সময় অসময়- ১৯ - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ৪:২৯, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

সময় অসময়- ১৯

banglanewsus.com
প্রকাশিত নভেম্বর ২০, ২০২১
সময় অসময়- ১৯

মীর লিয়াকত::

যখন মানুষ অসুস্থ হয়, হাসপাতালে-ক্লিনিকে অবস্থান করে তখন সেই রোগী মানুষটির কাছে ডাক্তারকে কেমন মনে হয় এ প্রশ্নটি করে রোগীর কাছে জানতে পেরেছিলাম পৃথিবীতে ডাক্তারের চেয়ে আপনজন আর কেউ নেই। অথচ সেই ডাক্তারই যদি তার নিজের দায়িত্ব পালন করেননা, রোগীকে সময় দেননা তখন সেই ডাক্তারকে কি মনে হয়? ডাক্তাররা যেখানে মানুষের জীবন মরন বিপদে ত্রাতার কাজ করেন অথচ তারাই যখন বিপথ বেছে নিয়ে অমানুষ হয়ে যান তখন আর কি বলার থাকে!

২৪ মে তারিখের একটি দৈনিক পত্রিকায় এক রিপোর্ট দেখা যায় ডাক্তাররা বর্তমানে ওষুধ কোম্পানী থেকে দেদার টাকা নিয়ে নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন। ওষুধ কোম্পানীর টাকা নিয়ে ডাক্তাররা শান সৌকতে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন, বাড়ীর ফার্নিচার নিজ বাড়ীর রুমগুলোর মাপ অনুযায়ী তৈরি করে নিচ্ছেন।
শুধু তাই নয় বিদেশে যাবার যাবতীয় খরচ, ফ্যামিলির এটাওটা অর্থ্যাৎ রেফ্রিজারেটর, এয়ারকুলার, টিভি-ডিভিডি, ল্যাপটপ ইত্যাদি ও ওষুধ কোম্পানীর টাকায় ডাক্তাররা বেমালুম কিনে নিচ্ছেন। কোম্পানীগুলোর রিপ্রেজেনটেটিভরা হন্যে হয়ে ডাক্তারের পেছনে লেগে আছেন। মাসিক বেতনের মতো দশহাজার, বিশহাজারের চেক ডাক্তারদের কছে পৌঁছে যাচ্ছে ঠিক সময়মতো। এতে তাদের কোন অবহেলা নেই। বিনিময়ে ডাক্তারদের কি করতে হয়? এমনি এমনি তো আর এ টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে না। বিনিময়ে লাগুক আর না লাগুক তাদের প্রেসক্রিপশনে কোম্পানীর ওষুধগুলো চোখ বুঝে মুখস্থ লিখলেন কিনা তার একটা তৎক্ষনিক পরীক্ষার জন্য ওষুধ কোম্পানীর আরেকটা গ্র“প তৎপর থাকে।

এতে কোনো রাখঢাক নেই। প্রেসক্রিপশন নিয়ে সেকি কাড়াকাড়ি! ঐ পত্রিকার তথ্য থেকে জানা যায় রিপ্রেজেনটেটিভরা কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কাও করেনা। ডাক্তারদের ব্যস্ত সময়ে (নঁংু যড়ঁৎ) তারা ডাক্তারদের কক্ষে ঢুকে রসলো গল্প জুড়ে দেন। ওটা ওটা উপহার দেন। এদিকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে রোগীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

ডাক্তাররা নির্দ্ধিধায় ঐসব কোম্পানীর ওষুধ তাদের পরামর্শমতো লিখছেন। বিবেক বিক্রী করা ডাক্তারদের কাছে নিজের কোম্পানীর ঔষধ না লিখলে কৈফিয়ত চাইতেও দ্বিধা করেন না রিপ্রেজেনটেটিভরা। গত বছরের শুরুর দিকে ম্যাডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভদের মাধ্যমে তরল স্যালাইন উৎপাদনকারী একটি ফার্মাসিটিক্যালস সারা দেশের ডাক্তারদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে। এ তালিকা ধরেই সর্বস্তরের ডাক্তারদের কাছে বিভিন্ন অংকের চেক পাঠানো হচ্ছে। এসব চেকগুলো এসি পেয়ী চেক। নির্দিৃষ্ট তারিখে রিপ্রেজেনটেটিভরা নির্দ্দিষ্ট ডাক্তারের কাছে চেক পৌছে দিচ্ছে। এ অর্থ ডাক্তারের কাজের সাফল্য হিসাবে ধরা হয় হয় এবং এর ওপর তাদের কোম্পানী থেকে ইনসেনটিভ দেয়া হয়।

সাধারণত: কয়েকবছর ইতোমধ্যে চাকরী করেছেন এমন বিশ্বস্থ রিপ্রেজেনটেটিভদের ওপরই দেয়া হয় সরাসরি টাকা লেনদেনের বিশেষ দায়িত্ব। এসব চেক গ্রহন এখন ডাক্তারদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এতে দুর্বলচিত্তের ডাক্তাররা নিজের বিবেকের কাছে পরাজিত হচ্ছে। হাতের মুঠোয় এরকম লোভনীয় নিয়মিত অফার কি করে অবজ্ঞা করবেন ডাক্তাররা। ডাক্তারদের মধ্যে বিবেকবান যারা তারাও শেষ পর্যন্ত গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের ধারনা এটি একটি প্রচলিত ব্যাপার। না নিলেই বরং ক্ষতি। কারন সবাই তো নির্দ্ধিধায় নিচ্ছেন।

পত্র পত্রিকায় এসব লিখলেও কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গে না। শোনা যায় কোন কোন রিপ্রেজেনটেটিভ নাকি এসব কথা পত্র পত্রিকায় এলে হাস্যরসও করেন। তাদের ভাষ্য হলো এটা তো দোষের কিছু না। চুরিও নয় ডাকাতিও নয়। ডাক্তারকে তো ওষুধ লিখতেই হবে। যাতে তাদের কোম্পানীরটা লেখেন এজন্য কোম্পানী খুশি হয়ে উপঢৌকন দিলে এতে কার ক্ষতি। এটাকে বরং কোম্পানীর পৎবফরঃ হিসেবে দেখানো ভালো। উপঢৌকন একজন একজনকে দিতেই পারে। কিন্তু মানুষের জীবন রক্ষাকারী ওষুধে ফাঁকিঝুঁকির জন্য উপঢৌকন? যুক্তরাজ্য, ভারত ইত্যাদি দেশে উপঢৌকন গ্রহনে বিধিনিষেধ আরোপ করে আইন আছে। যুক্তরাজ্যে ডাক্তারদের পাঁচ থেকে সাত পাউন্ড মূল্য মানের উপঢৌকন নেওয়ার বিধান আছে। এর বেশি নয় এবং নগদ তো নয়ই। ভারতে ওষুধ কোম্পানীর কাছ থেকে ‘উপহার’ নিলে শাস্তি হিসাবে চিকিৎসা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেদেশের ডাক্তারদের সংগঠন ‘গবফরপধষ ঈড়ঁহপরষ ড়ভ ওহফরধ’. কঠোরভাবে ভারতে এ নিয়ম মেনে চলা হয়। আমাদের দেশে এমন আইন করলে গোনাহ্ হবে কেন? আমাদের দেশে আইনের পর আইন হয়, সংবিধানে অদলবদল হয় কিন্তু মানবিক এ আইনটি করে নিলে অসুবিধাটা কোথায়?
ভারত ও বাংলাদেশ দুটিই তো গনতান্ত্রিক দেশ। মানুষের স্বার্থে ভারতে আইন হয় আমাদের এমন হবে না কেন?  পার্থক্য হচ্ছে ভারতে রাজনীতিকরা রাজনীতি করেন দেশের স্বার্থে। আমাদের দেশের রাজনীতিতে এমন করলে ক্ষতি কি? চিকিঃসার জন্য আমরা সে দেশে ছুটে যাই, আমাদের দেশে যদি এমন মানবিক দিকটি দেখা হয় তাহলে চিকিৎসা তো আমাদের দেশেই ভালো হতে পারে। ভালো একটি বিষয় নিতে তো আমাদের আপত্তিি থাকার কথা নয়। সরকার ও জনগন যদি এই ব্যাপারটি আন্তরিকভাবে দেখতে পারেন তাহলে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাও বহুদূর এগিয়ে যাবে এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। আমাদের দেশে তো মেধার কমতি নেই। শুধু প্রয়োজন আন্তরিক প্রয়াস। আমাদের ভুলগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। নিশ্চই সংশ্লিষ্টরা ভুলগুলো বুঝতে সক্ষম হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো এই আইনটি করা হলে জনপ্রিয়তা বেড়ে গেলে ক্ষমতায় যেতে কিংবা টিকে থাকতে এই দুই রাজনীতিও তো উপকৃত হয় একথা আমাদের বুঝতে কষ্ট হয় কেন? জনগন কি তাদের স্বার্থে কাজ করার বিষয়টি বুঝবেন না? এইযে দেশে ওষুধ কোম্পানী ও ডাক্তারদের ওপেন সিক্রেট দুস্কর্মটি চলছে তাকি কারো চোখে পড়ছেনা? মানসম্পন্ন ও কার্যকর ওষুধ কোনটি, কি কি ক্যামিক্যালস ওষুধে আছে ততো ডাক্তাররা এমনিতেই জানেন। সেক্ষেত্রে কোম্পানীগুলো ডাক্তারদের মধ্যে অর্থ বিতরন না করে বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নিতে পারেন। মানুষকি সখে চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়? এসব নীতিবর্জিত অমানবিক কার্যকলাপ মানুষ বুঝতে পেরেই ভারতের উপর চিকিৎসার জন্য নির্ভর করে। সাধারন দৃষ্টিতে বাংলাদেশের মফস্বল অঞ্চলে ডাক্তারদের কাছে লাইন ধরলে ওষুধ কোম্পানীর পালাক্রমে আনাগোনা চোখে পড়ে। বড় বড় শহর নগরের কথা না হয় বাদ। ডাক্তাররা রোগীদের অপেক্ষা করিয়ে একজনের পর একজন রিপ্রেজেনটেটিভকে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন। দরদাম করছেন। ফলে সর্দি হলেও সাত আটটি ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে দেয়া হচ্ছে।

কোম্পানীর শর্ত অনুযায়ী ডাক্তারদের না লিখে কোন গতি নেই। অনেক রিপ্রেজেনটেটিভ মফস্বল শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে কিংবা মেস করে থাকছেন। যাতে তাদের দখলে থাকা ডাক্তাররা আরেকজনের খপ্পরে পড়তে না পারেন এখানেও রয়েছে এক ধরনের প্রতিযোগীতা। ফার্মেসীতে বসে থেকে তারা খবর রাখেন কোন ডাক্তার কোন ওষুধ লেখেন। তাদের পছন্দমতো না লিখলেই ডাক্তারদের বিপদ! লেনদেন বিভ্রাট! এ অমানবিক অবস্থান থেকে দেশকে মুক্ত করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার কঠোর আইন করে এ বিবেকবর্জিত কাজ থেকে জাতিকে রক্ষা করুন! আমিন!!

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।