যুক্তরাজ্যে স্মরণসভায় ভাষাসৈনিক পীর হবিবুর রহমানকে মরনোত্তর জাতীয় পদক দেওয়ার দাবি

Daily Ajker Sylhet

banglanewsus.com

২০ ফেব্রু ২০২২, ০৯:৫৬ অপরাহ্ণ


যুক্তরাজ্যে স্মরণসভায় ভাষাসৈনিক পীর হবিবুর রহমানকে মরনোত্তর জাতীয় পদক দেওয়ার দাবি

মুহাম্মদ সালেহ আহমদ. লন্ডন থেকে:

উপমহাদেশের বাম রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনেরঅন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন জননেতা মরহুম পীরহবিবুর রহমান। তাঁর রাজনীতি ছিল দেশের গরীব-মেহনতীজনতার জন্য। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠারজন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। একজননিরহংকারী, নির্লোভ রাজনীতিবিদ ছিলেন পীর হবিব। বড়মাপের এই প্রয়াত নেতা, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতমসংগঠক পীর হবিবুর রহমানকে মরনোত্তর স্বাধীনতা পদকএবং একুশে পদক দেওয়া হোক।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারী পূর্ব লন্ডনে স্থানীয় একটি হলে পীরহবিবুর রহমান ফাউন্ডেশন ইউকে কর্তৃক আয়োজিত ১৮তমমৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও স্মরণসভায় উপরোক্ত মন্তব্যকরেছেন বক্তারা।

পীর হবিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের সভাপতি আজিজচৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহিব উদ্দিনচৌধুরীর পরিচালনায় এ দোয়া ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়াঅনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে মরহুম পীর হবিবুর রহমানেরমাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। বিশিষ্টইসলামিক ব্যক্তিত্ব, বাইতুল আমান জামে মসজিদেরখতিব মৌলানা আব্দুল মালিক দোয়া পরিচালনা করেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন লন্ডন টাওয়ারহ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার কাউন্সিলর আহবাবহোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ২৬শেটিভির চেয়ারম্যান, মানবাধিকার নেতা আব্দুল আহাদচৌধুরী, যুক্তরাজ্য কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি আবেদআলী, পীর হবিবুর রহমানের ছেলে মনজুর হোসেন।

প্রধান অতিথি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকারকাউন্সিলর আহবাব হোসেন বিস্ময়মাখা দুঃখ প্রকাশ করেবলেন, ১৮ বছর হয়ে গেল, পীর হবিবুর রহমানকে একুশেপদক বা স্বাধীনতা পদক দেওয়া হলো না! তিনি বলেন এটাআমাদের সকলের ব্যর্থতা। তিনি বলেন, কর্মবীর মানুষটিযিনি মানুষের জন্যে রাজনীতি করে গেলেন, তাঁরঅবদানের স্বীকৃতি একটা পদক জীবদ্দশায় পেলে খুশিহতেন। না পেলে কিছু আসে যায় না। তাঁর অবদানতুলনাহীন। আমাদের উচিত তাঁকে সম্মান জানানো।সেজন্যেই পদক দেওয়ার দাবী জানানো। পীর হবিবুররহমান অনেক বড় মাপের নেতা ছিলেন। তিনি আদর্শেররাজনীতি করে গেছেন। নীতিচ্যুত হননি। যদি হতেন তাহলেবড় মন্ত্রী হতে পারতেন। স্পিকার কাউন্সিলর আহবাবহোসেন বলেন, আজকের স্মরণসভাটি অন্যরকমতাৎপর্যবহ।

বিশেষ অতিথি রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার নেতাআব্দুল আহাদ চৌধুরী ছাত্র জীবনে যেভাবে পীর হবিবুররহমানের রাজনীতির সততা দেখেছিলেন, সেসবেরস্মৃতিচারণ করে বলেন, সবাই আওয়াজ তুলুন যাতে এমহান ভাষাসৈনিককে একুশে পদক দেওয়া হয়। আমিআমার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সব ধরনের সহযোগিতাকরবো।

বিশেষ অতিথি প্রবীণ সাংবাদিক লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবেরসাবেক সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, আমার মামারবন্ধু ছিলেন পীর সাহেব। সেই সূত্রে তাঁকে কাছে থেকে দেখারসুযোগ পেয়েছিলাম। তিনি অনেক বড় মাপের রাজনীতিকছিলেন। তাঁর মতো আর কেউ সিলেটে জন্ম নিবেন কিনাজানি না। তিনি দেশের মানুষের জীবন মান উন্নয়নেররাজনীতি করে গেছেন। নিজের পরিবারের জন্যে কিছুকরেন নি। তিনি সত্যিকার অর্থেই মাটি ও মানুষেররাজনীতি করেছিলেন।

বিশেষ অতিথি কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যেসভাপতি আবেদ আলী বলেন, পীর সাহেব ছিলেনআমাদের রাজনীতির গুরু। পীর হবিবুর রহমান, বরুনরায়, মনি সিংহ, তাঁদের রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েআমরা প্রগতিশীল রাজনীতি করি। তিনি পীর হবিবুররহমানের রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পীর সাহেব অনেক বড় মাপের ভাষা সৈনিক ছিলেন।

অনুষ্ঠান আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিশেষ অতিথিরবক্তব্যে পীর হবিবুর রহমানের ছেলে মনজুর হোসেন পিতারনামে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের কার্যক্রমে সহযোগিতা করারআশ্বাস ব্যক্ত করেন।

পীর হবিবুর রহমানের স্মৃতিচারণ করে আরও বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক আনসার আহমেদ উল্লাহ, এম এ করিম, আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, সৈয়দ আহমেদ হাসান, এনামুল হক, আব্দুল হক, তহুরা আলী ও এম এ আলী, বড় ছেলে মোজাফফর হোসেন লুকু, শামিম আহমেদ, ইসমাইল হোসেন লিটন, আখলাকুন-নবি চৌধুরি জুয়েল।

সমাপনী বক্তব্যে পীর হবিবুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি আজিজ চৌধুরী স্মরণসভায় উপস্থিত হওয়ায় সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, আমাদের প্রয়াত নেতা সম্পর্কে আপনাদের আজকের স্মৃতিচারণ ফাউন্ডেশনের জন্য অনন্য এক পাওয়া।

স্মরণসভায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।