থার্ড আই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের তৃতীয় চোখ - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, বিকাল ৩:৫২, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

থার্ড আই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের তৃতীয় চোখ

newsup
প্রকাশিত নভেম্বর ২৫, ২০২১
থার্ড আই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের তৃতীয় চোখ

নিউজ ডেস্কঃ 

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘থার্ড আই’ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে

আরাফাতুল ইসলাম ফয়সাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থী। তবে আর দশজন সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো ফয়সালের জীবনটা সহজ সমীকরণের নয়। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি অনুরাগ ছিল ফয়সালের। স্বপ্ন দেখতেন দেশসেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় নিজের নামটা লিখিয়ে নেওয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই খেলাধুলাই অভিশাপ হয়ে আসে তার জীবনে।

২০১১ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালে একদিন ক্রিকেট খেলার সময় প্রতিপক্ষের ব্যাট ছুঁয়ে ফিরে আসা বল সজোরে আঘাত করে ফয়সালের চোখে। মুহূর্তের মধ্যে তার রঙিন পৃথিবী বিবর্ণ হয়ে আসে। যে চোখের দৃষ্টিশক্তি তাকে এক সময় বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখাতো সেই চোখেই মুহূর্তেই নেমে আসে বিষাদের কালো ছায়া। এরপর দেশে ও দেশের বাইরে চিকিৎসা করানো হলেও আর কখনো ফিরে আসেনি ফয়সালের চোখে দীপ্তি।

এমন এক দুর্ঘটনার পর স্বভাবতই ফয়সালের শিক্ষাজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ ও হতাশা। ভেঙে যাওয়া স্বপ্নটাকে নতুন করে জোড়া লাগিয়ে স্বপ্ন দেখেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। অবশেষে সুযোগ পান দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পড়াশোনা ও পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বই-শিট সংগ্রহ, শ্রুতিলেখক জোগাড় করা সহ নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয় তাকে। এমনই দুঃসময়ে ফয়সালের পাশে এসে দাঁড়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘থার্ড আই’, যারা মূলত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বদা নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

গল্পের শুরুটা হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এক স্বপ্নবাজ তরুণ মাশরুর ইশরাকের হাত ধরে। তখন ২০১৮ সাল। অক্টোবর মাসে তিনি দেখলেন অন্যান্য শিক্ষার্থীরা যখন ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত, তখন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা নিরুপায় হয়ে বসে আছেন। কারণ, তাদের পড়াশোনার জন্য শিট রেকর্ড ও পরীক্ষার জন্য শ্রুতিলেখক পাওয়া যাচ্ছেনা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন প্রতিবছরই এরকম সমস্যার সম্মুখীন হন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা।

ইশরাক সিদ্ধান্ত নিলেন পরীক্ষার পরই তিনি এমন একটা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করবেন যা পরীক্ষার এই মৌসুমসহ সারাবছর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সহায়তায় কাজ করে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ! ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ৮ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে যাত্রা শুরু করে থার্ড আই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কথা মাথায় রেখে থার্ড আই এর যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে তা চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ছাড়াও ঢাকা, রাজশাহী, ফেনী, যশোরসহ অনেকগুলো বিভাগীয় ও জেলা শহরে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের উল্লেখযোগ্য কিছু কাজের মধ্যে রয়েছে- পাঠ্যপুস্তকের বিষয়গুলো অডিও রেকর্ড করা, শ্রুতিলেখক হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সেশন ও সেমিনার আয়োজন।

চাকরির প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো অডিও বানানোর কাজেও হাত দিয়েছে সংগঠনটি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল কাজকে সারাদেশের মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত কন্টেন্ট আপলোড দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের যেকোনো যৌক্তিক দাবি ও অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার থাকার ব্যাপারেও বেশ সচেতন ভূমিকা পালন করে আসছে সংগঠনটি।

২০৩০ সালের মধ্যে সংগঠনটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব প্রতিবদ্ধী ব্যক্তিদের তাদের সেবার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যেই প্রতিবন্ধীসহ তাদের ভলান্টিয়ারদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিষ্ঠা করেছে থার্ড আই হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট,  যার মাধ্যমে কারিগরি ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে একটি কর্মমুখী জনগোষ্ঠী তোলার ক্ষেত্রেও কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। শিক্ষা অর্জনে যেন লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ কিংবা প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ‘থার্ড আই’ এগিয়ে চলেছে আপন শক্তিতে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।