নিউজ ডেস্কঃ
মাত্র পাঁচ বছরে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান, ইরাক এবং সিরিয়ায় অর্ধলক্ষাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে – ফাইল ছবি
পেন্টাগনের নতুন নথিতে দেখা যাচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বিমান হামলা ‘অত্যন্ত ত্রুটিযুক্ত গোয়েন্দা’ তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। এতে ভুল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে। ফলে শিশুসহ সহস্রাধিক বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। পত্রিকাটি ১৩০০টিরও বেশি গোপনীয় নথির ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, প্রিসিসন বোমা দিয়ে পরিচালিত ওই যুদ্ধে হতাহতের চিত্রকে কমিয়ে দেখানো হয়েছে। অভিযানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতিও দেখা গেছে। কিন্তু একটি ভুলের ঘটনার কথাও স্বীকার করা হয়নি কিংবা দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।
পত্রিকাটির তদন্তে দেখা গেছে, বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল ২০১৬ সালের জুলাইয়ে উত্তর সিরিয়ার একটি গ্রামে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর বোমা হামলায় মৃত্যুর ঘটনা। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) তিনটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলায় ৮৫ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে দাবি করা হয়। তবে দেখা গেছে, সেখানে ১২০ জন কৃষক ও গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়।২০১৫ সালের নভেম্বর ইরাকের রামাদিতে ইসলামিক স্টেটের অবস্থানে হামলার পর একজনকে ‘একটি অজানা ভারী বস্তু’ টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সেই বস্তুটি ছিল একটি শিশু। সে ওই হামলায় মারা যায়। টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বল বা অপর্যাপ্ত নজরদারি ফুটেজ প্রায়ই ভুল লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে।
গত আগস্টে কাবুলের রাস্তায় একটি গাড়িতে ড্রোন হামলার পর আইএস জঙ্গিদের হত্যার দাবি করেছিল পেন্টাগন। তবে পরে দেখা গেছে, সেখানে শিশুসহ একটি পরিবারের ১০ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ভুল স্বীকার করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শত শত মৃত্যু ছাড়াও মার্কিন হামলায় বেঁচে যাওয়া অনেক বেসামরিক নাগরিক পঙ্গু হয়ে পড়েন। তাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেক ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র শোক প্রকাশও করেনি।
এ ব্যাপারে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন বিল আরবান বলেন, ‘বিশ্বের সেরা প্রযুক্তিতেও ভুল হয়। সেটা অসম্পূর্ণ তথ্যের কারণে কিংবা প্রাপ্ত তথ্যের ভুল ব্যাখ্যার কারণেও হতে পারে। আমরা সেই ভুলগুলো থেকে শেখার চেষ্টা করি। আমরা প্রতিটি বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা তদন্ত করি এবং প্রতিটি নির্দোষ জীবনের ক্ষতির জন্য অনুতপ্ত।’
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের শেষ বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বিমান অভিযান দ্রুত বৃদ্ধি পায়। পেন্টাগন তাদের প্রযুক্তি নিয়ে দম্ভ করে বলেছিল, নতুন প্রযুক্তিতে শত্রুযোদ্ধায় ভরা একটি বাড়ির একটি অংশ ধ্বংস করার সময় অবশিষ্ট কাঠামোটি দাঁড়িয়েই ছিল।
মাত্র পাঁচ বছরে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান, ইরাক এবং সিরিয়ায় অর্ধলক্ষাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। টাইমসের সাংবাদিকরা প্রতিবেদনটি তৈরি করতে ১০০টিরও বেশি হতাহতের স্থান পরিদর্শন; বেঁচে থাকা বাসিন্দাদের এবং বর্তমান ও সাবেক আমেরিকান কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।