আবুল কালাম আজাদ।।
চলনবিলের শেকড় সন্ধানি সাংবাদিকের যদি কোন ব্যক্তির পরিচয় দিতে যাই তাহলে প্রথমেই যার নাম বলতে হয় তিনি হচ্ছেন তাড়াশের রুহুল আমিন।তিনি ছিলেন বৃহত্তর চলনবিলের একমাত্র চারন সাংবাদিক। যিনি পশ্চাদপদ চলনবিলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবন সংগ্রামের শেকড়ের খবর সংগ্রহ করে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় পাঠাতেন। তাঁর সংবাদ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ছাপানো হতো।কিন্তু এই চারন সাংবাদিক আমাদের মাঝ থেকে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর।আমি মহান আল্লাহর কাছে তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান কুরুন। আমিন!
আমার জানা মতে রুহুল আমিন ১৯৭৪ সাল থেকেই নেশার ছলে সাংবাদিকতা জগতে যাত্রা শুরু করেছেন। সে সময় বৃহত্তর চলনবিলের নাটোর জেলার গুরুদাসপুর,নাটোর, বড়াইগ্রাম , সিংড়া , পাবনা জেলার চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া, বনারিনগর ফরিদপুর এবং সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া সহ ৮ উপজেলা ছিল সম্পুর্ন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। চলনবিলের ৮ উপজেলার ‘চলনবিল প্রতিনিধি ‘ হিসেবে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় আমৃত্যু নিষ্ঠার সাথে ‘ সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করেছেন রুহুল আমিন।তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় বৃহত্তর চলনবিলের ৮ উপজেলার নিয়োগপ্রাপ্ত সাংবাদিক হওয়ায় একজন জেলা প্রতিনিধির মর্যাদা পেতেন।
১৯৭৮ সালে চলনবিলের আলোর মশাল অধ্যক্ষ এব এ হামিদের পৃষ্ঠপোষকতায় চলনবিলের প্রানকেন্দ্র গুরুদাসপুর উপজেলায় চলনবিলের তরুন সাংবাদিকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় “চলনবিল প্রেসক্লাব”। চলনবিল প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং আজীবন সদস্য ছিলেন সাংবাদিক রুহুল আমিন। চলনবিল প্রেসক্লাবের সে সময়ের প্রতিষ্ঠাতা সম্মানীত অন্যান্যসদস্যরা হচ্ছেন গুরুদাসপুরের আতহার হোসেন ( দৈনিক দেশ), অধ্যাপক নজিবর রহমান আব্বাসী, অধ্যাপক শামসুর রহমান ( দৈনিক গনকন্ঠ), জাকির হোসেন (দৈনিক আজাদ ), দিল্রুবা খাতুন ( সাপ্তাহিক কাঁকন), তাড়াশের আব্দুর রাজ্জাক রাজু ( রাজশাহী বার্তা) বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান সাজু ( দৈনিক বার্তা) এবং চাট্মোহরের আব্দুল হামিদ মাষ্টার ( দৈনিক বার্তা)।
১৯৮০ সালের ১৫ জুন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শামসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তাড়াশ প্রেসক্লাব গঠন কল্পে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।তাড়াশ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়কের দায়িত্ব গ্রহন করেন রুহুল আমিন। পরে রুহুল আমিন পুর্নাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
রুহুল আমিন ছিলেন একজন আপদমস্তক সাংবাদিক। তিনি চলনবিল অঞ্চলের সাংবাদিকতা জগতের একজন দক্ষ শিক্ষক। সাংবাদিকতা পেশায় যাত্রা শুরু করে তিনি কখনো বিশ্রাম নেননাই। তাঁর নেশাই ছিল সংবাদ সংগ্রহে চলনবিলের প্রতিটা উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম, পাড়ায় চষে বেড়ানো। সংবাদ সংগ্রহে কখনো নৌকায় কখনো পায়ে হেটে আবার গরুর গাড়িতে গ্রামের পর গ্রাম ছুটে বেড়াতেন। সংবাদের শেকড়ের সন্ধানে গোটা চলনবিলই ছিল তাঁর চারনভূমি। তিনি ছিলেন চলনবিলের মাটি ও মানুষের বিশাল তথ্য ভান্ডার।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।