নিউজ ডেস্কঃ স্কটিশ পার্লামেন্টের সর্বপ্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত সদস্য ফয়ছল চৌধুরী এমবিই এমএসপি এর ঐকান্তিক কুটনৈতিক প্রচেষ্টায় এই পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধিত হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এরফলে স্কটল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন এক অধ্যায় চালু হল। স্কটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশী কোন রাষ্ট্রপ্রধানের আগমন এটাই প্রথম। গত ২ নভেম্বর মঙ্গলবার স্কটিশ রাজধানী এডিনবরায় অবস্থিত হলিরুড পার্লামেন্টে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান প্রিজাইডিং অফিসার (স্পিকার) আলীসন জনসন, এমএসপি এবংশ্যাডো মিনিষ্টার ফর কালচার, ইউরোপ এন্ড ইন্টারন্যাশন্যাল ডেভলাপমেন্ট ফয়ছল চৌধুরী এমএসপি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সঙ্গী ছিলেন তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং প্রতিবন্ধী এন্ড অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
রাত সাড়ে আটটায় শুরু হয় মুল অনুষ্ঠান। পার্লামেন্টের গার্ডেন লবীতে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিটি অব এডিনবরা কাউন্সিলের লর্ড প্রভোস্ট রাইট অনারেবল ফ্রাংক রস। এরপর লর্ড প্রভোষ্ট অনুষ্ঠানের মূল হোস্ট লোদিয়ান এমএসপি ফয়ছল চৌধুরী এমবিই-কে মঞ্চে আহবান জানান।
জলবায়ু সম্মেলনে ব্যস্ত সময় কাটানোর সময় স্কটিশ পার্লামেন্ট আগমনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান ফয়ছল চৌধুরী এমবিই। স্কটল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে স্কটিশ পার্লামেন্টের আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন শ্যাডো মিনিষ্টার ফর কালচার, ইউরোপ এন্ড ইন্টারন্যাশন্যাল ডেভলাপমেন্ট ফয়ছল চৌধুরী এমএসপি।
এরপর প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্ধারিত বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। আলোচনার শিরোনাম ছিল “এ বাংলাদেশ ভিশন ফর গ্লোবাল ক্লাইমেট প্রসপারিটি”। বক্তব্যের শুরুতেই আন্তরিক কুটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহনের জন্য ফয়ছল চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী । তিনি বলেন, ”স্কটিশ জনগনের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ”।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের সৃষ্ট নানা কুপ্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী তাঁর আলোচনায়। বাংলাদেশে পরিবেশত নানা বিপর্যয় যেমন- বন্যা, জলোচ্ছাস, খরা, ঘুর্ণিঝড়, নদী ভাঙ্গন, লবনাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদির উদাহরন তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বাড়লে উপকুলীয় এলাকার ১০ মিলিয়ন মানুষ তাদের বাসস্থান হারাতে পারে।
পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে বাংলাদেশে গৃহীত নানা পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোকপাত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্রমাগত হারে কয়লা ভিত্তিক বিদুৎ উৎপাদন প্রকল্প কমিয়ে আনা হচ্ছে। এছাড়া দেশে ব্যাপক হারে সৌর বিদ্যুৎ ব্যাবহার করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা জানান, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জ্বালানীর শতকরা ৪০ ভাগ আসবে নবায়নযোগ্য (রিনিউএবল) উৎস থেকে।
বৃক্ষ রোপন কার্যক্রমের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দল (আওয়ামী লীগ) বৃক্ষ রোপনের ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রত্যেক সদস্যকে বছরে ৩টি করে গাছ লাগানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমরা মুজিব শতবর্ষ উদযাপন কালীন ২৫ মিলিয়ন গাছের চারা লাগিয়েছি।
কোপ ২৬ সম্মেলনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও সফলতা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত বিশ্ব যাতে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ অব্যাহত রাখে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন, সিভিএফ (ক্লাইমেটভালনারেবল ফোরাম) বা ভি-২০ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ১৫ মিনিটের বক্তব্যের শেষে বলেন, “আমাদের ধরিত্রীকে রক্ষা করতে, এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি ভবিষ্যত উপহার দেয়ার জন্য, আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করেযেতে হবে”
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি ফার্স্ট মিনিষ্টার জন সোইনি, স্কটিশ লেবার পার্টির লিডার আনাছসার ওয়ার এমএসপি, জ্যাকি বেইলি এমএসপি, কেবিনেট সেক্রেটারী ফর হেলথ হামজা ইউসাফ এমএসপি, লোদিয়ান এমএসপি মাইলস ব্রিগ প্রমুখ।
স্কটল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও যোগ দেন অনুষ্ঠানে। এতে উপস্থিতছিলেন ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই জেপি, ব্রিটিশ বাংলাদেশ ক্যাটারিং এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শাহনুর চৌধুরী, স্কটল্যান্ড আওয়ামী লীগের নেতা গোলাম আনিস চৌধুরী সহ স্কটল্যান্ড আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীবৃন্দ, শাহজালাল ইসলামিক সেন্টারের আব্দুল মালিক, লেবার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশী গ্রুপের আছদ্দর আলী, আবারডিন মালটিকালচারাল সেন্টারের আহসান হাবিব সহ অন্যন্যরা। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের নেতা সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক এবং আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
আগতরা মনে করে করেন, স্কটল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশ ব্যাবসা বানিজ্য এবং কুটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ফয়ছল চৌধুরী এমএসপি জোরালো ভুমিকা রাখতে পারবেন। তাছাড়া স্কটল্যান্ডে বসবাসরত বাংগালী কমিউনিটির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন। অনুষ্ঠানে আগতরা মনে করেন, স্কটল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির স্বার্থে এডিনবরায় একটি বাংলাদেশী কনসুলেট স্থাপন করা জরুরী।
এছাড়া স্কটিশ কোম্পানী এবং ব্যাবসা প্রতিষ্টানকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করার লক্ষ্যে স্কটল্যান্ডে একটি বাংলাদেশ ট্রেড ফেয়ার বা এক্সপো আয়োজন করা প্রয়োজন। এডিনবরা কাউন্সিলের সাথে বাংলাদেশের যেকোন পৌরসভা বা শহরের টুইনিং পোগ্রাম চালু করার লক্ষ্যে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহন করা যেতে পারে। এছাড়া স্কটল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে গবেষনা প্রকল্প চালু করা যেতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন, স্কটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ক একটি ক্রস পার্টি গ্রুপ চালু হলে নানা কার্যক্রম গ্রহন করা আরও সহজ হবে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে ফয়ছল চৌধুরী এমবিই বলেন, ‘‘আমরা মাত্র কাজ শুরু করলাম। ধাপে ধাপে বিভিন্ন কর্মসুচী বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে কমিউনিটির নানা চাহিদা তুলে ধরা হবে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কিছু কিছু ব্যাপারে আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। আমি সবার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, দল মত নির্বিশেষে আসুনআমরা সবাই একসাথে মিলে মিশে কাজ করি।”
ফয়ছল চৌধুরী এমএসপি জানান, স্কটিশ পার্লামেন্টে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সাথে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে ভবিষ্যতে নানা কর্মসুচী যৌথভাবে পরিচালিত হবে।