নিউজ ডেস্কঃ
‘আর একটাও ধর্ষণ হতে দিবো না’ স্লোগানকে সামনে রেখে আত্মপ্রকাশ করেছে বাঁচাও অ্যাপ। স্রেফ একটি অ্যাপ হলেও তা হতে পারে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে লড়াই করা সৈনিক। হতে পারে আপনার নিজের কিংবা প্রিয়জনের এমন ভয়াবহ বিপদের মুহূর্তের একমাত্র বন্ধু। এ যেন ধর্ষণের বিরুদ্ধে এক সংগ্রাম।
বাঁচাও অ্যাপ কী
বাঁচাও অ্যাপ একটি অলাভজনক উদ্যোগ যা বাঁচাও লাইফ ফাউন্ডেশনের অধীনে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশ সরকারের সাথে নিবন্ধিত, ট্রেডমার্কযুক্ত। জরুরী পরিস্থিতিতে অন্যদের সাহায্য করার জন্য, একে অপরকে যুক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে প্রযুক্তি। এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সরকার, পুলিশ, এনজিও, কর্পোরেট সম্প্রদায়ের সাথে অংশীদারিত্ব করা হয়েছে।
বাংলাদেশে দৈনিক গড়ে ১৭ টি ধর্ষণ হয়। ২০২২ সালের জুলাইয়ের মধ্যে এই সংখ্যাকে অন্তত অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রয়াসে কাজ করে যাচ্ছে তারা। বর্তমানে বাংলাদেশকে ৬৪টি জেলায় বিভক্ত করে প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং প্রতিটি জেলায় কাজ করছে বাঁচাও অ্যাপের পর্দার পেছনের নায়করা। ২০২২ সালের জুলাইয়ের মধ্যে ধর্ষণের বৈশ্বিক পরিসংসংখ্যানে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত করা তাদের লক্ষ্য।
যাত্রা শুরুর গল্প
বাঁচাও অ্যাপের যাত্রা শুরুর অনুপ্রেরণাটি রোমহর্ষক। প্রতিষ্ঠাতা জালাল আহমেদের আপন বোন ধর্ষণের শিকার হন বিশ বছর আগে। প্রণয়ের সম্পর্ক থেকে পালিয়ে বিয়ে কিন্তু তারপর সেই গল্পের জঘন্য উপসংহার।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মানসিক ট্রমায় পড়ে তার পরিবার। মৃত্যুর আগে জালাল আহমেদের মা তাকে বলেন, ‘বাবা তুমি তো বড় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, তুমি কি কিছু করতে পারো না? পারলে একটা মেয়েকে বাঁচাও।’ শেষ কথাটি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে জালাল আহমেদের কানে। সেই উদ্যম থেকে তিনি উদ্যোগ নেন বাঁচাও অ্যাপটি তৈরি করার।
অ্যাপটি যেভাবে কাজ করে
বাঁচাও অ্যাপের ব্যবহার খুবই সহজ। এটি কাজ করে পি-টু-পি বা পিপল টু পিপল মডেলে। প্রথমে প্লেস্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। তারপর নিজের ফোন নম্বর দিয়ে ভেরিফাই করে নিতে হবে। বিশ্বস্ত হিসেবে সেভ করে রাখা যাবে দুই তিনজন মানুষের ফোন নম্বর। ব্যস! এবার বিপদের মুহূর্তে কেবল বাঁচাও লেখা লাল বাটন চাপতে হবে। তৎক্ষণাৎ আপনার বিপদের খবর পৌঁছে যাবে আপনার বিশ্বস্ত আপনজন, পুলিশ ও নিকটস্থ স্বেচ্ছাসেবীদের ফোনে। আপনার ফোনের লোকেশন অবশ্যই অন রাখতে হবে। জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করে অ্যাপটি কাজ করে। উক্ত মানুষরা লোকেশন অনুসরণ করে চলে আসবে আপনার পাশে। আপনিও তাদের সাথে নিজ নম্বর গোপন রেখে মেসেজ বা কল করে যোগাযোগ করতে পারেন। বিপদমুক্ত হলে ‘আমি নিরাপদ’ সবুজ বাটন চেপে আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া তাদের হেল্পলাইন নম্বর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে সকলের জন্য।
যাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না, তারা যেন শর্ট কোড ব্যবহার করে সেবাটি গ্রহণ করতে পারেন সেজন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নিকট আবেদন করা হচ্ছে বলে জানান প্রতিষ্ঠাতা জালাল আহমেদ।
গত ২ অক্টোবর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করার উপযোগী হয় এবং এই স্বল্প সময়েই ডাউনলোড সংখ্যা ছাড়িয়েছে দশ হাজারের অধিক। প্রচুর সাড়া ও প্রশংসা কুড়াচ্ছে এই অসাধারণ উদ্যোগটি।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।