সময় অসময়- ২০
০৮ জানু ২০২২, ০৭:০৯ অপরাহ্ণ

মীর লিয়াকত:
সংস্কৃতি একটি দেশের মুল পরিচয় তুলে ধরতে সবচেয়ে বড় সহায়ক ভুমিকা পালন করে থাকে। আবার এ কথাও অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে, সাস্কৃতিক বিপর্যয় একটি দেশের ধ্বংসও ডেকে আনতে পারে।
বাংলাদেশও কী চরম বিপন্নতায় বিপর্যস্ত হবে? সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে যে দেশে একসময় ছেলে মেয়ে নিজ থেকে পছন্দ করে বিয়ে করাও ছিলো চরম সামাজিক সমালোচনার বিষয়। কারো মেয়ে কোনো ছেলের হাত ধরে চলে গেলে বাবা-মায়ের মুখ দেখানো ছিলো চরম আত্মশ্লাঘার বিষয়। কিন্তু এদেশে ডিসঅ্যান্টেনা চালু করার পর বিজাতীয় নগ্ন আকাশ সংস্কৃতি আবহমান বাংলার সে ঐতিহ্য ভেঙে দেয়। রাতারাতি পরিবর্তন সুচিত হয়।
এখন হরহামেশাই ছেলে নিজ পছন্দে বিয়ে করে বউ ঘরে তুলছে। মেয়ে নিজ পছন্দে কারো তোয়াক্কা না করে কোর্ট-ম্যারেজ করে বাবা-মাকে টাটা দিতেও কুন্ঠা বোধ করছে না। সে বিয়ে থাকাতেই নতুন করে পরকীয়া হচ্ছে।
আবার বিয়ে ছাড়াও লিভ টুগেদার চলছে। এমনকি ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশ আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের বিপরীতে চরম অপাঙক্তেয় হলেও সত্য যে, এই সমাজে এখন সমকামী পুরুষ তথা ‘গে’র প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। তার কুফলও অবশ্য হাতে-নাতে ধরা পড়ছে। ‘১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইচআইভি ধরা পড়ার পর গত ২৩ বছরে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। । ২০১০সালে দেশে ৩৪৩ জন এইচআইভি আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে এইডস ধরা পড়ে ২৩১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জনের। অন্যদিকে, ২০০৯ সালে ২৫০ জন এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ১৪৩ জনের এইডস সনাক্ত হয় এবং মারা যায় ৩৯ জন।’
এইডস। ঘাতক ব্যাধি। মারন ব্যাধি! যেখানে মৃত্যুর কোন বিকল্প নেই। ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম এর ভাইরাস- এইচআইভি সনাক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রে এবং ১৯৮৩ সালে এইচআইভি ভাইরাস এইডসের মূল কারণ উলেখ করা হয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বের অনেক দেশেই এ রোগের বিস্তার পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বব্যাপী এইডসের সামপ্রতিক বিস্তারচিত্র আশঙ্কাজনক। প্রতিদিন ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এইডসে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০০৫ সালেই বিশ্বে প্রায় ৩১ লাখ লোক এই ব্যাধিতে মৃত্যুবরণ করে। আফ্রিকায় এইডস পরি¯িথতি সবচেয়ে নাজুক। প্রতিবেশী দেশ ভারত, মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডে এইডস দ্রুত বিস্তার লাভ করছে।
ভারতে প্রতি হাজারে সাত জন এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারাবিশ্বে ৪ কোটির বেশি মানুষ এইচআইভি জীবাণু বহন করছে। ২০০৭ সালের জরিপ অনুযায়ী এইডসে আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে আনুমানিক ৩৩ দশমিক ২ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন, যার মধ্যে ৩ লাখ ৩০ হাজার শিশু রয়েছে। বিশ্বব্যাপী নতুনভাবে এইচআইভিতে আক্রান্তদের পঞ্চাশ শতাংশই হচ্ছে যুবসমাজ। এইডস বিস্তারের সবচেয়ে উলেখযোগ্য কারণ হচ্ছে সমকামিতা। এ সমস্যা অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও ঢুকে গেছে।
একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় এখানে পেশাদার পতিতার সাপ্তাহিক গড় যৌনসঙ্গী গ্রহণ সংখ্যা প্রায় ৫০ জন। কোন কোন ক্ষেত্রে একজন পতিতা দিনে রাতে পনেরো বিশজন যৌনসঙ্গীও গ্রহন করে! কী পৈশাচিক!!
এটি একটি ভীতিকর অমানবিক অবস্থা। উলেখ্য, অনৈতিক যৌন মিলনের এইডস রোগের বিস্তার ঘটে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভারতে এইডস আক্রান্ত নারীদের উলেখযোগ্য অংশই আক্রান্ত হয়েছে তাদের স্বামীদের মাধ্যমে। আশির দশকের শুরুর দিকে সে দেশে এইচআইভি পজিটিভ নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা ছিলো অনেক বেশি।
কিন্তু এরপর থেকেই পজিটিভ নারীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। বর্তমানে সেখানে এইচআইভি পজিটিভের অর্ধেকই নারী। বাংলাদেশের চিত্রও প্রায় কাছাকাছি। দক্ষিণ এশিয়ার যেসব দেশে পাচারপ্রবণতা বেশি তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। পাচার হয়ে হওয়া এসব নারীর অধিকাংশই যৌন ব্যবসায় নিয়োজিত হতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশে নিবন্ধিত পতিতালয়সহ ভাসমান পতিতারা এইডস বিস্তারের একটি বড় কারণ। তাছাড়া সমকামিতা ও বিকৃত যৌনকর্মের কারণেও এর বিস্তার হচ্ছে।
সংবাদপত্রে প্রাপ্ত একটি জরিপ থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের শতকরা ৬৯ ভাগ ট্রাক ড্রাইভার এবং রিকশাচালক পতিতাদের সঙ্গে যৌনকর্মে মিলিত হয়। এর মধ্যে ট্রাক শ্রমিকের শতকরা ৫২ ভাগ এবং রিকশাচালকদের শতকরা ৭৫ ভাগ বিবাহিত। ফলে এদের স্ত্রীদের এইডসে আক্রান্ত হওয়ার হার শতকরা প্রায় ৬ ভাগ। এখন পর্যন্ত এইডস রোগ নিরাময়ের কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। অবশ্য কোনো কোনো ওষুধ এই রোগকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসব ওষুধের দাম অত্যন্ত বেশি হওয়ায় বেশির ভাগ এইডস রোগী সেগুলো কেনার ক্ষমতা রাখে না। তাই এইডস রোগ বিষয়ক ১৮তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব ওষুধের দাম কমানোর ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।
সত্তরের দশকে শুরু হলেও এইডস রোগের আক্রমণ প্রথমবারের মত ধরা পড়ে ১৯৮১ সালে। এরপর এই রোগ বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তা পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়। এ পর্যন্ত বিশ্বে আড়াই কোটি মানুষ এইডস রোগে মারা গেছে। এইডস বিশ্বে মানুষের করুণ মৃত্যুর চতুর্থ বৃহৎ কারণে পরিণত হয়েছে। তবে এ রোগই আফ্রিকা মহাদেশে মানুষের সবচেয়ে বড় ঘাতক। এইডসে আক্রান্তদের বেশির ভাগই যুব বয়সী।
এ রোগ যতটা ভয়াবহ ততটা যেন আমলেই নিচ্ছে না যুবক বয়েসীরা। তার কারন তারা সাময়িক আনন্দকেই বড় করে দেখছে। ভয়বহতার তীব্রতা তার অনুধাবন করতে আগ্রহী নয়।
বিশ্বের বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় সারা বিশ্বের ৫০ লক্ষ এইডস রোগীর বয়স ১৫ বছরেরও কম। কী ভয়ঙ্কর! বর্তমানে বিশ্বে এইডস রোগীর সংখ্যা চার কোটি। এইডস রোগীদের শতকরা ৯৫ ভাগই উন্নয়নশীল কিংবা স্বল্প উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবীর জনবসতিকে দশটি অঞ্চলে ভাগ করেছে। এসব অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে কম এইডস রোগী রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায়। এ অঞ্চলের শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ মুসলমান। মুসলমানরা নৈতিক বিধি-বিধানের প্রতি বেশ গুরুত্ব দেয় বলেই তাদের মধ্যে এইডস রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
বাংলাদেশে এইডস ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারন এ দেশীয় নিজস্ব ধর্মীয় ভাবগম্ভীর কালচারকে সরিয়ে দিয়ে বিদেশী বিজাতীয় নগ্ন কালচার এর অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে অত্যন্ত চাতুর্যপূর্ণভাবে। এখন পাশ্চাত্য সমকামিতা তথা ‘গে’ ধারণার চর্চা হচ্ছে। আর তার পরিণতি স্বরূপ বাড়ছে এইডসের সংখ্যা, অভিশপ্ত মৃত্যুর সংখ্যা। তাই এই অভিশপ্ত বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে এবং কু-সংসর্গ ত্যাগ করতে হবে। যদি বিভিন্ন প্রভাবের কারনে হয়ে থাকে তাহলে নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য কৌশল নিজেদেরই খুঁজে বের করতে হবে।
আমরা কিভাবে চলবো সেটা আমাদের ব্যাপারÑ অন্যদের দেখানো নোংরা পথে আমরা হাটতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে মরবো অথচ আমাদের কোন কথা থাকবে নাÑ এ কেমন পশুত্ব! কিছু কিছু বুদ্ধিব্যবসায়ী ন্যাংটো হয়ে চলাকে অগ্রসর আধুনিকতা বলেন।
এটা কাদের খুশি করার জন্যে বলেন এটা কেবল তারাই জানেন। হয়তো এই বলাটুকুর মাধ্যমে তারা নিজেদের প্রগতির ধারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে অমর হতে চান।
এদের একটি অংশ পবিত্র ঈদ কিংবা পুজাকে উৎসব মনে না করে পহেলা বৈশাখকে বাঙ্গালীর প্রধান উৎসব আখ্যা দিতে চান। তার কারনও একটা আছে। কারন ঈদ পুজায় ধর্মীয় অনুভুতি থেকে কুকাজ করা থেকে মানুষকে বিরত থাকতে হয়Ñ ঐসব বুদ্ধিব্যবসায়ীরা যাকে প্রগতি বলেন নাÑ বলেন কুসংস্কার! আর পহেলা বৈশাখে নিজ নিজ কাপড় খুলে রাস্তায় বেরিয়ে এলে Ñ গোপন অঙ্গ দুলিয়ে পাছা নৃত্য করার ঢঙ দেখে তারা পুলকিত বোধ করেন এইজন্য যে দেশ আধুনিকতায় এগিয়ে যাচ্ছেÑ কু-সংস্কার উঠে যাচ্ছে। এই হলো তাদের প্রগতির ষ্টেজ! এই হলো তাদের প্রগতির সিস্টেম! তবে হ্যাঁÑ যদি বৈশাখে মার্জিত রুচিতে কিছু করা হয় তা অবশ্যই গ্রহনযোগ্যতা পাবে Ñ কারন বৈশাখ মিশে আছে বাঙালীর হৃদপিন্ডে।
নিজেদের জাতিগত স্বার্থে নিজেরা কাজ করলে ক্ষতিটা কোথায়! অন্যথায় আমাদের কপালে দুখের সীমা থাকবে না এ কথা বলাই বাহুল্য। নিজেদের সংস্কৃতি নিজেদের মতো করে ধারন করা কি ব্যাক-ডেটেড কিছু?
বিজাতীয় প্রভাব বলয়ে থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরাই বলতে পারছেÑ ‘সারা বিশ্ব যা করছে Ñ আমাদেরও তা করতে হবেÑ আমরা কি বসে বসে আঙ্গুল চুষবো?’
অর্থ্যাৎ বিদেশেী ন্যাংটো পদ্ধতিতে থাকলেই আধুনিক হওয়া যায়! ন্যাংটো হলে যে আধুনিক নয় Ñযেতে হয় পেছনের দিকেÑ সেই আদিম যুগে। আদিম যুগেইতো মানুষ ন্যাংটো ছিল। তাহলে সেটা কি ব্যাক-ডেটেড নয়? তাহলে ঐ যুগই ছিলো প্রকৃত আধুনিক! শুধু আধুনিক নয় অত্যাধুনিক! না কি উলঙ্গ আধুনিক!!
কোনটা প্রকৃত আধুনিক এটা তাদের বোঝাবে কে?
বাংলাদেশও কী চরম বিপন্নতায় বিপর্যস্ত হবে? সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে যে দেশে একসময় ছেলে মেয়ে নিজ থেকে পছন্দ করে বিয়ে করাও ছিলো চরম সামাজিক সমালোচনার বিষয়। কারো মেয়ে কোনো ছেলের হাত ধরে চলে গেলে বাবা-মায়ের মুখ দেখানো ছিলো চরম আত্মশ্লাঘার বিষয়। কিন্তু এদেশে ডিসঅ্যান্টেনা চালু করার পর বিজাতীয় নগ্ন আকাশ সংস্কৃতি আবহমান বাংলার সে ঐতিহ্য ভেঙে দেয়। রাতারাতি পরিবর্তন সুচিত হয়।
এখন হরহামেশাই ছেলে নিজ পছন্দে বিয়ে করে বউ ঘরে তুলছে। মেয়ে নিজ পছন্দে কারো তোয়াক্কা না করে কোর্ট-ম্যারেজ করে বাবা-মাকে টাটা দিতেও কুন্ঠা বোধ করছে না। সে বিয়ে থাকাতেই নতুন করে পরকীয়া হচ্ছে।
আবার বিয়ে ছাড়াও লিভ টুগেদার চলছে। এমনকি ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশ আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের বিপরীতে চরম অপাঙক্তেয় হলেও সত্য যে, এই সমাজে এখন সমকামী পুরুষ তথা ‘গে’র প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। তার কুফলও অবশ্য হাতে-নাতে ধরা পড়ছে। ‘১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইচআইভি ধরা পড়ার পর গত ২৩ বছরে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। । ২০১০সালে দেশে ৩৪৩ জন এইচআইভি আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে এইডস ধরা পড়ে ২৩১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জনের। অন্যদিকে, ২০০৯ সালে ২৫০ জন এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ১৪৩ জনের এইডস সনাক্ত হয় এবং মারা যায় ৩৯ জন।’
এইডস। ঘাতক ব্যাধি। মারন ব্যাধি! যেখানে মৃত্যুর কোন বিকল্প নেই। ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম এর ভাইরাস- এইচআইভি সনাক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রে এবং ১৯৮৩ সালে এইচআইভি ভাইরাস এইডসের মূল কারণ উলেখ করা হয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বের অনেক দেশেই এ রোগের বিস্তার পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বব্যাপী এইডসের সামপ্রতিক বিস্তারচিত্র আশঙ্কাজনক। প্রতিদিন ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এইডসে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০০৫ সালেই বিশ্বে প্রায় ৩১ লাখ লোক এই ব্যাধিতে মৃত্যুবরণ করে। আফ্রিকায় এইডস পরি¯িথতি সবচেয়ে নাজুক। প্রতিবেশী দেশ ভারত, মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডে এইডস দ্রুত বিস্তার লাভ করছে।
ভারতে প্রতি হাজারে সাত জন এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারাবিশ্বে ৪ কোটির বেশি মানুষ এইচআইভি জীবাণু বহন করছে। ২০০৭ সালের জরিপ অনুযায়ী এইডসে আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে আনুমানিক ৩৩ দশমিক ২ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন, যার মধ্যে ৩ লাখ ৩০ হাজার শিশু রয়েছে। বিশ্বব্যাপী নতুনভাবে এইচআইভিতে আক্রান্তদের পঞ্চাশ শতাংশই হচ্ছে যুবসমাজ। এইডস বিস্তারের সবচেয়ে উলেখযোগ্য কারণ হচ্ছে সমকামিতা। এ সমস্যা অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও ঢুকে গেছে।
একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় এখানে পেশাদার পতিতার সাপ্তাহিক গড় যৌনসঙ্গী গ্রহণ সংখ্যা প্রায় ৫০ জন। কোন কোন ক্ষেত্রে একজন পতিতা দিনে রাতে পনেরো বিশজন যৌনসঙ্গীও গ্রহন করে! কী পৈশাচিক!!
এটি একটি ভীতিকর অমানবিক অবস্থা। উলেখ্য, অনৈতিক যৌন মিলনের এইডস রোগের বিস্তার ঘটে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভারতে এইডস আক্রান্ত নারীদের উলেখযোগ্য অংশই আক্রান্ত হয়েছে তাদের স্বামীদের মাধ্যমে। আশির দশকের শুরুর দিকে সে দেশে এইচআইভি পজিটিভ নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা ছিলো অনেক বেশি।
কিন্তু এরপর থেকেই পজিটিভ নারীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। বর্তমানে সেখানে এইচআইভি পজিটিভের অর্ধেকই নারী। বাংলাদেশের চিত্রও প্রায় কাছাকাছি। দক্ষিণ এশিয়ার যেসব দেশে পাচারপ্রবণতা বেশি তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। পাচার হয়ে হওয়া এসব নারীর অধিকাংশই যৌন ব্যবসায় নিয়োজিত হতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশে নিবন্ধিত পতিতালয়সহ ভাসমান পতিতারা এইডস বিস্তারের একটি বড় কারণ। তাছাড়া সমকামিতা ও বিকৃত যৌনকর্মের কারণেও এর বিস্তার হচ্ছে।
সংবাদপত্রে প্রাপ্ত একটি জরিপ থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের শতকরা ৬৯ ভাগ ট্রাক ড্রাইভার এবং রিকশাচালক পতিতাদের সঙ্গে যৌনকর্মে মিলিত হয়। এর মধ্যে ট্রাক শ্রমিকের শতকরা ৫২ ভাগ এবং রিকশাচালকদের শতকরা ৭৫ ভাগ বিবাহিত। ফলে এদের স্ত্রীদের এইডসে আক্রান্ত হওয়ার হার শতকরা প্রায় ৬ ভাগ। এখন পর্যন্ত এইডস রোগ নিরাময়ের কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। অবশ্য কোনো কোনো ওষুধ এই রোগকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসব ওষুধের দাম অত্যন্ত বেশি হওয়ায় বেশির ভাগ এইডস রোগী সেগুলো কেনার ক্ষমতা রাখে না। তাই এইডস রোগ বিষয়ক ১৮তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব ওষুধের দাম কমানোর ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।
সত্তরের দশকে শুরু হলেও এইডস রোগের আক্রমণ প্রথমবারের মত ধরা পড়ে ১৯৮১ সালে। এরপর এই রোগ বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তা পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়। এ পর্যন্ত বিশ্বে আড়াই কোটি মানুষ এইডস রোগে মারা গেছে। এইডস বিশ্বে মানুষের করুণ মৃত্যুর চতুর্থ বৃহৎ কারণে পরিণত হয়েছে। তবে এ রোগই আফ্রিকা মহাদেশে মানুষের সবচেয়ে বড় ঘাতক। এইডসে আক্রান্তদের বেশির ভাগই যুব বয়সী।
এ রোগ যতটা ভয়াবহ ততটা যেন আমলেই নিচ্ছে না যুবক বয়েসীরা। তার কারন তারা সাময়িক আনন্দকেই বড় করে দেখছে। ভয়বহতার তীব্রতা তার অনুধাবন করতে আগ্রহী নয়।
বিশ্বের বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় সারা বিশ্বের ৫০ লক্ষ এইডস রোগীর বয়স ১৫ বছরেরও কম। কী ভয়ঙ্কর! বর্তমানে বিশ্বে এইডস রোগীর সংখ্যা চার কোটি। এইডস রোগীদের শতকরা ৯৫ ভাগই উন্নয়নশীল কিংবা স্বল্প উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবীর জনবসতিকে দশটি অঞ্চলে ভাগ করেছে। এসব অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে কম এইডস রোগী রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায়। এ অঞ্চলের শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ মুসলমান। মুসলমানরা নৈতিক বিধি-বিধানের প্রতি বেশ গুরুত্ব দেয় বলেই তাদের মধ্যে এইডস রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
বাংলাদেশে এইডস ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারন এ দেশীয় নিজস্ব ধর্মীয় ভাবগম্ভীর কালচারকে সরিয়ে দিয়ে বিদেশী বিজাতীয় নগ্ন কালচার এর অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে অত্যন্ত চাতুর্যপূর্ণভাবে। এখন পাশ্চাত্য সমকামিতা তথা ‘গে’ ধারণার চর্চা হচ্ছে। আর তার পরিণতি স্বরূপ বাড়ছে এইডসের সংখ্যা, অভিশপ্ত মৃত্যুর সংখ্যা। তাই এই অভিশপ্ত বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে এবং কু-সংসর্গ ত্যাগ করতে হবে। যদি বিভিন্ন প্রভাবের কারনে হয়ে থাকে তাহলে নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য কৌশল নিজেদেরই খুঁজে বের করতে হবে।
আমরা কিভাবে চলবো সেটা আমাদের ব্যাপারÑ অন্যদের দেখানো নোংরা পথে আমরা হাটতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে মরবো অথচ আমাদের কোন কথা থাকবে নাÑ এ কেমন পশুত্ব! কিছু কিছু বুদ্ধিব্যবসায়ী ন্যাংটো হয়ে চলাকে অগ্রসর আধুনিকতা বলেন।
এটা কাদের খুশি করার জন্যে বলেন এটা কেবল তারাই জানেন। হয়তো এই বলাটুকুর মাধ্যমে তারা নিজেদের প্রগতির ধারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে অমর হতে চান।
এদের একটি অংশ পবিত্র ঈদ কিংবা পুজাকে উৎসব মনে না করে পহেলা বৈশাখকে বাঙ্গালীর প্রধান উৎসব আখ্যা দিতে চান। তার কারনও একটা আছে। কারন ঈদ পুজায় ধর্মীয় অনুভুতি থেকে কুকাজ করা থেকে মানুষকে বিরত থাকতে হয়Ñ ঐসব বুদ্ধিব্যবসায়ীরা যাকে প্রগতি বলেন নাÑ বলেন কুসংস্কার! আর পহেলা বৈশাখে নিজ নিজ কাপড় খুলে রাস্তায় বেরিয়ে এলে Ñ গোপন অঙ্গ দুলিয়ে পাছা নৃত্য করার ঢঙ দেখে তারা পুলকিত বোধ করেন এইজন্য যে দেশ আধুনিকতায় এগিয়ে যাচ্ছেÑ কু-সংস্কার উঠে যাচ্ছে। এই হলো তাদের প্রগতির ষ্টেজ! এই হলো তাদের প্রগতির সিস্টেম! তবে হ্যাঁÑ যদি বৈশাখে মার্জিত রুচিতে কিছু করা হয় তা অবশ্যই গ্রহনযোগ্যতা পাবে Ñ কারন বৈশাখ মিশে আছে বাঙালীর হৃদপিন্ডে।
নিজেদের জাতিগত স্বার্থে নিজেরা কাজ করলে ক্ষতিটা কোথায়! অন্যথায় আমাদের কপালে দুখের সীমা থাকবে না এ কথা বলাই বাহুল্য। নিজেদের সংস্কৃতি নিজেদের মতো করে ধারন করা কি ব্যাক-ডেটেড কিছু?
বিজাতীয় প্রভাব বলয়ে থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরাই বলতে পারছেÑ ‘সারা বিশ্ব যা করছে Ñ আমাদেরও তা করতে হবেÑ আমরা কি বসে বসে আঙ্গুল চুষবো?’
অর্থ্যাৎ বিদেশেী ন্যাংটো পদ্ধতিতে থাকলেই আধুনিক হওয়া যায়! ন্যাংটো হলে যে আধুনিক নয় Ñযেতে হয় পেছনের দিকেÑ সেই আদিম যুগে। আদিম যুগেইতো মানুষ ন্যাংটো ছিল। তাহলে সেটা কি ব্যাক-ডেটেড নয়? তাহলে ঐ যুগই ছিলো প্রকৃত আধুনিক! শুধু আধুনিক নয় অত্যাধুনিক! না কি উলঙ্গ আধুনিক!!
কোনটা প্রকৃত আধুনিক এটা তাদের বোঝাবে কে?
লেখক : মীর লিয়াকত, সব্যসাচী লেখক, ঢাকা ।