ভাইবোনের বৃত্তির টাকায় গড়া সংগঠন
২৮ নভে ২০২১, ০৯:৩৪ অপরাহ্ণ

নিউজ ডেস্কঃ
বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন, সে সুবাদে কাওসারের শৈশব কেটেছে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে। বাবার অবসরগ্রহণের পর পুরো পরিবার চলে আসে কুমিল্লার দাউদকান্দির গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই স্কুলে ভর্তি হন কাওসার। প্রতিদিন স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে দেখতেন দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। অভাবের তাড়নায় জুটছে না পড়ালেখার সুযোগ। আর অনেক পরিবারই বোঝা মনে করে ছোট ছোট মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছে অল্পবয়সেই। এমন নানা ঘটনা দেখে কাওসারের মনে নাড়া দিতো। ভাবতেন, তাদের জন্য কিছু করবেন।
কাওসার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ছোটবোন ফারজানা আক্তার সুমি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। সেনা কল্যাণ সংস্থা থেকে বৃত্তি পেতেন দুই ভাইবোন। একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজেদের বৃত্তির টাকা দিয়েই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জামা-কাপড়, বই ও খাতা-কলম কিনে দেবেন তারা। বৃত্তির টাকা দিয়েই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা উপকরণ কেনা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও শিশুশ্রম বন্ধে জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হলো।
২০১১ সালে দুই ভাই বোন মিলে ভাবলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়বেন। এতে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সদস্য হবে এবং তাদের প্রতি মাসের একদিনের টিফিনের ১০ টাকা দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করা হবে। এভাবে ২০১১ সালের ২৪ মে যাত্রা শুরু হয় লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘের। আলাপচারিতায় এমনটিই জানাচ্ছিলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কাওসার আলম সোহেল।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘ’ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিশুশ্রম বন্ধ, শিশুদের পাঠদান, স্কুলে ভর্তি করা ও তাদের মাঝে খাবার ও পোষাক বিতরণ করে আসছে। এছাড়া মাদক, বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং, ধর্ষণ ও দুর্নীতি বিরোধী সভা সেমিনারের মাধ্যমে সচেতন করা, সকল অন্যায়গুলোর বিরুদ্ধে লাল কার্ড প্রদর্শন ও শপথ করানো’র কাজও করছেন তারা। প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে তুলে ধরা হয় নানাবিধ ভাবনা। এছাড়াও সদস্যদের টিফিনের টাকায় প্রতি বছর এক লাখ গাছের চারা বিতরণ ও রোপণ করে লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘ। ইতোমধ্যেই সাড়ে ৫ লাখ গাছের চারা রোপণ করেছে সংগঠনটি। দেশের ৬৪ জেলায় কাজ করছেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা।
কাওসার আলম সোহেল বলেন, দেশটা সবার। এই দেশকে মাদক, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে সবার এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশ অর্থনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মানবিকতায়ও এগোতে হবে সমানতালে। যারা বড় চাকরি করেন তারা তো বটেই, এছাড়া প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্য অনুযায়ী সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।