করেনি, পেয়েছে কল্পনাতীত সাফল্য।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিটে দ্বিতীয় হওয়ার ফলাফল প্রসঙ্গে আসিফ বলছিল, কল্পনাও করিনি আমি দ্বিতীয় হবো। তবে পরিশ্রম করেছি। আমার পরিশ্রমে কোনো দাঁড়িকমা ছিল না। আমি খুব করে বিশ্বাস করতাম পরিশ্রম করলে ফলাফল পাবোই। যা আমি ইতোমধ্যে পেয়েছি, এবং তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।
খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাশ করেছে আসিফ। বিজ্ঞানে বিভাগে পড়লেও বিজ্ঞানের বিষয়গুলো খুব একটা ভালো লাগত না তার। সাহিত্যের প্রতি ছিল তার সবটুকু ভালোবাসা। সমবয়সী অন্যদের মতো সেও অনলাইনে ডুবে থাকতো। তবে গতানুগতিক কোনো কিছুতে নয়। আসিফ মজে থাকতো সাহিত্যের বিভিন্ন বইয়ের পিডিএফ নিয়ে। এরই মধ্যেই শেষ করে ফেলেছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদারদের ভারী ভারী সব বই। বাদ যায়নি হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল এবং ইমদাদুল হক মিলনদের লেখাও।
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার মাস্টার পাড়ায় জন্ম আসিফের। জেএসসি এবং এসএসসিতে ছিল না জিপিএ ফাইভ। তাই ছিল বিশাল আফসোস। তবে দমে যায়নি সে৷ ঘুরে দাঁড়িয়েছে সবাইকে চমকে দিয়ে। সেসব ব্যর্থতার গল্প ঢেকে আজ সাফল্যের গল্পে ভরা আসিফের ঝুড়ি। তার এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান মা, বড় বোন এবং বন্ধুদের। আসিফ জানায়, আমার বড় বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তাকে দেখেই আমি সাহসটা পেয়েছি৷ তাছাড়া সর্বক্ষেত্রে ছিল আমার আম্মুর আদরমাখা আদেশ। ছিল বন্ধুদের অসীম সহযোগিতা। এই সাফল্য তাই আমি উৎসর্গ করছি তাদের প্রতি।
ভবিষ্যতে কী হতে চাও, প্রশ্ন করতেই আসিফের হাসিমাখা উত্তর—’ভালো মানুষ’। জীবন যাই করুক আসিফ সব সময় একজন ভালো এবং সৎ নাগরিক হিসেবে নিজেকে দেখতে চায়। মানুষকে ভালোবেসে, এ দেশকে ধারণ করে বাঁচতে চায় জীবনের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত।