ডাইনি বুড়ি - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সকাল ১০:০২, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

ডাইনি বুড়ি

newsup
প্রকাশিত নভেম্বর ৬, ২০২১
ডাইনি বুড়ি

অনেক অনেক আগের এক রাজ্যের কথা। সেই রাজ্যে কোনো রাজা, মন্ত্রী, সৈন্য-সামন্ত কিছুই ছিলো না। কারণ সেই রাজ্যের মানুষদের কোনো দুঃখ-কষ্ট ছিলো না। সবাই মিলেমিশে বাস করতো, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতো। সেই প্রাচীন রাজ্য ছিলো বনের মাঝে। রাজ্যের চারপাশে বন আর বন। গাছপালা এতোই ঘন ছিলো যে, সেখানে ভরদুপুরেও মাঝ রাতের আঁধার। গাছের ফাঁক গলে এক বিন্দু রোদও মাটিতে পৌঁছতে পারতো না। সেই আঁধার বন ছিলো অদ্ভুত প্রাণীতে ভরা। বনের হাতি ছিলো ইঁদুর আকৃতির। আবার তার লেজ সামনে আর শুঁড় পেছনে। হরিণের শিং ছিলো পিঠের দু’পাশে। ঘোড়ার লেজ ছিলো মাথার পেছনে। নানান পশুপাখিতে একাকার ছিলো বন। কোনোটা লম্বা তো কোনোটা বেঁটে, কোনোটা মোটা তো কোনোটা চিকন। কোনোটার দাঁত ছোট তো কান বড়, আবার কোনোটার কান ছোট তো চোখ বড়। এই বিচিত্র রকমের পশুপাখির বনে এসব উদ্ভট পশুপাখি ছাড়াও থাকতো এক কূটবুদ্ধিসম্পন্ন বিটকেলে ডাইনি। সেই ডাইনিই পশুপাখিদের কষ্ট দিতো। ইয়া বড় হাতিকে ইঁদুরের সমান বানিয়েছে সে। হরিণের শিং মাথা থেকে পিঠে বসিয়ে দিয়েছে। ঘোড়ার লেজ বসিয়েছে মাথার পেছনে। অন্ধকারের জন্য কেউ সেই বনে ঢুকতে পারতো না। তাই সেই বনের পশুপাখি আর ডাইনি সম্পর্কেও কেউ কিছু জানতো না।

বনের সেই প্রাচীন রাজ্যের এক কোনে ছোট্ট এক কুটিরে থাকতো এক বুড়ি। রাজ্যের সবাই তাকে ডাকতো গোবর টুকি বুড়ি বলে। কারণ সেই বুড়িটি সারা সপ্তাহ গোবর কুড়িয়ে তা শুকিয়ে হাটের দিনে বিক্রি করতো। বুড়ির কুটিরের পর থেকেই বনের শুরু। বুড়ি রোজ সকালে গোবর কুড়ানো শুরু করে। গোবর জড়ো করে বড় ঢেলা বানিয়ে গড়িয়ে তা নিয়ে যেতো কুটিরের কাছে। সেদিন বড় গোবরের ঢেলা বানাতে গিয়ে বুড়ির চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো। বয়স হয়েছে, এতো পরিশ্রম শরীরে সয় না। তাই বুড়ি গোবরের ঢেলাটি পাশে রেখে গাছের গোড়ায় বিশ্রাম নিতে বসলো। ক্লান্তিতে কিছুক্ষণ পরই ঘুমিয়ে
পড়লো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো; সূর্য ডুবে আঁধার হতে হতে এক সময় রাত নেমে এলো। তখন বুড়ির ঘুম ভাঙলো। অন্ধকারে বুড়ি কিছুই দেখতে পেলো না। বুড়ি এমনিতেও চোখে কম দেখতো তার ওপর ঘোর অন্ধকার। বুড়ি তবুও হাতড়াতে হাতড়াতে তার গোবরের ঢেলাটি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে অনেক দূর হাঁটার পর কুটিরে এসে পৌঁছলো। কুটিরের দেয়ালে হাত দিয়ে বুঝলো গোবর লাগানো তাতে। আসলে ওগুলো ছিলো সেই দুষ্ট ডাইনির মন্ত্রপূত গাছের পাতা। বুড়ি তার নিজের কুটিরের বদলে ডাইনির ডেরায় এসে পড়েছে। কিন্তু বুড়ি দেখতে না পাওয়ায় নিজের কুটিরই মনে করলো। বুড়ি হাতড়িয়ে কিছু শুকনো পাতা নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো। ডাইনিটি তখন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। বুড়ি তার আঁচলে সবসময়ই দুটি চকমকি পাথর বেঁধে রাখতো আগুন জ্বালানোর জন্য। হাতড়িয়ে একটি প্রদীপ খুঁজে পেলো। আসলে প্রদীপটি ছিলো এমন এক জাদুর পাত্র, যাতে বনের প্রাণীদের দেখা যেতো।
বুড়ি খুট খুট আওয়াজ তুলে পাথর ঘষে আগুন জ্বালালো। ডাইনি আলো সহ্য করতে পারতো না বলেই বন সে আঁধার করে রেখেছিলো। আর সেই ডাইনির ঘরেই আলো। ডাইনির শরীরে একটু আলো পড়তেই তার শরীর জ্বালা করতে লাগলো। ডাইনি ধড়মড়িয়ে জেগে উঠলো। চোখ মেলে তাকাতেই আলোতে তার চোখ ঝলসে গেলো। আর সে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো। সে চিৎকারে পুরো বন এমনকি সেই রাজ্যটিও থরথর করে কেঁপে উঠলো। এদিকে সেই গোবর-টুকি বুড়ি তো ডাইনিকে দেখে ভয়ে আধমরা হয়ে গেছে। বুড়ি তাড়াতাড়ি করে পালাতে চাইলে প্রদীপ উল্টে শুকনো পাতায় আগুন ধরে যায়। আলো আর আগুনের তেজে ডাইনির শরীরে জ্বালা ধরে যায় আর তখনই ডাইনির হাতের ধাক্কা লেগে একটি লাঠি নিচে পড়ে যায়। লাঠিটি মেঝেতে বাড়ি খেলে বুড়ির দিকে এক ঝলক আলোকরশ্মি ছুটে যায়। বুড়ি কোনোমতে ডাইনির বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। ডাইনি তারস্বরে চিৎকার করতে থাকে। নিমিষেই পুরো বাড়িতে আগুন লেগে গেলে ডাইনি আর তার জাদুর জিনিসপত্র সব পুড়ে যায়। পরদিন সকালে আবারও সেই বনের মাঝে সূর্যের আলো ঢুকতে পারলো। সমস্ত পশুপাখি আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গেলো, যেমনটি আমরা আজ দেখতে পাই। ডাইনি নেই তাই তার জাদুও নেই। আর সেই গোবর টুকি বুড়ি হয়ে গেলো একটি পোকা। পালানোর সময় বুড়ির গায়ে যে জাদু হয়েছিলো তাতেই বুড়ি পোকা হয়ে গেছে।
পোকারূপী বুড়ি রাজ্যে ফিরে এলো। কিন্তু তার কথা কেউ বুঝতে পারে না। সেই প্রাচীন বনের ভেতর ঘটে যাওয়া ঘটনাটাও কেউ জানতে পারলো না। পোকারূপী বুড়ি আজও সেই প্রাচীনকালের মতোই গোবর কুড়ায়। আর সেই বুড়ির নাম এখন গোবরে পোকা!

মিরাজুন নাহার মিথিলা

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।